বড়লেখায় জেল সুপারের নাম ভাঙ্গিয়ে অভিনব প্রতারণা কারাগারে বন্দি হাজতির বাইপাস অপারেশনের নামে অর্থ আদায় প্রতারণার টোপ হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ব্যবহার
আব্দুর রব॥ মৌলভীবাজার জেলা কারাগারে বন্দি হাজতিদের পুঁজি করে জেল সুপারের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ আদায়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারক চক্র।
১০ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে কারাগারে বন্দি বড়লেখার সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এমাদুল ইসলাম স্ট্রোকে আক্রান্ত জানিয়ে জরুরী অপারেশনের নামে প্রতারক চক্র তার শ্যালকের নিকট থেকে ১৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সংঘবদ্ধ চক্রটি প্রতারণার টোপ হিসেবে এবার উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামকে ব্যবহার করেছে। জেল সুপারের নামে এমাদুল ইসলামের সংকটাপন্ন শারীরিক অবস্থার খবর জেনে তার স্ত্রী, কন্যাসহ অনেক স্বজন তাৎক্ষণিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। মাসে বড়লেখার আরেক হাজতি বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনের অপারেশনের কথা বলে একই কায়দায় জেল সুপার সেজে প্রতারক চক্র স্বজনদের নিকট থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পেতেছিল।
হাজতি এমাদুল ইসলামের শ্যালক নাজিম আহমদ জানান, শনিবার রাত আটটার দিকে বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর ফোনে বলেন, হাজতে বন্দি তোমার দুলাভাই এমাদুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ। জেল সুপার ফোন করেছেন জানিয়ে তিনি একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। নাজিম আহমদ এ নম্বরে যোগাযোগ করলে নিজেকে মৌলভীবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, এমাদুল ইসলাম হার্ট অ্যাটাক করেছেন। তাকে সিলেট ওসমানীতে পাঠানো হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় বাইপাস অপারেশনের জন্য বিমানে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. শহীদুল¬ার সাথে যোগাযোগ করতে তিনি ফোন নম্বর দেন। কথিত চিকিৎসক বলেন, বাইপাস অপারেশনে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার প্রয়োজন। জেল সুপার সরকারীভাবে ৫০ হাজার টাকার ব্যবস্থা করবেন। বাকী ৯০ হাজার টাকা রোগী বহন করলে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হবে। ৩০ মিনিটের মধ্যে রোগীকে ওটিতে না নিলে বাঁচানো যাবে না বলে তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নেয়ার তাগিদ দেন। কথিত চিকিৎসক ফিরতি ফোনে আপাতত ৩৮ হাজার টাকা জমা দিতে রেসিপশনের ফোন নম্বর দেন। রেসিপশন থেকে দুইটি বিকাশ নম্বর দেয়া হলে এর একটিতে তিনি টাকা পাঠাতে গেলে স্থানীয় বিকাশ এজেন্টের ব্যালেন্স কম থাকায় ১৩ হাজার টাকা পাঠিান। এদিকে এমাদুল ইসলামের হার্ট অ্যাটাকের খবরে স্ত্রী রেফা বেগম, মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ও বড়ভাই মিছবাহ উদ্দিনসহ স্বজনরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। মিডিয়া কর্মী ও প্রশাসনের মাধ্যমে এমাদ হাজতে সুস্থ রয়েছেন নিশ্চিত খবরে তারা উদ্বেগমুক্ত হন।
জেল সুপার আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানান, শনিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে তার কাছে এব্যাপারে একাধিক ফোন আসে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন জেল খানার সব বন্দি সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছে। ১৪ আগষ্ট বড়লেখার হাজতি আব্দুল কুদ্দুছ স্বপনের ভাইয়ের নিকট থেকে একই কায়দায় প্রতারক চক্র ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তিনি হাজতিসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের এব্যাপারে আরো সচেতন ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর জানান, জেল সুপার পরিচয়ে এক ব্যক্তি এমাদুল ইসলাম হার্ট অ্যাটাক করেছেন জানিয়ে ফোন দিয়ে খবরটি তার পরিবারে জানানোর অনুরোধ করেন। আমি তার শ্যালক নাজিম আহমদকে নম্বরটি দেই। আমার সন্দেহ হওয়ায় জেলা পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি বিষয়টি ভুয়া। পরে নাজিমকে সতর্ক করার আগেই প্রতারকরা তার নিকট থেকে ১৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
মন্তব্য করুন