বেড়েছে পোনা মাছ পাচারকারীদের দৌরাত্ম, জেলায় জমজমাট পোনা মাছের হাট, সংশ্লিষ্টরা প্রতিষ্ঠাণ উদাসীন
স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজারে উজাড় হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মিটা পানির পোনা মাছ। অভিযোগ উঠেছে ভর মৌসুমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় পোনা মাছ পাচারকারী চক্র বেপরোয়া। ওই চক্রটি প্রথমে ডিমওয়ালা মা মাছ এরপর নির্বিচারে পোনা মাছ ধরে। দেশের সবচেয়ে বড় ও জেলার ঐতিহ্যবাহী হাওর হাকালুকি আর কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর। আর জেলার অন্যতম নদী মনু,ধলাই,জুড়ী,ফানাই ও কুশিয়ারা।
জেলা জুড়ে এসকল হাওর ও নদী তীরের হাটবাজার গুলোতে গেল কয়েক মাস থেকে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ নানা জাতের দেশীয় প্রজাতির পোনা মাছগুলো দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন তারা হাওর ও নদীর তীরের বাজার থেকে নানা জাতের মিশ্রিত পোনা মাছ ক্রয় করে লাভের আশায় শহরের বিভিন্ন মাছ বাজারে তা খুছরা বিক্রি করছেন। জেলায় এবছর বন্যার পানি দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় রুপ নেওয়ায় কাঙ্খিত ডিম ছেড়েছে দেশীয় প্রজাতির মা মাছ। গেল বছর অনাবৃষ্টির কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ তেমন উৎপাদন না হলেও এ বছর মাছের পর্যাপ্ত উৎপাদনে বাড়তি প্রত্যাশা নদী ও হাওর তীরের মানুষের। কিন্তু তা পোনা পাচারকারী চক্রের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন শুকনো মৌসুমে মাছ ধরতে হাওরের বিল সেচ দেওয়া হয়। আর গাঙ ও নদীর উজানে দেওয়া হয় বিষ। বর্ষাতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে মা ও পোনা মাছ ধরতে মত্ত থাকে একটি চক্র। সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীরা বলছেন প্রতিবছরই এসময়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ইতিমধ্যেই অনেক চিরচেনা দেশীয় প্রজাতির মাছই বিলিন। আর যে গুলো কোনো রকম জিয়ে আছে এমন অবস্থা চলতে থাকলে সেগুলোও একই পরিণতির দিকে আগাবে। জানা যায় বর্ষা মৌসুমে জেলা জুড়ে জমজমাট হয়ে উঠে হাওর তীরের পোনা মাছের হাট। এই হাট গুলোর বৈশিষ্ট হল গোপনীয়তায় ক্রেতা বিক্রেতার সমঝোতাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় বেচা কেনা। আর গাড়ি যোগে তা দ্রুত পৌছাঁনো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিনই রাতের আধাঁরেই পোনা মাছ ধরা আর কেনা বেচা। মৌসুমে পুরো হাওর জুড়ে চলে এমন রমরমা ব্যবসা। এখন মৌসুম শেষ পর্যায়ে হলেও থেমে নেই পাচারকারীদের এমন দৌরাত্ন। প্রতিদিনই প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকান্ড চললেও সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন নির্বিকার। পাচারকারীরা প্রতিদিনই পুরো হাওর এলাকা থেকে দুই থেকে তিন মেট্রিক টন পোনা মাছ পাচার করে বিক্রি করছে দেশের বিভিন্ন বাজারে।
জানা যায় ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে এখনো ভরপুর হাকালুকিসহ জেলার অন্যান্য হাওরের সবকটি হাওর। এ সুযোগে স্থানীয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন স্থানীয় দরিদ্র মৎস্যজীবীদের দিয়ে হাওরে বেড়জাল,কারেন্ট জাল,চায়না ম্যাজিক জাল,রিং জাল ও কাপড়ি জালের মাধ্যমে মাছ শিকার করান। এসব জালে আটকা পড়ছে বিভিন্ন জাতের দেশীয় প্রজাতির মাছের পোনা। বছরের ৫ মাস ২৩ সেন্টিমিটারের (৯ ইঞ্চি) চেয়ে কম মাপের শোল, রুই, কাতলা, মৃগেল, কালীবাউশ আইড় এবং বোয়ালসহ সবধরনের পোনা মাছ ধরা ও বিক্রি এবং বেড়জালসহ ৪ দশমিক ৫ সেন্টিমিটারের কম ব্যাসার্ধের ফাঁকবিশিষ্ট জাল ব্যবহার সম্পূর্ণ আইনত নিষিদ্ধ। কিন্তু এসময় জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় ও দারিদ্রতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা তাদেরকে দিয়ে ডিমওয়ালা মা মাছের পর পোনা মাছ শিকার করায়।
এমনটিই জানালেন জেলার হাওর ও নদী তীরের মৎস্যজীবী লোকজন। জানা যায় বর্ষাকালে হাকালুকি হাওর এলাকায় প্রতিদিন রাতে ৯ টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কুলাউড়া’র নবাবগঞ্জ বাজার,তেঘরীঘাট ও জুড়ীর মানুসিংহ বাজার,কন্টিনালা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন পাড়ে “রাতের হাট” বসে। কাউয়াদিঘি হাওর এলাকার রাজনগরের খেওয়া ঘাট বাজার, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর পুরাতন বাজার। হাইল হাওর এলাকার শ্রীমঙ্গলের হাজীপুর বাজার,বরুণা ঘাটের বাজার ও জেটি রোড বাজার। তাছাড়া হাকালুকি হাওর তীরবর্তী বড়লেখা ও ফেঞ্চুগঞ্জ অংশে বেশ ক’টি স্পট দিয়ে রাতের আধাঁরে অথবা ভোর বেলা চলে এই পোনা মাছ কেনা বেচা। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ এসব পোনামাছ ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে করে নিয়ে যান জেলার বিভিন্ন হাটবাজার ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। জানা যায় পোনা মাছ শিকারে ব্যাবহৃত কারেন্ট জালসহ অন্যান্য জাল ছাড়াও প্রায় ৬ শতাধিক বেড়া জাল রয়েছে শ্রীমঙ্গল,রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায় এবছর চলমান দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় জেলার ৮৯০ টি পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি পরিমান প্রায় ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। জেলায় প্রায় সাড়ে বারো হাজার নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন।
পোনা মাছ নিধনের বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: শাহ নেওয়াজ সিরাজী মানবজমিনকে বলেন নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও পোনামাছ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইননানূগ ব্যাবস্থা নেওয়া হচ্ছে ও হবে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন এবছরই আমরা ২৩টি অভিজান করেছি। আরও অভিজান হবে। তিনি মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সকলের সহযোগিতা চান।
মন্তব্য করুন