বড়লেখায় জাল কাগজেপত্রে দলিল রেজিষ্ট্রীর অভিযোগ দলিল লেখকদের সাথে জালিয়াত চক্রের যোগসাজস
আবদুর রব॥ বড়লেখায় অসাধু দলিল লেখকরা ভুমি জালিয়াত চক্রের যোগসাজসে কখনও ভুয়া মালিক সাজিয়ে আবার কখনও জাল কাগজপত্রে একজনের জমি অন্যের নিকট বিক্রি করছে। অধিক মুনাফার লোভে দলিল লেখকরা নানা জালিয়াতির মাধ্যমে মূল্যবান ভুমির দলিল রেজিষ্ট্রী করায় ক্রেতা-বিক্রেতারা প্রতারিত ও মারাত্মক জটিলতার সম্মুখিন হচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার তালিমপুর ইউপির মুর্শিবাদকোরা গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে একরাম আলী বর্নি ইউপির শিলকুরা গ্রামের হরিবল দাসের নিকট থেকে ৬ বছর পুর্বে ৫ শতাংশ ভুমি ক্রয় (দলিল নং-১৪৪৬) করেন। নিজের নামে উক্ত ভুমির নামজারিও সম্পন্ন করেন। ২০১২ সালে জালিয়াত চক্রের সহায়তায় জনৈক চারুবালা দাস জাল কাগজে উক্ত ভুমির আড়াই শতাংশ নামজারি করিয়ে নেন। প্রকৃত ভুমি মালিক একরাম আলী চারুবালা দাসের নামীয় নামজারি বাতিলের জন্য সহকারী কমিশনারের (ভুমি) কার্যালয়ে বিবিধ মোকদ্দমা (নং-১৪/২০১৩) করেন। দু’তরফা শুনানী শেষে সহকারী কমিশনার (ভুমি) সৈয়দ মোহাম্মদ আমিনুর রহমান চারুবালা দাসের খতিয়ান বাতিল করেন। ভুমি মালিক একরাম আলীর নামজারি পর্চা বহাল থাকাবস্থায় উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্যামা কান্ত দাস তা গোপন রেখে প্রকৃত ভুমি মালিকের আপত্তি স্বত্ত্বেও অর্ধলক্ষ টাকায় বাতিল নামজারি পর্চা ও ভুয়া খাজনা রশিদে আড়াই শতাংশ ভুমি বিক্রির দলিল সম্পাদন করেন।
২৫ ফেব্রুয়ারী সম্পাদিত ৪৯৮/২০১৭ নং দলিল সুত্রে জানা গেছে, আমন শ্রেণীর আড়াই শতাংশ ভুমি জনৈক চারুবালা দাস ২৫ হাজার টাকায় কুলছুমা বেগম নামে এক মহিলার নিকট বিক্রয় করেছেন।
ভুমি মালিক একরাম আলী অভিযোগ করেন, জাল কাগজে তার দখলীয় আড়াই শতাংশ ভুমি আত্মসাতের চেষ্টা চালালে তিনি তা প্রতিরোধ করেন। দলিল লেখক শ্যামা কান্ত দাসকে ৪-৫ বার আপত্তি দেয়া স্বত্তেও তিনি ২০১৩ সালের বাতিল নামজারি পর্চা আর জাল খাজনা রশিদে আমার ভুমি বিক্রির দলিল সম্পাদন করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পাদিত এ দলিল বাতিলের জন্য গত ২১ মার্চ জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবরে তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে পৌরশহরের বারইগ্রামের মৃত মুহিবুর রহমানের ব্রিটিশ সিটিজেন ছেলে দেলোয়ার হোসেন লন্ডনে থাকলেও ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ ভুয়া দেলোয়ার সাজিয়ে তার মূল্যবান ৬ শতাংশ ভুমি জালিয়াত চক্র হাটবন্দের লক্ষণ পাল নামের ব্যবসায়ীর নিকট ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে। প্রায় ১৩ বছর পর চলিত বছরের ১৩ জানুয়ারী দেলোয়ার দেশে এসে ভুমি বিক্রির ঘটনা জেনে অবাক হন। ক্রেতা লক্ষণ পাল জানান তিনি দেলোয়ারকে কখনও দেখেননি। দলিল লেখক নৃপেন্দ্র কুমার নাথ ও শাহিদুর রহমান রেজিষ্ট্রীর দিন ভুমির মালিককে সামনে আনেন এবং সনাক্ত করেন। তারাই ভুমি বিক্রির প্রস্তাব দেয়। প্রকৃত দেলোয়ারকে দেখে বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। দলিল লেখক নিপেন্দ্র কুমার নাথ ভুয়া এ দলিল সম্পাদন করেন। লন্ডনে থাকা বিক্রেতাকে (!) সনাক্ত করেন সুড়িকান্দি গ্রামের সফিকুর রহমানের ছেলে শাহিদুর রহমান শিপলু। সুত্র জানায় শ্যামা কান্ত দাস, নৃপেন্দ্র কুমার নাথ, আব্দুল হকসহ অসাধু কতিপয় দলিল লেখক ভুমি জালিয়াত সিন্ডিকেটের যোগসাজসে বিরাট অংকের টাকার বিনিময়ে সাব-রেজিষ্ট্রারকে অন্ধকারে রেখে প্রতিনিয়ত জাল কাগজপত্রে ও ভুয়া মালিক সাজিয়ে একজনের জমি আরেকজনের নামে দলিল রেজিষ্ট্রী করে বিভিন্ন ভুমি মালিককে মারাত্মক সমস্যায় ফেলছে।
উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুল করিম দৌলা জাল কাগজপত্র ও ভুয়া মালিক সাজিয়ে দলিল সম্পাদনের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানান জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সম্পাদনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ইতিপুর্বে কয়েকজন দলিল লেখককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সাম্প্রতিক অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুয়া মালিক সাজিয়ে ভুমি বিক্রির দলিল সম্পাদনকারী নৃপেন্দ্র কুমার নাথ জানান, বিক্রেতাকে সনাক্ত করেছেন শাহিদুর রহমান শিপলু। দলিল দাতা যে প্রকৃত দেলোয়ার ছিলেন না তা তিনি জানতেন না। তবে বিষয়টির আপস নিষ্পত্তির চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন