বড়লেখার পাথারিয়ায় ৪টি নতুন ঝর্ণার খোঁজ

September 20, 2016,

বড়লেখা প্রতিনিধি ॥ বড়লেখা উপজেলায় নতুন ৪টি ঝর্ণার খোঁজ মিলেছে। দুর্গম পাথারিয়া পাহাড়ের ঘন সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে ঝরনাগুলো। স্থানীয় লোকজন আহলাদি নাম দিয়েছেন ঝেরঝেরি, কাখড়া ছড়ি, ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি আর ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝরনা। শুধু নামকরণেই আলাদা টান নেই। ঝরনাগুলো পাথারিয়া পাহাড়কে সাজিয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্যে। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার ভারতীয় সীমান্তে ঘেষা এই পাথারিয়া পাহাড়ের ডিমাই এলাকায় নতুন খোঁজ পাওয়া নয়নাভিরাম ঝেরঝেরি, কাখড়া ছড়ি, ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি আর ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝরনা দেখতে এবারের ঈদের ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসুদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।

a-new-waterfall-at-barlekha-8লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন নিজের মহিমা লুকিয়ে রেখেছিল এই ঝরনাগুলো। দুর্গম পথ আর লোকালয়ের বেশ বাইরে থাকার কারনে এতদিন এই ঝরনাগুলো কারও চোখে পড়েনি। দুর্গম পাহাড়ের দীর্ঘ আঁকাবাঁকা উঁচু-নিচু পথে অনেক কষ্টে গহীন অরন্যের রোমাঞ্চকর প্রবেশপথ পাড়ি দিয়ে ঝরনাগুলো দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীকরা।

উঁচু-নিচু টিলা সবুজ বৃক্ষরাজিতে ছাওয়া পাহাড়ের বুক চিরে বেরিয়ে আসা প্রবাহমান পানি ছড়া দিয়ে সমতলে নেমে আসছে। ছড়ার পানি ছোট-বড় পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলছে। দুর্গম এই ছড়া দিয়ে হেঁটে ঝরনার কাছে যেতে যত বিপত্তি ক্লান্তি আসুক না কেন, ছড়ার স্বচ্ছ শীতল পানি, চারদিকের সবুজ প্রকৃতি, বনফুল, শাসনি লেবুর সুবাস, পাখি ও ঝিঁ ঝিঁ পোকার কলতান সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজ উদ্দিন বলেন, নতুন সন্ধান পাওয়া প্রাকৃতিক ঝর্ণা আর ছড়া ও চারপাশে সবুজের সমারোহ দর্শণার্থীদের নজর কেড়ে নিচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা ঝর্ণা দেখতে আসছেন। পাহাড়ি এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাস্তায় চলছে। পর্যটন কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুদৃষ্টি দেন তাহলে মাধবকু-সহ আশেপাশের দর্শণীয় স্থান দেখার পাশাপাশি এই জর্ণাগুলোও দেখেও মুগ্ধ হবেন পর্যটকরা। এতে করে দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। স্থানীয় বেকার যুবকরা গাইড হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবে। স্থানীয় লোকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।

a-new-waterfall-at-barlekha-15পাথারিয়া পাহাড়ে রয়েছে বড়বড় গাছ, বাঁশঝাড়, অজস্র জাতের লতা, ঢাউস পাতার বুনো রামকলার ঝোঁপ। ফুলের মধ্যে আছে আশোক, দেবকাঞ্চন, কনকচাঁপা, পারুল, জংলীজুঁই, নাগবাল্লী, লুটকি, নীললতা, টালি, ল্যডিস আম্ব্রেলা, ডুলিচাঁপা, ম্যাগনোলিয়া এবং আরো নানান জাতের ফুল। ফল-ফসলের মধ্যে আছে বিভিন্ন রকমের শাক, কচু, লতি, বাঁশের খোড়ল (করিল), লেবু, রামকলা, ডেউয়া, লুকলুকি, ক্ষুদিজাম, চালতা, জাম, বহেড়া, হরিতকি, বুনো আম, কাঠাল, আমলকি, গোলাপজাম, সাতকরা লেবু, তৈকর, আশফল, গুঙ্গাআলু এবং আরও নানা জাতের পাহাড়ি ফলমূল।

এই পাহাড়ে রয়েছে বিচিত্র রকমের বন্যপ্রাণী জংলী হাতি, বানর, হনুমান, বাগডাস, মেছোবাঘ, বনরুই, হরিণ, খরগোস, অজগর সাপ প্রভূতি। পাখ-পাখালির মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় বনমোরগ, শকুন, ঈগল, তিতির, শ্যামা, ভিমরাজ ও আরো বিভিন্নজাতের পাখি। বিস্তীর্ণ এ বন তার রূপের মায়াবী ইন্দ্রজাল ছড়িয়ে প্রকৃতিপ্রেমীকদের মন আকৃষ্ট করছে। বড়লেখা সদর ইউনিয়নের ডিমাই বাজার থেকে পাথারিয়া পাহাড়ের নির্জন পল্লী ডিমাই পুঞ্জির পাশ দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি ছড়ার পথে হেঁটে গেলে প্রথমে পাওয়া যাবে কাখড়া ছড়ি ও ঝেরঝেরি ঝরনা। ঝরনাগুলো ছোট হলেও মন কাড়ে। এর পর পূর্ব দিকে ঘণ্টা দেড়েক (প্রায় ৬ কিলোমিটার) পিচ্ছিল পাথুরে ছড়া দিয়ে হাঁটার পর ওপরে ওঠলে দুইটি টিলার ভেতরে দেখা যাবে ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি ঝরনা। দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তি ঝেরঝেরির শীতল জলধারায় অনেকটাই কমে যায়। একটু অদূরে ঝেরঝেরির ঠিক ডান পাশে রয়েছে ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝরনা। ছড়ার পথ ধরে ফুলবাগিচায় যাওয়া যাবে না। টিলার ভেতর দিয়ে রাস্তাটি খুবই সরু। ফুলবাগিচায় যেতে হলে প্রায় ৬০-৭০ ফুট উঁচু খাড়া দুইটি পাহাড়ের পিচ্ছিল পথ বেয়ে এগিয়ে গেলে তখনই চোখে পড়বে ফুলবাগিচা ঝরনা।

a-new-waterfall-at-barlekha-9ঝেরঝেরি, কাখড়া ছড়ি, ফুল ঢালনি ঝেরঝেরি আর ইটাউরি ফুলবাগিচা ঝরনা মতো পাথারিয়া পাহাড়ের অন্য অংশে রয়েছে ত্রিপল ঝরনা, জামিনীকু-, জমজ ঝরনা, রজনীকুন্ড পুছুম ঝরনা, বন্দরডুবা, পাইথুং ও রামাকু- নামে আরো অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন ঝরনা। এগুলোর বেশিরভাগই মৌসুমী ঝরনা। বর্ষাকালে এই ঝরনাগুলো যৌবনদীপ্ত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে এগুলোর কয়েকটি শুকিয়ে যায়।

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com