বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ ফারুক আহমদ-একজন ঈমানদার মহৎ মানুষ ॥
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ ষাটের দশক। আমাদের দেশীয় সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির স্বর্ন যুগ বলা চলে। সন্ত্রাস-সংঘাত-সংঘর্ষ ছিলনা। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং নৈতিকতার এত অবনতি ছিলনা। সামাজিক সৌহার্দ এবং সাম্পদ্রায়ীক সম্প্রিতি ছিল। দক্ষিন সিলেটের ছোট মহকুমা শহর মৌলভীবাজার। গগন চুম্বি দালান কোঠা, পিচ ঢালা রাজপথ এবং বাহারি বৈদ্যোতিক বাতি নেই। টাউন কমিটির পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় লেম্পপোষ্ট সমূহে তেলের বতি জ¦ালিয়ে দেয়া হত। অন্ধকার শহর হলেও মানুষের মন ছিল আলোকিত। এখন যার উল্টোটি। এখন পিচঢালা রাজপথ, শতভাগ বৈদ্যোতিক বাতি। সোডিয়াম লাইট এর সৌন্দর্য্য গৌরব ও বাহারি বাতির মাঝেও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং ভ্রষ্টাচারের জোয়ারে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি। তলিয়ে যাচ্ছি। সেই স্বর্নযুগ ও সু-সময়ে ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার কলেজের ছাত্র ছিলাম। ভাদেশ^রী ডাক সাইটে অধ্যক্ষ এম. আহমদ চৌধুরী এবং ঢাকাইয়া ভাইস প্রিন্সিপাল এম. আব্দুল্লাহর নামে কলেজের হাজার ছাত্র ছাত্রী সদা সর্বদা ভয়ে কম্পমান থাকতেন। কলেজে লেখাপড়া, বার্ষিক নাটক, গানবাজনা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল। ছোট মহকুমা শহরে মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করে সাহিত্য চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ ছিল। আমাদের স্যার দের মধ্যে অধ্যাপক শাহজাহান হাফিজ, অধ্যাপক মোহিবুর রহমান, সৈয়দ শামসুল ইসলাম, আব্দুল ওয়াহাব চৌধুরী প্রমুখ প্রতিষ্টানিক শিক্ষার বাহিরে সামাজিক ভাবে ও অভিভাবকত্ব করতেন-মানুষের মত মানুষ হতে দিক নির্দেশনা দিতেন।
সেই সুসময়ে আমাদের সহপাঠি, সতীর্থ, বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে আজিজুল হক ইকবাল, দেওয়ান গোলাম ছরোওয়ার হাদি গাজি, মাহমুদুর রহমান, সৈয়দ ফারুক আহমদ, সৈয়দ ফজলুল্লাহ, সৈয়দ বজলুল করিম, ফারুক আহমদ চৌধুরী, জহিরুদ্দীন আহমদ, হারুনুর রশীদ, সৈয়দ মনোয়ার আলী বাবু, সৈয়দ বদরুজ্জামান হাবিব, নুরুল হক চৌধুরী, এম.এ রকিব, মোঃ ফিরোজ, এ.এস.এম আতাউর রহমান জলি, লুৎফুর রহমান খান মনির, সৈয়দ জয়নাল উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, গোলাম মাওলা, নুরুল ইসলাম প্রমুখ এবং মেয়েদের মধ্যে আনোয়ারা বেগম, সুলতানা বেগম ইলা, নুরজাহান চৌধুরী, নন্দিতা বিশ^াস প্রমুখের কথা এখনও আমার মনে পড়ে। সৈয়দ ফজলুল্লাহ আর আমি এম.