বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই : বড়লেখা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ

June 29, 2017,

আবদুর রব॥ বড়লেখায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কে ঝুকি নিয়ে এতদিন ২-৪টি যানবাহন চলাচল করলেও সড়কে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ৩ সপ্তাহ ধরে উপজেলার ৫ ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। ঘর-বাড়ি নিমজ্জিত হয়ে রান্ন্াবান্না করার মতো শুকনো কোন জায়গা না থাকায় লোকজন সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া গৃহহীন মানুষগুলো এখনও সরকারী ত্রাণ সহায়তা পায়নি। দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে উপজেলার তালিমপুর ও বর্নি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের শতভাগ ঘরবাড়ির আঙ্গিনা, বসতঘর  ২ থেকে ৫-৬ ফুট পর্যন্ত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকতে দেখা গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় বাজার-হাট করাও তাদের সম্ভব হচ্ছে না। হাজার হাজার পানিবন্দী মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় এখনও সরকারী ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি বলে লোকজন অভিযোগ করেন। রান্না করার মতো কোন শুকনো জায়গাও অবশিষ্ট নেই। এরমধ্যে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

সুজানগর ইউনিয়নের ছিদ্দেক আলী বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানরত ভোলারকান্দি গ্রামের খেলারুন বেগম, মনোয়রা বেগম ও লালী বেগম বলেন, ‘১১দিন থাকিয়া ই-স্কুলে আছি। গত রাইত (রাত) আফালে (তুফানে) আমার বাড়ির ঘর, টিন আওরে (হাওরে) উড়াইয়া নিছেগি (নিয়ে গেছে) আইজ (আজ) খবর আইছে গ্রাম থাকি। হুরুতার বাবা (সন্তার বাবা) গেছইন দেখাত। খুব বেশি আফাল (তুফান) দিছে। মাইনসে (মানুষে) আইয়া কইরা সব ভাসাইয়া নেরগি। ই-খানো খানির (খাবারের) সমস্যায় আছি। আশ্রয় কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত হুইপ সাবের ৫’শ টাকা, লুঙ্গি, সেমাই, চিনি, তেল, পিআই’র (পিআইও) ৫’শ টাকা আর ইউএন (ইউএনও) সাহেবের কিছু চিড়া, মুড়ি ছাড়া এখন পর্যন্ত সরকারি কোন সায্য (সাহায্য) পাইছি না। খুব কষ্টে আছি আমরা।’

এদিকে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০টি, প্রাইমারী পর্যায়ের ৩৬টি ও মাদ্রাসা পর্যায়ে ৭ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। কোন কোনটির মাঠ ছাড়াও স্কুলের শ্রেণী কক্ষ, অফিস রুম তলিয়ে গেছে। কাল শনিবার ঈদের বন্ধ শেষে প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে। ৬ জুলাই থেকে অর্ধবার্ষিক ও প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণার চিন্তা ভাবনা করছে।

তালিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস জানান, তার ইউনিয়নের সবক’টি গ্রামের ঘরবাড়ি বন্যায় তলিয়ে গেছে। গত তিন দিন বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও বৃহস্পতিবার ভোরের বৃষ্ঠিতে পানি বাড়তে থাকে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। রান্না করে খাওয়ারও কোন জায়গা শুকনো নেই। দুর্গত মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। এখনও আশানুরূপ সরকারী সাহায্য সহযোগিতা মিলেনি।

বড়লেখা বাস-মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম বড়লেখা-মৌলভীবাজার সড়কে বাস সার্ভিস বন্ধের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঈদের পরদিন থেকে আমরা জেলা চাঁদনীঘাট মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ আনছার আলীর সাথে যোগাযোগ করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা ও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ি উল্টে যায়। এ পর্যায়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয়। যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দু একটি বাস নিজ দায়িত্বে সার্ভিস চালু রেখেছিল। কিন্তু রাস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তারাও সার্ভিস বন্ধ কওে দিয়েছে।

ইউএনও এসএম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘প্রতিদিনের বৃষ্টির কারণে হাওরে পানি বাড়ছে আর বসতি এলাকা নিমজ্জিত করছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩টি বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে মোট ১১৫টি দুর্গত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রেগুলো পরির্দশন করেছি। বন্যা দুর্গতদের জন্য ৩৯ মেট্রিক টন জিআর চাল ও জিআর ক্যাশ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। এগুলো দ্রুত বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া আরও বরাদ্ধের প্রাপ্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে।

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com