বড়লেখার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ক্লাস বন্ধ রেখে টাকায় বিশেষ ক্লাস অতিরিক্ত রেজিষ্ট্রেশন ফি আদায়ের অভিযোগ

May 25, 2017,

আবদুর রব॥ বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত ক্লাস বন্ধ রেখে ব্র্যাকের উদ্যোগে জনপ্রতি ৩০০ টাকা আদায় করে গণিতের উপর ১০ দিনের প্রশিক্ষণ ক্লাস চালানো হচ্ছে। টাকা পরিশোধে ব্যর্থ ছাত্রছাত্রীদের মৌখিকভাবে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছেন প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাস। এ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর দেড়শ’ ছাত্রছাত্রীর নিকট থেকে শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত রেজিষ্ট্রেশন ফি ১২৫ টাকার স্থলে ৩০০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব জানালেন টাকা নিয়ে স্কুল চলাকালিন শিক্ষার্থীদের কোচিং কিংবা প্রশিক্ষণ প্রদানের কোন বিধান নেই।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থী সুত্রে জানা গেছে, হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাস অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের গণিতে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্র্যাকের উদ্যোগে ১০ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণের নামে ছাত্র প্রতি ৩০০ টাকা করে প্রদান করতে ছাত্রছাত্রীদের নোটিশ দেন। গ্রীষ্ম কালিন ছুটি শেষে ১৩ মে স্কুল খুললে ফি প্রদানের জন্য ছাত্রছাত্রীদের চাপ দেন। মৌখিকভাবে নির্দেশ প্রদান করেন যারা প্রশিক্ষণ ফি দেবে না তারা যেন স্কুলে না আসে। অষ্টম শ্রেণীর ১৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জন ফি প্রদান করে। ব্র্যাকের প্রশিক্ষক সকাল দশটা থেকে দুপুর বারটা পর্যন্ত বিরতিহীন তাদের ক্লাস নেন। ফি দিতে ব্যর্থ শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আমিনুল ইসলামের বাবা আব্দুল জব্বার অভিযোগ করেন সাম্প্রতিক বন্যায় হাকালুকি হাওরপারের মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন এমনিতেই অতি দরিদ্র। ছেলে বাড়িতে গিয়ে বলেছে গণিতের বিশেষ একটি ক্লাসের জন্য স্যার ৩০০ টাকা নিয়ে যেতে বলেছেন। আমি দিতে পারিনি। এজন্য প্রধান শিক্ষক আমার ছেলেকে স্কুলে যেতে নিষেধ করেছেন। এর আগে রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবত ৩০০ টাকা আদায় করেছেন। অভাব অনটনের কথা বলেও কিছু টাকা কম দিতে পারিনি।
শিক্ষার্থী অভিভাবক মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, তার ছেলেসহ অষ্টম শ্রেণীর প্রত্যেক ছাত্রের নিকট থেকে প্রধান শিক্ষক রেজিষ্ট্রেশন ফি’ বাবত ৩০০ টাকা করে আদায় করেছেন। এরপর টেনিংয়ের কথা বলেও আরো ৩০০ টাকা দাবী করেন।
ব্র্যাকের উপজেলা প্রোগ্রাম অর্গানাইজার মতিউর রহমান বিশেষ প্রশিক্ষণ বাবত ছাত্রপ্রতি ৩০০ আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে জানান, গণিতে দক্ষ করতে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্র্যাকের একজন প্রশিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। ১০ দিনের এ প্রশিক্ষণ বাবত টাকা আদায়ে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন রয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কোন কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। বিরতিহীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ার নিয়ম রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের সদুত্তর দেননি।
প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র দাস স্কুল সময়ে ফি নিয়ে কোন সংস্থার বিশেষ ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির জ্ঞাতেই তিনি এ প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়েছেন। ফটোসহ আনুসাঙ্গিক খরচ বাবত রেজিষ্ট্রেশন ফি ৩০০ নেয়ার সত্যতা স্বীকার করলেও ফি দিতে ব্যর্থ শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে নিষেধ করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সমীর কান্তি দেব জানান, স্কুল সময়ে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের কোন ধরনের কোচিং কিংবা বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদানের নিয়ম নেই। ব্র্যাকের প্রশিক্ষণের বিষয়ে তার কিছ্ ুজানা নেই। অষ্টম শ্রেণীর বোর্ড নির্ধারিত রেজিষ্ট্রেশন ফি সর্বসাকুল্যে ১২৫ টাকা। এর বেশি নিয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক প্রমাণ মিললে ফেরৎ দিতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com