বড়লেখার সেলিনা বয়সে ষোড়শী হলেও অজানা রোগে আজও ৪ বছরের শিশুর আচরণ
আবদুর রব॥ বড়লেখার দরিদ্র পরিবারের সন্তান সেলিনা বেগম বয়সে ষোড়শী হলেও আচরণে এখনও চার বছরের শিশু। পারিবারিক দারিদ্রের কষাঘাতে উন্নত চিকিৎসা বঞ্চিত সেলিনা অজানা রোগে শিশু বয়সে আটকে আছে তার ১৬ বছরের স্বর্ণোজ্জল জীবন। এখনো তার চাওয়া, হাসি ও অঙ্গভঙ্গি সবই শিশুর মতো। বাক্-প্রতিবন্ধী এই শিশুটি অপরিচিত কাউকে দেখলেই হাসতে থাকে। সেলিনা বেগম মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হিনাইনগর গ্রামের মৃত রকিব আলীর কনিষ্ঠ কন্যা।
সেলিনার পরিবার, এলাকাবাসী ও সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম। ২ বছর বয়সের সময়ও সে কথা বলতে, উঠে দাঁড়াতে না পারায় চিন্তাায় পড়েন বাবা-মা। এরপর বাবা-মা মেয়ের কথা বলতে ও দাঁড়াতে না পারায় তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসায় কোন উন্নতি হয়নি। অভাব অনটনের সংসারে একবার ডাক্তারের কাছে গেলেও আর যাওয়া হয়নি।
এর মধ্যে তিন বছর পূর্বে রকিব আলী মারা গেলে অসহায় হয়ে পড়ে সেলিনার পরিবার। ইচ্ছা থাকলেও অর্থের অভাবে মেয়ের আর চিকিৎসা করাতে পারেননি মা আছিয়া বেগম। ২০১৩ সালে সেলিনাকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হিসেবে নিবন্ধন করে সমাজসেবা কার্যালয়। এখন সে প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। রকিব আলী ও আছিয়া বেগমের ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ সেলিনা।
সেলিনার মা আছিয়া বেগম জানান, বড়ছেলে বিয়ে করে পৃথক। ৫ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ২ ছেলে পরিবার চালাতে পড়ালেখা বাদ দিয়ে পেটের দায়ে কাজে নামতে হয়েছে। সেলিনার ১ বছরের বড়ভাই সাহেদ আহমদের গত বছর বাইপাস অপারেশন হয়েছে। এই অসহায়ত্বের মাঝে সেলিনার আর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। শারীরিকভাবে একা চলতে অক্ষম মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে মহা চিন্তায় মমতাময়ী মা আছিয়া। মায়ের ধারণা সঠিক চিকিৎসা করাতে পারলে হয়তো তার মেয়েটি সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে ওঠতে পারে। মেয়েটির চিকিৎসা ও সাহায়্যের জন্য তিনি সরকারসহ বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহম্মদ হোসেন জানান, সে জন্ম প্রতিবন্ধী। স্পেশাল চিকিৎসা করালে হয়ত তার উন্নতি হতে পারে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যেটুকু আছে সে চিকিৎসা আমরা করবো।
ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ও একটা অটিস্টিক বেবি। প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। আমাদের যা যা সুবিধা আছে সবই তাকে দেয়া হবে। তবে ওর উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। এর জন্য বিত্তবান ও প্রবাসীদের এগিয়ে আসা দরকার। ও নিজের মতো চলতে না পারলে মায়ের অনুপস্থিতিতে আরও অসহায় হয়ে পড়বে।
মন্তব্য করুন