বড়লেখায় অবৈধ ট্রাক্টর-টলি চলাচলে ভাঙ্গছে সড়ক বাড়ছে দুর্ঘটনা
আবদুর রব॥ বড়লেখায় প্রতিদিন বেপরোয়া গতি আর বিকট শব্দে চলাচলকারী অবৈধ ট্রাক্টর ও টলির কারণে ভাঙ্গছে সড়ক, বাড়ছে অনাকাংখিত দুর্ঘটনা। মুলত কৃষিকাজের জন্য ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার ক্রয় করে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গুটি কয়েক ব্যক্তি অল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে পাহাড়-টিলা কাটার মত অবৈধ কাজে এসব ট্রাক্টর ও টলি (পাওয়ারটিলার থেকে রূপান্তির) ব্যবহার করছে। এসব ট্রাক্টর-টলির বেশিরভাগ পাহাড়-টিলার মাটি ছাড়াও ইট-বালি ও অবৈধ কাঠ পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও অধিকাংশ ট্রাক্টরের নেই বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। অবৈধ ট্রাক্টরে প্রতি বছর ১/২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর অবৈধ ট্রাক্টরের ধাক্কায় ৭ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এরপরও প্রশাসনের যেন টনক নড়ছে না ।
জানা গেছে, প্রতিদিন উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ডিমাই, কেছরিগুল, কাঠালতলী, গঙ্গারজল, কাশেমনগর, পূর্ব-হাতলিয়া, বোবারথল, মোহাম্মদনগর, ছোটলেখা, ঘোলসা, চন্ডিনগর, মুড়াউল, বড়াআইল, নান্দুয়া, পূর্ব-বাণীকোনা, শ্রীধরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রকাশ্যে পাহাড়-টিলা ও ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। আর মাটি পরিবহণে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় পাচশ’ ট্রাক্টর ও পাওয়ারটিলার দিয়ে তৈরী অবৈধ টলি। মাটি কাটার পর নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে এসব পরিবেশ বিনষ্টকারী অবৈধ যান। মাটি পরিবহণের সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও সদরের প্রধান সড়ক মারাত্মতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার কাঁঠালতলী, চান্দ্রগাম, পানিধার, দাসেরবাজার, বর্ণি, দক্ষিণভাগ, বড়লেখা সদরসহ বিভিন্ন সড়কের ওপর ট্রাক্টরের মাটি পড়ে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এতে যানবাহন চালক ও সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এসব যেনো দেখার কেউ নেই।
এদিকে ২৯ ডিসেম্বর অবৈধ ট্রাক্টরের ধাক্কায় জুয়েল আহমদ নামে ৭ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটে পৌরশহরের আদিত্যের মহাল বন্ধ থাকা রেললাইনের আউট সিগন্যালের পাশে। ঘটনার পর থেকে ঘাতক ট্রাক্টর চালক পালিয়ে গেলেও পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ট্রাক্টরটি জব্দ করেছে। বৈধ কাগজপত্র না থাকা স্বত্ত্বেও ট্রাক্টর মালিক উপজেলার দরগাবাজারের ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কারণ, অধিকাংশ ট্রাক্টরের মালিক ক্ষমতাসীন দলের হওয়ায় তারা ট্রাক্টরের বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের তোয়াক্কা করেন না।
সরেজমিনে উপজেলার কাঁঠালতলী স্কুল রোড সংলগ্ন বাজার এলাকায় ট্রাক্টর দিয়ে মাটি এনে (বাসা তৈরির জন্য) ফসলি জমি ভরাট করতে দেখা গেছে। এসময় ট্রাক্টরের কাগজ আছে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় জেনে ট্রাক্টর চালক এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন কাঁঠালতলী-তেরাকুড়ি সড়ক দিয়ে প্রায় ৬ হাজার মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তার ওপর মাটি পরিবহনের সময় ট্রাক্টর থেকে মাটি পড়ে সড়কটি নষ্ট হচ্ছে। যার ফলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এতে এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। বিশেষ করে স্কুল-মাদ্রসাগামী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের যেন অন্ত থাকে না।
কাঠালতলী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এখলাছ উদ্দিন ও ব্যবসায়ী ফাহাদ আহমদ বলেন, ‘ট্রাক্টরটি নিয়মের চেয়ে অতিরিক্ত মাটি লোড করে দ্রুত গতিতে সড়কে চলাচলের সময় মাটি পড়ে গিয়ে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বিকট শব্দে চলাচলের সময় শব্দ দূষণও হচ্ছে। স্থানীয় অটোরিকশা চালক সমিতির সদস্য শরীফ আহমদ রাজু ও অটোরিকশা চালক জাকির হোসেন বলেন, ‘মাটি পড়ে সড়ক নষ্ট হওয়ায় গাড়ি চালানোর সময় স্লিপ করে দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার সময় বিপাকে পড়তে হয়। এসবের প্রতিবাদ করলে চালকরা দুর্ব্যবহার করেন।’
পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, পৌরশহরে সব ধরনের অবৈধ ট্রাক্টর চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বে
অসাধুরা অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি অবৈধ ট্রাক্টরের পরিবেশ বিধংসী অনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
ইউএনও এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন ১৬ জানূয়ারী উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অবৈধ ট্রাক্টর ও টলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্য করুন