সি কলেজ সিলেট-এ- সেকেন্ড ব্লকে রুমমেট ছিলাম। তাঁর সঙ্গেঁ আমার আরেকটি বাড়তি সম্পর্ক ও আকর্ষন ছিল তাঁর পিতা সর্বজন শ্রদ্ধেও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গভঃ হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষক, বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রদ্ধেও সৈয়দ শামসুল ইসলাম এর কারনে। লেখালেখি ও পাবলিক লাইব্রেরীর কারনে ও প্রয়োজনে তিনি আমাকে খুবই ¯েœহ করতেন। মায়ায় মমতায় বেটা-বলে ডাকতেন। তিনি পাবলিক লাইব্রেরীর সেক্রেটারি, আমি এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি। তাঁর পরে অবশ্য আমি সেক্রটারি-ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করেছি। সৈয়দ ফারুক আহমদ সৈয়দ ফজলুল্লাহর বাসা শহরস্থ শ্রীমঙ্গল রোডে। মুখোমুখি। সড়কের পূর্বে সৈয়দ ফারুক এবং পশ্চিমাংশে সৈয়দ ফজলুল্লাহর বসভবন। এ যেনো শাহ আব্দুল করিমের ভাষায় -“বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে- বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে”-র মত অবস্থা। সেকাল থেকে একাল পর্য্যন্ত দুই বন্ধু সেই সু-সম্পর্ক এখনও বজায় রেখেছেন। দু’জনের বাড়ির সামনেই দর্জির মহল জামে মসজিদ। দু’জন একসাথেই জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তালিম-বয়ান হয়। দুজনে সেকাল থেকে একাল পর্য্যন্ত বাল্য কৈশোরের সু-সম্পর্ক বজায়-বহাল রেখেছেন। দু’জনেই সফল কর্ম্ম জীবন শেষে তাবলিগ জামায়েতের নিবেদিত প্রান নেতা হয়ে আল্লাহ ও রাসুল প্রেমে ফানাফিল্লাহ হয়ে দ্বীনের দাওয়াতে-মেহনতে নিবেদিত আছেন।
সেই সময় ষাটের দশকে শহরে টেক্সি, টেম্পো, টমটম- জাতীয় যানবাহন ছিলনা। কিছু রিকসা ছিল। শহরও ছিল ছোট। শ্রীমঙ্গল রোডে সৈয়দ ফারুক আদমদ এবং সৈয়দ ফজলুল্লাহর পৈত্রিক বাসা বাড়ির পর শ্রীমঙ্গঁল মুখী দক্ষিন দিকে খুব একটা বাসা বাড়ি ছিলনা, ছিল ধান ক্ষেত। এখন এখানে গড়ে উঠেছে “বেঙ্গল সম্্রাজ্য”। নিজ স্ব-ভূমিতে সৎ ও আদর্শ ব্যবসায়ী সৈয়দ ফারুক আহমদ গড়ে তুলেছেন বেঙ্গঁল কমিউনিটি সেন্টার, বেঙ্গল হাইওয়ে চাইনিজ, মেইন বেঙ্গঁল, বেঙ্গল বাজার ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, বেঙ্গল কাবাব হাউজ, বেঙ্গল সুইট ফুড ইত্যাদি। শ্রীমঙ্গল রোডে এখন ব্যবসা প্রতিষ্টান সমূহ এখান থেকে এগিয়ে জগন্নাথপুর হয়ে আকবরপুর মুখী। আমরা প্রত্যেহ বিকালে দল বেধে বৈকালিক ভ্রমন করতাম। সন্ধ্যা নামতে না নামতেই আবার স্ব-স্ব গৃহে ফেরা। আমি সেসময় সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি তে জড়িত ছিলাম। সে সময়কার ছাত্রপ্রিয় ও বৃহৎ সংগঠন ছাত্রলীগ এর দায়িত্বে ছিলাম- প্রতমতঃ মৌলভীবাজার কলেজ শাখা অতঃপর মহকুমা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। মিটিং-মিছিল থাকলেও সন্ধ্যায় বাড়িফেরা ছিল রেওয়াজ ও রীতি। ছাত্রলীগও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে প্রতিষ্টানিক-সাংঘটনিক প্রতিযোগীতা থাকলেও সন্ত্রাস সংঘর্ষ-কিরিচ বোমা ছিলনা। নেতায়-নেতায়-সংগঠনে-সংগঠনে সৌহার্দ-সম্প্রিতি ছিল-নৈরাজ্য-নৈরাশ্য ছিলনা। যা এখন নেই-এখন হয়েছে। আমি ছাত্র রাজনীতি, সাহিত্য, সাংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত-জড়িত-নেতৃত্বে দায়িত্বে থাকলেও লেখাপড়ায় অমনযোগী ছিলাম না, ছাত্র হিসাবে খুব খারাপ ছিলাম না- ফলতঃ ফলও পেয়েছি ভালো-ঐ সময় হায়ার সেকেন্ড ক্লাশ নিয়ে বি.