বড়লেখায় পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মৃত্যু : সহ¯্রাধিক ঘর বাড়ি হুমকিতে শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ভয়াবহ জলাবদ্ধতা
আব্দুর রব॥ মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধ্য ডিমাই গ্রামে পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
১৭ জুন শনিবার রাত সাড়ে তিনটায় বসতঘরের উপরের একটি টিলা ধসে পড়লে তারা মাটি চাপা পড়েন। সকাল সাড়ে ছয়টায় এলাকাবাসী তাদের লাশ উদ্ধার করেন। শনিবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ডিমাই, বোবারথল, তেরাদরম, কাশেমনগর, বিওসি কেছরিগুলসহ বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় টিলা ধসে রাস্তা-ঘাট বন্ধ হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে পাহাড়-টিলার পাদদেশে ঝুকি নিয়ে বসবাসকারী সহ¯্রাধিক ঘর-বাড়ি ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে।
প্রভাবশালীরা অবাধে পাহাড় টিলা কেটে মাটি বিক্রি এবং খাল নালা ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা তৈরীর মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করায় অব্যাহত পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। আর নির্বিচারে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস ও এর প্রভাবে অনাকাংখিত দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় অনেকেই স্থানীয় প্রশাসন, রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করেছেন।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতের টানা বর্ষণ আর আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে রাত সাড়ে তিনটায় মধ্যডিমাই (বতাউরা) গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের বসত ঘরের উপর টিলা ধসে পড়ে। এতে মৃত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী আফিয়া বেগম ও মেয়ে ফাহমিদা বেগম (১৩) মাটি চাপা পড়েন। ২০০৫ সালে আব্দুস সাত্তারও মাটি চাপায় মারা যান। পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হওয়ায় ও অবিরাম বর্ষণের কারণে দমকল বাহিনী ও পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌছতে না পারায় উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হয়।
১৮ জুন রোববার সকাল সাড়ে ছয়টায় এলাকাবাসী নিহত মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করেন। বড়ছেলে ফাহিম হোসেন (১৪) নানা বাড়িতে থাকায় সে প্রাণে বেঁচে যায়। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ) রওশনুজামান সিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মোহাম্মদ আবু ইউসুফ, থানার ওসি মোহাম্মদ সহিদুর রহমান।
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সিরাজ উদ্দিন জানান, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। ডিমাই এলাকায় অসংখ্য ঘর ধসে পড়েছে। তবে মানুষ সতর্ক থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। টানা বর্ষণ আর ঢলে এলাকার অন্তত ১০০ ঘরবাড়ি ধসে পড়ার হুমকিতে রয়েছ।
দুর্গম পাহাড়ি এলাকার অপর ওয়ার্ড মেম্বার সৈয়দ লুৎফুর রহমান জানান, শনিবার রাতের ভারি বর্ষণে উত্তর ডিমাই এলাকার ৪০ টি বসতঘর বিধস্ত হয়েছে। রাস্তার উপর টিলা ধসে পড়ে জনসাধারণের যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ৩০০-৪০০ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এদিকে টানা ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে বড়লেখা পৌরশহরের রাস্তাঘাট, দোকানপাটসহ অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। দোকানপাটে পানি ঢুকে কয়েক কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। পৌরসভা কার্যালয়, সদর ইউনিয়ন কার্যালয়, নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রী কলেজ, শহরের উত্তর চৌমুহনা, পাখিয়ালা, হাটবন্দ, বারইগ্রামে তীব্র জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কুলাউড়া-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাছিরপুর, হাতলিয়া, দক্ষিণভাগ, রতুলী, কাঠালতলী, পানিধারসহ ১০টি স্পটের সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। অবিরাম বর্ষণ আর যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় মারাত্মক দুর্ভোগে পড়ে চলমান ডিগ্রী পরীক্ষার্থী ও সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অনেকেই মাঝপথে আটকা পড়ে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহান। এছাড়া উপজেলার প্রতিটি গ্রামের অসংখ্য রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘর তলিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তাবায়ন কর্মকর্তা আজাদের রহমান জানান, দুর্গম এলাকায় ঝুকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি আরো বলেন অব্যাহত বর্ষণের কারণে উদ্ধার কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) মোহাম্মদ আবু ইউসুফ জানান, নিহতের স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে পোস্ট মোর্টেম ছাড়াই লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে ইউএনও এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের ঝুকিপুর্ণ এলাকা ছেড়ে নিরাপদে সওে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। কিন্ত তারা কেউই সরেনি। দুর্ঘটনায় মা-মেয়ের মৃত্যু হলেও এই পরিবারের একমাত্র ছেলে নানা বাড়ি থাকায় সে বেঁচে গেছে। তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।
মন্তব্য করুন