বড়লেখায় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রছায়ায় সংক্রান্তি মেলায় প্রকাশ্যে জমজমাট জুয়া
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় পৌষ সংক্রান্তি মেলায় প্রকাশ্যে বসেছিল জমজমাট জুয়ার আসর।
শনিবার ১৪ জানুয়ারি দাসেরবাজার ইউপির বাগীরপার ও বর্ণি ইউপির মিহারী এলাকায় সংক্রান্তি মেলায় প্রকাশ্যে রাতভর অনুষ্ঠিত নিষিদ্ধ জুয়ার আসরে বড়লেখা, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জসহ ৪-৫ উপজেলার বড়বড় জুয়াড়ীরা অংশ নেয়। মেলায় জুয়া চলছে এমন খবরে পুলিশ কয়েকবার অভিযান চালালে জুয়াড়িরা পালিয়ে গেলেও পুলিশ সরে যাওয়ার পর রাতভর দিব্যি জুয়া চালায়।
সরেজমিনে বাগীরপার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মেলার মাঠের পূর্বপাশ এলাকায় চটের বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৫০-৬০টি জুয়া খেলার ঘর। ঘরগুলোতে বসার জন্য খড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিছানা। নির্বিঘেœ জুয়া খেলার জন্য ঘরের আশাপাশে ছিল মেলা কমিটির নিয়োজিত সেচ্ছাসেবক দল। পরিচয় গোপন রেখে একটি ঘরে প্রবেশ করেতেই দেখা গেল ১০/১৫ জনের একটি দল মগ্ন রয়েছে জুয়া খেলায়। প্রায় ৩০মিনিট অবস্থান করে লাভের সর্বস্ব খুইয়ে জুয়া-মেলায় আসবেন না বলে পণ করলেও পরক্ষণে ‘ভাগ্য খুলতে’ পারে ভেবে আবারও খেলতে বসেছেন এমন অনেককেই দেখা গেছে।
শনিবার ১৪ জানুয়ারি স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা ও একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিহারী মেলা কমটির সভাপতি বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুবোধ চন্দ্র দাস, বাগীরপারের সভাপতি শিবু দাসসহ কমিটির লোকজন ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে মেলার পাশাপাশি আয়োজন করা হয় জুয়ার আসর।
জুয়ার তাবু থেকে বের হয়ে মেলার মাঠে চাদর ও চটের বস্তা বিছিয়ে জুয়ার আসরে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে এমন চিত্র চোখে পড়ে। খেলা শেষে সর্বস্ব খুইয়ে জুয়ার নেশায় মত্ত অনেককেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। ফরগুটি, চরকা, ১/১০ খেলায় মেতে উঠছেন সব বয়সের মানুষ।
মেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, রিকশা চালক, ছাত্র, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেনী, পেশার মানুষ টাকার খেলায় সেখানে মেতে উঠেছেন। দামী গাড়ি চড়েও গভীর রাতে দুরদুরান্ত থেকে ছুটে আসছেন জুয়াড়িরা। জুয়ার অর্থ নিয়ে পকেট ভারী করছে জুয়া ব্যবসায়ী। বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ আয়ের সব টাকা ঢেলে দিচ্ছেন তাদের পাতা ফাঁদে।
একই চিত্র ছিল বর্ণি ইউনিয়নের মিহারীর মেলায়ও। সেখানে চটের বস্তা দিয়ে তৈরি করা হয় প্রায় ৪০-৫০টি জুয়া খেলার ঘর।
মিহারীতে মেলায় জুয়ার আসরের ব্যাপারে জানতে আয়োজক কমিটির সভাপতি বর্ণি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সুবোধ চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে, ‘তিনি উত্তেজিত হয়ে তার মেলায় কোন জুয়া চলেনি বলে দাবী করেন। মেলায় জুয়া চলছে এরকম ছবিসহ প্রমাণ আছে বললে সুবোধ বলেন, প্রমাণ থাকলে নিউজ করেন আমিও দেখে নিব। এসব কি নতুন হয় নাকি।’
বাগীরপারের মেলা কমিটির সভাপতি শিবু দাস মেলায় জুয়া হয়েছে এই বিষয়টি অস্বীকার করেন। তবে জুয়ার ছবি আছে একথা জানালে তিন বলেন, ‘মেলায় আমোদ-ফুর্তির জন্য একটু আধটু আসর বসে। সব জায়গায়ই এসব হয়।’ দম্ভোক্তি করে তিনি বলেন আগামী শনিবারও জুয়ার আসর বসাবেন।
বড়লেখা থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, ‘জুয়া চলছে এমন গোপন সংবাদে মেলাগুলোতে পুলিশ কয়েকবার অভিযান চালায়। মেইন রাস্তা থেকে মেলার দুরত্ব অর্ধ কিলোমিটার হওয়ায় পুলিশ রাস্তায় গাড়ি রেখে মেলায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে জুয়াড়িরা পালিয়ে যায়। মেলায় জুয়া বন্ধে পুলিশ তৎপর ছিল।’
মন্তব্য করুন