বৃটেনের কার্ডিফের স্টেডিয়ামে টাইগার্সরা জুন মাসেই তিনটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন
নাজমুল সুমন॥ বৃটেনের ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস স্টেডিয়ামের সঙ্গে আবারও মধুর স্মৃতি জড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ দলের। একই মাঠে আর জুন মাসেই এই নিয়ে তিনটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলার টাইগার্সরা। ২০০৫ সালে ১৮ জুন এই মাঠে রিকি পন্টিংয়ের বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল টাইগাররা। ঠিক এক যুগ পর আবার ২০১৭ সালের ৯ই জুন নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে টাইগার্সরা আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। খেলার মধ্যখানে হতাশার হাতছানিতে অনেক দশক মাট ছেড়ে চলে গেলেন ক্রিকেটপাগল সব বাংলাদেশীর মন খারাপ। হায় একি হাল। বুকে স্বপ্ন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল। হারাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। শক্তিতে অনেকটাই এগিয়ে তারা। তাদের বিপক্ষে জয় সম্ভব হলেও সহজ ছিল না। তবুও আত্মবিশ্বাস ছিল জিততে পারে বাংলাদেশ। ২৬৫ রানে নিউজল্যান্ডকে বেঁধে ফেলার পর আত্মবিশ্বাসটা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু হায় একি শুরু। দ্বিতীয় বলেই আউট তামিম ইকবাল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান যার তিনিই আউট। তাতেও হতাশার কিছু ছিল না। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন যে অনেক লম্বা। কিন্তু একি! টিম সাউদির বল যে খেলতেই পারছে না কেউ। একে একে ১২ রানে বিদায় টপ অর্ডারের তিনজন। এরপর ভরসার প্রতীক মুশফিকুর রহীমও আউট। ৩০তম জন্মদিনের আনন্দটাই মাটি। দলের রান মাত্র ৩৩। চরম আশাবাদির মনেও হতাশার ছাপ। দুরু দুরু বুকে জুটি বাঁধলেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এ আসরে দুজনের নৈপুণ্যই মলিন। তবে সোনালী অতীতে ভরসা রেখে খেলা দেখতে থাকেন দর্শকরা। ইংলিশ ধারাভাষ্যকাররা মোটামুটি নিশ্চিত এ খেলায় বাংলাদেশ হারছেই। কিন্তু ক্রিকেট যে একটি জুটির খেলা। একটি জুটিই বদলে দিতে পারে সব। এমন ইতিহাস ক্রিকেটের পাতায় পাতায়। এমনই এক ইতিহাস রচনা করলেন সাকিব আর মাহমুদুল্লাহ। আগে হয়নি বলে আজ হবে না। তা না ভেবে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। দারুণ হিসাবী খেলা। মারের বলে মার, ছাড়ের বলে ছাড়। বাংলাদেশ যখন ১৫তম ওভারে ৫০ রান করে তখন সেটাই অনেক বড় মনে হচ্ছিল। এরপর রানের পর রান সাজিয়ে ইনিংসের আকার বড় হতে থাকে। ক্রমে ১০০ পেরিয়ে ১৫০ হলো। বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে ঊঁকি দিতে থাকে জয়ের সম্ভাবনা। কিন্তু মুখ ফুটে কেউ বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। কিন্তু জুটির দৈর্ঘ্য যখন দুশও পার হলো তখন আর ঠেকায় কে। আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। দেখতে দেখতে সাকিব-তামিম দুজনই চলে যান সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ শিবিরে কিন্তু তখনো ভাব গাম্ভির্যপূর্ণ পরিবেশ। জয়ের এতো কাছে তবুও মুখ ভার করে বসে আছেন সবাই। সদা ভয়. সদা সংশয়। যদি না আবার হাতছাড়া হয়ে যায় খেলা। সাকিব যখন ছক্কায় সেঞ্চুরি করলেন তখনই উল্লাস দেখা গেল সাজ ঘরে। জুটিটা অবিচ্ছিন্নই থাকতো। কিন্তু সাকিব হাঁকাতে বোল্ড হওয়ার আগে ২২৪ রান উঠে গেছে জুটিতে। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে কোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। মাঠে থাকা আশাবাদী দশকদের সাপোর্টের কারনেই একই শহরে একই মাঠে মাহমুদুল্লাহ ও সাকিবের লড়াকু শতকে দুই সেন্সুরি নিয়ে ঐতিহাসিক এই বিজয়ে শুধু কার্ডিফের মাটের দশকরা নয় সাড়া বিশ বাঙালীদের মধ্যে বয়েছে আনন্দের বন্যা.।
