বড়লেখায় ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা বন্যার্ত কেউ পাচ্ছে বারবার আর কেউ পায়নি একবারও !

July 19, 2017,

আবদুর রব॥ হাকালুকি হাওরপাড়ের বড়লেখায় দুস্ত বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে চলছে চরম সমন্বয়হীনতা। বিশেষ করে বে-সরকারী সংস্থ্যা, সংগঠন, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগের ত্রাণ বিতরণে যোগাযোগ সুবিধাকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এতে ঘুরে ফিরে একই এলাকার দুর্গত লোকজন উপকৃত হচ্ছে। ফলে নি¤œাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষজন অতিদরিদ্র হওয়া স্বত্ত্বেও একবারও ত্রাণ পাচ্ছে না। অথচ সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা নিলে দুর্গত সকলেই কিছু না কিছু খাদ্য সহায়তা পেত।

জানা গেছে, ১৫ জুন থেকে উপজেলার তালিমপুর, বর্নি ও সুজানগর ইউনিয়নের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। অব্যাহত ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে এ তিন ইউনিয়নের সমস্থ এলাকা বন্যায় তলিয়ে যায়। পরে নিজবাহাদুরপুর, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ, দাসেরবাজার, বড়লেখা সদর, দক্ষিণভাগ উত্তর ও উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নে বন্যার বিস্তৃতি ঘটে। ক্রমশ বন্যার অবনতিতে উপজেলার শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে থাকেন। এসব দুর্গত মানুষের মাঝে প্রশাসন সরকারীভাবে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও সংগঠন দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে এগিয়ে আসে। কিন্তু বে-সরকারী উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের সাথে কোন সমন্বয় না থাকায় সবাই প্রায় একই এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন। এতে হাকালুকি হাওরপাড়ের প্রকৃত অনেক দুস্ত পরিবার ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা গ্রামের পারভিন বেগম, জাকির হোসেন, জুয়েল আহমদ জানান, আমরা গরীব মানুষ, প্রায় দেড় মাস ধরে বাড়ির চতুর্দিকে পানি ঢুকছে। পানির ঢেউয়ে ঘর-দোয়ার বেশির ভাগ ভেঙ্গে গেছে। নৌকা নেই, ত্রাণ আনতে যাব, তাই একবারও আমাদের ভাগ্যে ত্রাণ জুটেনি।

সুজানগর ইউনিয়নের রাঙ্গিনগর গ্রামের লোকমান মিয়া জানান, গ্রামের ভেতরের এমন অনেক দুর্গত পরিবার রয়েছে যারা একবারও সরকারী কিংবা বেসরকারী ত্রাণ পায়নি। তবে রাস্তার পাশের অনেক রয়েছেন যারা ২-৩ বার করে চাল, ডাল, আলুসহ বিভিন্ন সাহায্য পেয়েছে। অনেকে নৌকা নিয়ে ত্রাণ দিতে আসেন, তবে ঘুরে ফিরে একই লোক ত্রাণ পাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জনপ্রতিনিধি জানান, ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই ত্রাণ দিতে যোগাযোগের সুবিধাজনক স্থানকে প্রাধান্য দেন। তারা রাস্তার পাশের লোকজনকে প্যাকেটজাত ত্রাণ দিয়ে কিছু ছবি ও সেলফি তুলেই ফিরে যান। বেশির ভাগ বে-সরকারী ত্রাণ একই এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছে।

ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, উপজেলার ৯ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সরকার শতভাগ দুর্গতকে সহায়তা দিতে পারবে না। তবে এ পর্যন্ত সাড়ে ৪ শ’ মেট্টিক টন চাল ও ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বে-সরকারী সংস্থা ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণকারীরা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় রাখছেন না। সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা নিলে বেশি মানুষ উপকৃত হতো।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com