বড়লেখায় অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন-নদী গর্ভে ফসলি জমি

February 8, 2017,

কুলাউড়া অফিস॥ বড়লেখা উপজেলার আতুয়া সীমান্ত এলাকার সোনাই নদীর বড়লেখা অংশে ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় বিজিবি’র নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৪ মাস ধরে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বালু ও মাটি পাচার করছে অসাধু বালু ও মাটিখেকো একটি চক্র। ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নয়াগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় ২-৩ শ’ গজের মধ্যে ক্ষেতের জমি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় ভূমি মালিক, কৃষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ভূক্তভোগীরা বড়লেখা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানা অফিসার ইনচার্জ বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা যায়,বড়লেখা উপজেলার আতুয়া গ্রাম ঘেঁষা ও বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রাম বিজিবি ক্যাম্পের প্রায় ২-৩ শ’ গজের মধ্যে সোনাই নদীর ধোপা ডহর নামক স্থানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। নদী পারের ভূমি মালিক মুক্তিযোদ্ধা তুতিউর রহমান, প্রবাস ফেরৎ আব্দুল জলিল, আব্দুস সামাদ, কৃষক মকবুল হোসেন প্রমুখ অভিযোগ করেন, প্রায় ৪ মাস ধরে বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রামের আ’লীগ নেতা ফয়সল ও কবির ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও মাটি উত্তোলন করছেন। এতে তাদের কৃষি জমিতে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে এবং দ্রুত ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বাধা নিষেধ দিলে ফয়সল ও কবির জানায় তারা বালু মহাল ইজারা নিয়েছে। স্থানীয় আ’লীগ ও বিজিবি ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। বালু উত্তোলকারী ড্রেজার মেশিন শ্রমিক জোবায়ের হোসেন, কালা মিয়া ও রাসেল আহমদ জানান, কিশোরগঞ্জের মনির হোসেন তাদেরকে নিয়ে এসেছেন। স্থানীয় ফয়সল ও কবির বালু উত্তোলনের সবকিছু দেখভাল করছে। এখান থেকে তুলা বালু ও মাটি একটি রাস্তায় বিক্রি হচ্ছে। উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম আহমদ জানান, অবৈধ ড্রেজার মেশিনে বিয়ানীবাজারের কিছু লোক সোনাই নদীর বড়লেখা অংশ থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করায় অনেক ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। এ নিয়ে দুই এলাকার মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। গত শুক্রবার দুপুরে ঢিল ছুড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্ত ফয়সল আহমদ ও কবির আহমদ জানান, বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা আ’লীগ এবং স্থানীয় বিজিবি বালু উত্তোলনের বিষয় অবহিত রয়েছে। বিয়ানীবাজারের একটি নতুন রাস্তার জন্য জনৈক ইজারাদারের হয়ে নদী থেকে বালু ও মাটি তুলছেন দাবী করলেও তারা ইজারার বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। বিয়ানীবাজার ৫২ বিজিবি ব্যাটেলিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আশিকুর রহিম বলেন, ‘অপরাধিরা ধরা পড়লে তাদের অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন জনের নাম ভাঙ্গিয়ে থাকে। সোনাই নদী হতে ড্রেজার মেশিনে বালু ও মাটি উত্তোলনের কিছুই বিজিবি জানে না। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনে বিজিবির সহযোগিতা চাইলে বিজিবি সহায়তা করবে।’ এ ব্যাপারে বড়লেখার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমীর বিশ্বাস অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযোগটি তদন্তের জন্য ভূগা ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা এতরাব আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বড়লেখা অংশে বালু উত্তোলনের সত্যতা পাওয়া গেছে। স্পটটি সোনাই নদীর বড়লেখা-বিয়ানীবাজার উপজেলার সীমানায় পড়েছে। তাই এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজারের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com