মাঠে উপস্থিত থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোডের প্রেসিডেন্ট নাজমুন হাসান পাপন এমপি ও বৃটেনের বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিজ এক্সেলেন্সী নাজমুল কাওনাইন. সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সেক্রেটারি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ওয়েলস বাংলা নিউজের সম্পাদক মকিস মনসুর এর সাথে একান্ত আলাপকালে উপস্থিত সকল দর্শকদের ধন্যবাদ জানিয়ে ক্রিকেট টিমকে অভিনন্দন জানানো সহ ওয়েলস- কার্ডিফবাসীর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন বলে অভিমত ব্যাক্ত করেন।
এদিকে বাংলার টাইগার্সদের ঐতিহাসিক বিজয়ের পর মাঠে থাকা দশকদের নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিল ইউকের সদস্য কমিউনিটি লিডার মকিস মনসুর আহমদ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বলে মূখরিত করে তুলা এক আনন্দ মিছিল শেষে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন এই বিজয় লাল সবুজের পতাকার বিজয়, এই বিজয় সমগ্র বাঙালীদের বিজয়, এই বিজয়কে ধরে রেখে একদিন টাইগার্সরা বিশ্বজয় করবে বলে তিনি অভিমত ব্যাক্ত করেছেন।
শুধু কার্ডিফ নয় আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপের বিভিন্নদেশ ও বাংলাদেশ সহ বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে প্রায় ৭ হাজার দশকরা মাঠে উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করেছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ২০১৭ সালের ৭ ই জুন বৃটেনের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস তথা এসএসই সোয়ালেক স্টেডিয়ামে মুশফিক-সাব্বিরদের অনুশীলনে আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। এখানে বেড়ে উটা নব প্রজন্মের সন্তানদের সাথে প্রায় দুঘণ্টা ব্যাপী এই খেলায় মুশফিক বাহিনীর দারুণ কিছু সময় কেটেছে। নব প্রজন্মের সন্তানেরা এই সুযোগ পাওয়া খুব আনন্দিত হয়েছেন। এছাড়াও আগত শিশুরা টাইগারদের সাথে ছবি তুলার ও সুযোগ পেয়েছেন। শিশুদেরকে নিয়ে আগত অভিবাকরা এই আয়োজনের জন্য মূল আয়োজক কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলার দিলওয়ার আলী সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও শিশুদের সাথে অনুশীলনে খুব মজা করেছেন বলে ওয়েলস বাংলা নিউজের এক প্রশ্নের জবাবে ক্রিকেটার মেহদি হাসান মিরাজ অভিমত ব্যাক্ত করেন। নব প্রজন্মের সন্তানদের সাথে প্রায় দুঘণ্টা ব্যাপী এই খেলার সময় মাঠে উপস্থিত থেকে ইতিহাসের অংশীদার হয়েছেন কমিউনিটি লিডার আনোয়ার আলী, সাবেক কাউন্সিলার মোহাম্মদ সেরুল ইসলাম, কমিউনিটি সংগঠক সাংবাদিক মকিস মনসুর আহমদ, কমিউনিটি লিডার লিয়াকত আলী. মহিলানেত্রী মুনিরা চৌধুরী, মাসুদা আলী, ইয়াহিয়া হাসান, আব্দুল ওয়াহিদ বাবলু, নিয়াজ হায়দারী, নাজমুল সুমন, পারভেজ খাঁন ও বদরুল হক মনসুর প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলার দিলওয়ার আলী এই আয়োজনে যারা সহযোগীতা করেছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন