বড়লেখায় চা বাগানের ভুমি দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ ভূমিখেকো চক্র ও বাগান পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা
কুলাউড়া অফিস॥ বড়লেখায় স্কয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন শাহবাজপুর চা বাগানের ভুমি জবর দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করছে প্রভাবশালী একটি ভূমিখেকো চক্র। পরোক্ষভাবে নেপথ্যে থেকে এ ভূমিখেকো চক্রটি ভূমি জবরদখলে আদিবাসী খাসিয়াদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ দখলকে কেন্দ্র করে ভূমিখেকো চক্র ও বাগান পক্ষের মধ্যে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ৩ অক্টোবর সোমবার উপজেলা প্রশাসন উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বিরোধীয় ভুমিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নিষেধ ও মূচলেখার শর্ত ভঙ্গ করে খাসিয়ারা ঘর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে বলে মঙ্গলবার বাগান পক্ষ অভিযোগ করেছে।
সরেজমিন ও বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, স্কয়ার গ্রুপের মালিকানাধীন অরগানিক চা উৎপাদনকারী রপ্তানীমুখি শাহবাপুর চা বাগানের লিজকৃত ১নং খতিয়ানের ১৪৮, ৫১৭, ৫২০ও ৭০১ নং দাগের প্রায় সাড়ে চারশ’ একর ভুমি ২৮ সেপ্টেম্বর রাতের আঁধারে স্থানীয় একদল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী নিয়ে কয়েকজন আদিবাসি খাসিয়া জবরদখল করে অবৈধ ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে। বাগানের ভূমি জবরদখল করে ঘর-বাড়ি নির্মানে আদিবাসী খাসিয়াদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নেপথ্যে থাকা প্রভাবশালী একটি ভূমিখেকো চক্র। জবর দখলের ঘটনায় বাগান পক্ষ ও ভূমিখেকো চক্রের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন সময় দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও আশংকা রয়েছে।
চা বাগানের শ্রমিক নিরঞ্জন কর্মকার, বাবুল বাউরি, লক্ষীন্দর ব্যনার্জি, মেঘনাথ নায়েক প্রমূখ অভিযোগ করেন খাসিয়ারা বাগানের ভোগ দখলীয় পিচলাটিলা নামক এলাকার ভুমি জবর দখল করে ২৫ টি অবৈধ ঘর নির্মাণ করেছে। তাদের হুমকি ধমকিতে সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা কয়েকটি টিলায় চা পাতা তুলতে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না।
চা বাগানের মহা ব্যবস্থাপক আলী আহমেদ জানান, ১১ বছর আগে নির্মিত চা বাগানের সীমানা পিলার, নেট উপড়িয়ে এবং ১০-১২ হাজার চা গাছ কেটে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় স্থানীয় সন্ত্রাসী বটল মিয়া, মাসুক মিয়া, ময়নুল হক, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হক, সালেখ উদ্দিন, সুফিয়ান, মেলেট খাসিয়া, প্রফুল্ল, কার্লিম, কবিনেল, দিরীমদের খাসিয়া, লোকাস বাহাদুর প্রমূখ পিচলাটিলা নামক এলাকার প্রায় সাড়ে চারশ’ একর ভুমি জবর দখল করে ২৫ টি অবৈধ ঘর তৈরী করে বসবাস শুরু করে। সোমবার প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় উভয়পক্ষ মূচলেখায় স্বাক্ষর করলেও খাসিয়ারা শর্তভঙ্গ করে বিরোধীয় ভুমিতে ঘর নির্মাণ ও জনবল বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে।
এলাকাবাসীর অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকৃতপক্ষে খাসিয়াদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে একটি প্রভাবশালী ভুমি খোকো চক্র। এক সময় তারাই খাসিয়াদের উচ্ছেদ করে এসব ভূমি নিজেদের দখলে নেবে।
চা বাগানের অভিযোগে ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সামনে থাকা খাসিয়াদের অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেও নেপথ্যের চক্রের ইশারায় খাসিয়ারা তা মানেনি। এতে করে বাগানের শ্রমিকসহ কর্মকর্তারা নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন।
ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বাগানের লিজকৃত ভুমি খাসিয়ারা দখলে রাখতে পারবে না। চা বাগান ও খাসিয়াদের মধ্যে সৃষ্ট উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে সোমবার প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভুমি) সমীর বিশ্বাস, থানার ওসি মোহাম্মদ সহিদুর রহমান ছাড়াও বাগান পক্ষ ও খাসিয়া নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের উদ্যোগে সৃষ্ট মূচলেখায় উভয়পক্ষ বিরোধীয় ভুমিকে না যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন। তবে মঙ্গলবার বাগানের ম্যানেজার আলী আহমেদ তাকে অভিযোগ করেছেন মূচলেখার শর্ত অনুযায়ী খাসিয়ারা অবৈধ দখল ছেড়ে দেয়ার কথা থাকলেও তারা দখল ছাড়েনি।
বাগানের ভুমি জবর দখলকারী লোকাস বাহাদুর জানান, সরকারী খাস জমিতে ঘর দোয়ার তৈরী করে বসবাস শুরু করেছেন। উক্ত ভুমি লিজ নেয়ার দাবী করলেও লিজের কোন কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। মুচলেখার শর্তভঙ্গের অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
মন্তব্য করুন