বড়লেখায় উৎকোচ নিয়েও পিডিবি’র সংস্কার কাজ বিলম্বিত করার অভিযোগ ক্ষুব্দ গ্রাহকদের হাতে দিনভর পিকআপ ভ্যান আটক
আব্দুর রব॥ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ঘুষ নিয়েও পিডিবি’র বিদ্যুৎ লাইনের সংস্কার কাজ সম্পন্ন না করায় দুইশ’ ক্ষুব্দ বিদ্যুৎ গ্রাহক সম্প্রতি ২৭ জুলাই বুধবার চালকসহ পিডিবি’র সরঞ্জামবাহী একটি পিকআপ ভ্যান আটকিয়ে দেয়। প্রায় আট ঘন্টা পর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অল্প সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্নের আশ্বাস দেয়ায় গ্রাহকরা পিকআপ ভ্যানটি ছেড়ে দেন। ঘুষ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে সংস্কার কাজের প্রকৌশলী বকুল আহমদ জানান, স্থানীয় টাউট-বাটপাররা হয়ত: পিডিবি’র কর্মকর্তাদের নামে গ্রাহকদের নিকট থেকে চাঁদা আদায় করেছে।
জানা গেছে, কুলাউড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গজভাগ ও দোহালিয়া গ্রামের দু’শ বিদ্যুৎ গ্রাহকের জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন সংস্কারের (উন্নয়ন প্রকল্পভুক্ত) কাজ প্রায় দুই বছর পুর্বে শুরু হয়। এ প্রকল্পে বিনামূল্যে তার, খুঁটি ও ট্রান্সফরমার স্থাপনের কথা। কিন্তু পিডিবি’র সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের অসাধু কর্মকর্তারা গ্রাহকদের নিকট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে বড় অঙ্কের উৎকোচ আদায় করে। সাধারন গ্রাহকরা কয়েক দফা উৎকোচ দিলেও এক বছরের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দুই বছরেও শেষ না করে মাঝপথে বন্ধ রাখা হয়। গ্রাহকরা পিডিবি’র কুলাউড়া অফিসে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের বারবার ধর্ণা দিয়েও বন্ধ কাজ চালু করাতে না পারায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। ২৭ জুলাই অন্য প্রকল্পের বিদ্যুৎ সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার সময় সকাল ন’টায় দক্ষিণভাগ-কলাজুরা রাস্তায় দুই গ্রামের শতাধিক ক্ষুব্দ বিদ্যুৎ গ্রাহক পিডিবি’র পিকআপ ভ্যান আটক করে নিয়ে যায়। পিকআপটি গজভাগ গ্রামে দিনভর ঘেরাও করে রাখার পর প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম ও কনসালটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার নাজিউর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১-২ দিনের মধ্যে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার আশ্বাস দিলে বিকেল পাঁচটায় গ্রাহকরা তা ছেড়ে দেন।
সরেজমিনে গেলে বিদ্যুৎ গ্রাহক আব্দুল জলিল, আব্দুল মালিক, কামাল উদ্দিন, ইসলাম উদ্দিন, জমির উদ্দিন, ফখরুল ইসলাম, জয়নাল উদ্দিন, রিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, সংস্কার কাজের জন্য গ্রামের বাবলু আহমদ, মুছন আলী, সিরাজুল ইসলাম, সেবুল আহমদ, আব্দুল গফ্ফার প্রায় ২০০ গ্রাহকের নিকট থেকে জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার করে ২-৩ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেন। এক বছরের কাজ দুই বছরেও শেষ না করায় বাধ্য হয়ে আমরা পিডিবি’র পিকআপ ভ্যান আটক করি। পরে অবশ্য সমঝোতায় আমরা সেটি ছেড়ে দিয়েছি।
চাঁদা আদায়কারী বাবলু আহমদ, সেবুল আহমদ, আব্দুল গাফ্ফার জানান, দ্রুত কাজ সম্পন্নের জন্য পিডিবি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উৎকোচ চান। আমরা গ্রাহকদের নিকট থেকে চাঁদা তোলে তিন দফায় প্রকৌশলী বকুল আহমদকে ঠিকাদারের লাইনম্যান সাইদুর রহমানের উপস্থিতিতে এক লাখ পচিশ হাজার টাকা প্রদান করি। এছাড়াও অফিসের অন্যদের আরো ৭০-৮০ হাজার টাকা উৎকোচ দেই। কিন্ত কাজ সম্পন্ন না করায় গ্রাহকরা আমাদের ওপর চড়াও হলে কয়েকজন গ্রাহককে বকুল আহমদের বাসায় নিয়ে তাকে যে, টাকা দিয়েছি তা আমরা নিশ্চিত করি।
প্রকৌশলী বকুল আহমদ সংস্কার কাজের নামে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, টাউট-বাটপাররা পিডিবি’র নামে হয়ত: চাঁদা আদায় করেছে। সংস্কার লাইনটি ১১ কেভি না ৩৩ কেভি হবে, এ নিয়ে উর্ধ্বতন পর্যায়ে দ্বিধা থাকায় কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকে। এতে ক্ষুব্দ হয়ে গ্রাহকরা পিডিবি’র পিকআপ ভ্যান আটক করলে পরে সমঝোতায় ছেড়ে দেয়।
মন্তব্য করুন