বেকারত্বের অভিশাপ দুর করতে পারে কোয়েল
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি॥ শ্রীমঙ্গল উপজেলার শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সন্ধানী আবাসিক এলাকায় কোয়েল পাখির খামার করে বেকারত্বের অভিশাপ দুর করে সাবলম্বী হতে স্বপ্ন দেখছে এলাকার তিন যুবক । খামারের নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রেন্ডস কোয়েল পাখির খামার।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স ৩য় বর্ষ আহছানুর রহমান রনি, ম্যানেজমেন্ট থেকে অনার্স ১ম বর্ষ মো: আল – আমিন এবং একাউন্টিং থেকে অনার্স ১ম বর্ষ মো: উসমান । তিন জনে মিলে তাদের একজনের নিজ বাড়ির ছাদে যৌথভাবে গড়ে তুলেছেন কোয়েল পাখির খামার। তাদের খামারে রয়েছে ২ হাজার একশ কোয়েল। কোয়েল পালনে তাদেরকে বিভিন্ বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগীতা করে থাকেন মো: কুলু মিয়া। কুলু মিয়া জানান তারা কোয়েল পাখির খামার করার উদ্যোগ নিলে আমি কোয়েল পাখি সংগ্রহ করে দেই। যে কোন সমস্যায় পড়লে আমার কাছে ছুটে আসেন পরে আমি নিজে গিয়ে তাদের সহযোগীতা করে থাকি।
বেকারত্ব দুর করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন এবং অন্যান্য কোয়েলের খামারীদের লাভ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়রি মাসে খামার গড়ে তোলেন তারা। খামারের কোয়েল গুলো ইতোমধ্যে ডিম দিতে শুরু করায় তাদের চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে খুশির ঝিলিক।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে ১দিনের কোয়েল পাখির বাচ্চা ঢাকার টংগী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । প্রতিটি কোয়লের বাচ্চার দাম পড়েছে প্রায় ১২ টাকা। এছাড়া কোয়েলের রোগবালাই তুলনামূলক কম। দুই ধরনের পদ্ধতিতে কোয়েল পালন করা যায়। পদ্ধতিগুলো হলো লিটার পদ্ধতি এবং খাঁচা পদ্ধতি। এদের জন্য প্রতিদিন গড়ে ২৫ গ্রাম খাবার দরকার হয়। বাচ্চা ফুটার ৪৫ দিন পর কোয়েল ডিম পাড়া শুরু করে। একটি কোয়েল এক নাগাড়ে প্রায় ১৮ মাস ডিম দিতে পারে। ডিম দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত পাখিগুলোকে এক রকম খাবার খাওয়ানো হয়। ডিম দেয়া শুরু করলে অন্য রকম খাবার দেয়া হয়। প্রতি হাজার কোয়েলের জন্য মাসে খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা এবং ডিম বিক্রি করা যাবে কমপক্ষে ৪৫ হাজার টাকা।
তথ্য মতে জানা যায়, কোয়েলের ডিম আকারে ছোট হলেও এর পুষ্টিগুন মুরগির ডিমের চেয়ে অনেক বেশি। নিয়মিত মুরগির ডিম খেলে কোলেস্ট্ররেল বেড়ে গিয়ে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভবনা থাকে কিন্তু কোয়েলের ডিম নিঃসংকোচে খাওয়া যেতে পারে। কোয়েলের ডিম কিডনি, পাকস্থলী ও ফুসফুসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কোয়েলের ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম ও অ্যামাইনো এসিড যা শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিছু কিছু দেশে কোয়েলের ডিম রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চাইনিজরা টিবি, অ্যাজমা, ডায়াবেটিস রোগের পথ্য হিসাবে কোয়েলের ডিম ব্যবহার করে থাকে।
নানা গুন থাকা স্বত্ত্বেও ডিম বাজারজাতকরণ করতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গলের কোয়েল পাখির খামারীরা। কোয়েলের ডিম স¤পর্কে সাধারন মানুষের ধারনা না থাকায় অনেকে কোয়েলের ডিমকে কচ্ছপের ডিম অথবা সাপের ডিম ভেবে থাকেন। সরকারের তরফ থেকে কোয়েলের ডিম স¤পর্কে প্রচার-প্রচারনার দাবি জানিয়েছেন খামারীরা। উপজেলা প্রানি স¤পদ কার্যালয় থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।
যুবকরা জানায় খামার করার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় (১,৫০,০০০) লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। খামারটি বড় আকারের করার চেষ্টা করলেও অর্থের সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংক ঋন নেওয়ার ব্যবস্থা মিলছে না। সহজ শর্তে ঋন পেলে তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। এদিকে সরকারী ভাবে তাদের সহজশর্তে ঋনের দাবী জানান।
তারা আরো জানান, তাদের মত অনেক বেকার যুবক তাদের পরামর্শে কোয়েল পাখির খামার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ইতিমধ্যেই শ্রীমঙ্গল শাহীবাগ এলাকার লিমন, হাসান, টিপু ও জাহিদ কোয়েলের খামার শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। কেউ যৌথভাবে আবার কেউ একাই কোয়েলের খামার করার উদ্যোক নিয়েছে।
তাদের মত এলাকার যুবকদের সবাইকে নিজের পায়ে দাড়াতে কোয়েল চাষে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো: লিমন জানান আজকে যদি এই বেকার ছেলেরা ঘুরাফেরা করে তাহলে আরাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে বেকার না থেকে এরকম কোয়েলের খামার করে বেকারত্ব দুর করায় তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে তাদেরকে সহযোগীতা করে থাকবেন। এবং তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করে উৎসাহিত করে থাকবেন।
এলাকার বিশিষ্টজনেরা মনে করেন সরকারের তরফ থেকে কোয়েল পালনে উৎসাহ ও সহযোগিতা প্রদান করা হলে এ খাতটি বেকারত্ব দুরীকরণে গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মন্তব্য করুন