এ পাশ করি। আমার কাছে আমার পিতা মাতার একমাত্র দাবী ছিল দেশের সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়া, মানুষের মত মানুষ হওয়া-কোন চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যবসা বানিজ্য নয়। ফলতঃ আমি পিতা মাতার স্বপ্ন পূরনে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে ঢাকা গমন করি-ভর্তি হই মাষ্টার্স অতঃপর ল-ক্লাশে। ফলতঃ সাময়িকভাবে আমার স্থানীয় বন্ধু মহলের সঙ্গেঁ বিয়োগান্তক- বিচ্ছেদ ঘটে।
আদর্শ শিক্ষকের পুত্র আদর্শ ছাত্র বন্ধুবর সৈয়দ ফজলুল্লাহ উচ্চ শিক্ষা গ্রহনে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হন। তিনি সর্বদাই আমার চেয়ে মেধাবী বিনয়ী ও নিষ্টাবান বটেন।
কৃতিত্বের সাথে বানিজ্যে ¯œাতক ডিগ্রি নিয়ে ব্যবসা বানিজ্যেই মনযোগী হন সৈয়দ ফারুক আহমদ। সে সময় চাকরি-বাকরি সহজলভ্য হলেও বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ স্বাধীনভাবে পেশা হিসাবে ব্যবসাকেই বেছে নেন। পরিবহন ব্যবসা এবং কনট্রাক্টারিতে মনযোগী হন নবীন ব্যবসায়ী সৈয়দ ফারুক আহমদ।
স্বাধীনতা উত্তরকালে স্বাধীন বাংলাদেশে সমগ্র দেশ ও জাতি নব উদ্যমে নবীন রাষ্ট্রের আর্ত সামাজিক উন্নয়ন-দারিদ্রের বিমোচন ও শক্তিশালী দেশও জাতি গঠনে আত্ব নিয়োগ করেন। ঠিকাদারি ও পরিবহন ব্যবসায় সততা ও নৈতিকতা সমুন্নত রেখে ব্যবসা বানিজ্য কঠিন, জটিল ও দুরহ বিবেচনায় নীতিবান সৈয়দ ফারুক আহমদ উভয় ব্যবসা স্বেচ্ছায় পরিত্যাগ করে নুতন ব্যবসায় আত্বনিয়োগ করেন। দেশপ্রেমিক এবং ঈমানদার সৈয়দ ফারুক আহমদ বেঙ্গঁল-নামে শুরু করেন নুতন ব্যবসা। নিত্য ব্যবহার্য্য পন্য, খাদ্য সামগ্রী এবং কমিউনিট সেন্টার আধুনিকতা সততা ও আন্তরিকতার ছোয়ায় গ্রাহক ক্রেতার মন জয় করে। স্বাধীনতা উত্তর কালে বিয়ে জন্মদিন-সামাজিক অনুষ্টানাদি- রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য কমিউনিটি সেন্টার-ডেকোরেটার্স ছিলনা। ফাস্টফুড-বেকারি-রকমারি নিত্য ব্যবহার্য্য দ্রব্য সামগ্রীর সাথে সাথে সুবিশাল বেঙ্গল কমিউনিট সেন্টার গড়ে তোলেন। বর্তমানে সেন্টার সংলগ্ন দোতলায় অত্যাধুনিক বেঙ্গঁল হাইওয়ে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট দারুন জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বেঙ্গঁল কমিউনিটি সেন্টার ও সম্প্রসারিত হয়ে দোতালা শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় সবার নযর কেড়েছে। হালআমলে জেলা ব্যাপী অত্যাধুনিক নামী-দামী-হোটেল-রিসোর্ট