বৃষ্টি ভেজা দিনেও ঈদুল আযহার ছুটিতে কমলগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়
প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ॥ বৃষ্টি ভেজা দিনেও পবিত্র ঈদুল আযহার টানা ছুটিতে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর চা বাগান লেকসহ পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষণীয়। টিলাঘেরা সবুজ চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগানে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, ছায়া নিবিড় পরিবেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, ঝর্নাধারা হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জি ঘুর ঘুরে দেখেন আগত পর্যটকরা।
শনিবার ঈদের দিন বিকাল থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের শান্ত নিবিড় ঘন গাছ গাছালিতে আচ্ছাদিত বনের মাঝে পর্যটকদেত ভিড় বাড় থাকে। জাতীয় উদ্যানের ভিতরের রেলপথ, বিভিন্ন ট্রেইল (পাহাড়ি সরু পথ), পাহাড়ি ছড়া ও লাউয়াছড়া ও মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জিতে সর্বত্রই পর্যটকে মুখরিত ছিল। মাধবপুর চা বাগানে নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেক এখানকার পাহাড়ি উঁচু নিচু টিলার মাঝে লেক ও তার শাখা প্রশাখা, চারপাশে পাহাড়ি টিলার উপর সবুজ চা বাগানের সমারোহ, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনী শাপলার আধিপত্য, ঝলমল স্বচ্ছ পানি, ছায়া নিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের পরিদর্শণে পরিবার সদস্যদের নিয়ে আসা আগত পর্যটকদের আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করে। এক দিনেই মাধবপুর লেকের দৃশ্য উপভোগ করে বেরিয়ে এসে একই রাস্তায় প্রায় ১০ কিঃমিঃ যাওয়ার পরই বীরশ্রেষ্ট শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ ঘুরে আসতে দেখা যায় পর্যটকদের। মাধবপুর চা বাগান লেকে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক রেহানা আক্তার, সিলেটের এনজিও কর্মী ইমতিয়াজ আহমদ, হবিগঞ্জের কলেজ ছাত্র সাগর ইসলাম, নরসিংদীর ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন, সুনামগঞ্জের চাকুরজীবি আহমদ রফিক,
গৃহিনী তারিনা বেগম, হেপী আক্তার, শিক্ষক মুক্তার হোসেন কুমিল্লার প্রভাষক ছামাদ আলী বলেন, মাধবপুর লেকটি প্রকৃতির অপরুপ লীলা নিকেতন। এটির সংস্কার করে আরও কিছু ভাল পরিকল্পনা গ্রহন করা উচিত। চা বাগানের টিলার উপর উঠে নিচের দিকে লেকের দৃশ্য খুবই চমৎকারভাবে অবলোকন করা যায়। তবে টিলার উপর একটি ছাউনী থাকা দরকার। রোদ আর বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ছাউনী প্রয়োজন। তবে মেইন রোডটি দ্রুত সংস্কার প্রয়োজন। এখানে বার বার পর্যটশরা আসতে মন চাইবে।
আলীনগর ইউনিয়নের ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী দূর্গম পাহাড়ি এলাকা ডবলছড়া। ডবলছড়া খাসিয়া পল্লী যেতে পাহাড়ি উঁচু নিচু কাঁচা ১২ কিঃমিঃ রাস্তা পাড়ি দিতে পথিমধ্যে শমশেরনগর চা বাগানের দু’টো প্রাকৃতিক হ্রদ, একটি গলফ মাঠ ও ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতাল যে কোন পর্যটকের নজর কাড়ে। অপরূপ সৌন্দর্য্যে আধার ডবলছড়া খাসিয়া পল্লীটি পাহাড়ি টিলার উপর ঘরে খাসিয়া জনগোষ্ঠীর বসবাস পর্যটকদের মুগ্ধ করে।
কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিঃমিঃ পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কিঃমিঃ অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাত। খুবই দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পথে যাতায়াত কষ্টকর বলে শুধুমাত্র কম বয়সী ছেলেদের সেখানে যেতে দেখা গেছে।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় টুরিষ্ট পুলিশ, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও ইকো ট্যুর গাইড পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল।
মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার রায় বলেন, মাধবপুর লেইকে পর্যটদের জন্য নানা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখানে টুরিষ্ট পুলিশ ছাড়াও চা বাগানের কর্মচারীরা বাড়তি নজরদারি করেন।
বন্যপ্রানী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের আগমন কম হওয়ার আশঙ্কা করলেও বাস্তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও ঈদের দিন বিকালে ও পরের দিন রোববার জাতীয় উদ্যানের প্রচুর পরিমাণে পর্যটকের আগম ঘটে। দুই দিনে জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ ফি বাবাদ দেড় লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্য করুন