হয়েছে পর্য্যটন কেন্দ্র হিসাবে দেশী-বিদেশী গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে, জেলায় বহুবিধ নামীদামী ফাস্টফুড এবং টাঙ্গাঁইল-বগুড়ার মিষ্টান্ন সামগ্রীর দোকান খুল্লেও প্রতিযোগিতার মুক্তবাজার অর্থনীতির বাজারে বেঙ্গঁল নিজস্ব স্বকীয়তা-সততা-স্বনামের গুনে সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছে। শ্রীমঙ্গল রোড থেকে বেঙ্গঁল পন্য সামগ্রীর পসরা শুরু করে এখন জেলা শহরের প্রধান প্রধান এলাকা চৌমুহনা, পশ্চিমবাজার, কলেজ গেইট, কোর্ট এলাকায় বেঙ্গঁল বেকারি ও ফাস্টফুড শাখা অবস্থিত। এই ভেজালের বাজারে বেঙ্গঁলের পন্য সামগ্রী নির্ভেজাল, নিখাঁদ, খাটি, মান সম্মত। বেঙ্গঁলের বিশাল কর্মি বাহিনীর বিন¤্র অভ্যর্থনা-আপ্যায়ন ও সদাচরনে ক্রেতাগন খুবই সন্তুষ্ট। বেঙ্গঁলের মান সম্মত পন্য সামগ্রী এবং নামের সুনাম-গুডউইলে শহর-বন্দর-গ্রামে ফাস্টফুড ও বেকারি সমূহে সাইনবোর্ড টাঙ্গাঁনো থাকে -এখানে বেঙ্গলের সামগ্রী পাওয়া যায়-। বেঙ্গলের সততা ও সুনাম এখন শহর, জেলা সদর, জেলার সর্ব্বত্র ছাড়িয়ে এখন বৃহত্তর সিলেট ব্যাপী। বেঙ্গঁলের এই মহান প্রতিষ্টাতা সহজ সরল সাদামনের সুন্নতি লেবাছি মানুষ আলহাজ¦ সৈয়দ ফারুক আহমদ মনে করেন খাদ্য সামগ্রী আল্লাহর নিয়ামত। এই নিয়ামতে বরকত পেতে হলে আল্লাহ-রাসুল নির্দেশিত পথ এবং দেশে প্রচলিত আইন কানুন মেনে চলতে হবে। বেঙ্গঁলের শত শত কর্মি-সততা ও আন্তরিকতার সাথে সেদায়িত্ব পালনরত। পত্র পত্রিকা এবং মিডিয়া প্রদর্শিত সংবাদ মতে রাজধানী ঢাকায় একশ্রেনীর অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য সামগ্রীতে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করছে। এলিট ফোর্স, রে্যব এবং পুলিশি অভিযানে ঢাকার কতেক অসাধু ব্যবসায়ীদের এহেন অমানবিক কার্যকলাপ দেশবাসি দেখছেন। নির্ব্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় গনভ্রাম্যমান আদালত এর মাধ্যমে এই ঘৃন্য অপরাধীগনকে শাস্তি প্রদান করছেন। তবুও খাদ্যে ভেজাল-ফলে ফরমালিন মিশানো শেষ হয়নি। এই নিয়ে ইতিপূর্বে প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান মতামত দিয়েছেন ক্যেব সভাপতি গোলাম রহমান সাহেব। ক্যেব সভাপতি যথার্থই বলেছিলেন -“নিরাপদ খাদ্য আইন দু’বছর আগে হলেও পরিপূর্নভাবে কার্য্যকর নয়”- প্রকৃত পক্ষে এবং সত্যিকার অর্থেই খাদ্যে ভেজাল গনহত্যার নামান্তর। ভ্রষ্টাচার এবং নৈতিকতা বিবর্জিত বাংলাদেশের খাদ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে বেঙ্গঁল এবং বেঙ্গঁলের ঈমানদার প্রতিষ্টাতা-মালিক আলহাজ¦ সৈয়দ ফারুক আহমদ একজন ব্যাতিক্রমী ব্যাক্তিত্ব এবং ব্যতিক্রমী প্রতিষ্টান। বেঙ্গঁলে-ভেজাল বিরোধী অভিযান এবং প্রশাসনিক চাপে নয় ইমানী দায়িত্ব সততা ও ন্যায় পরায়নতার কারনে এখানে হালাল পন্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
মন্তব্য করুন