বড়লেখায় ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পৌর শহর নিমজ্জিত ছড়ার বাঁধ ভেঙ্গে ১৫ গ্রাম প্লাবিত : সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
আব্দুর রব॥ বড়লেখায় ৩ জুন শনিবার সকালের টানা ৪ ঘন্টার ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে পৌরশহরের সিংহভাগ এলাকা তলিয়ে গেছে। ষাটমা ছড়া ও মাধবছড়ার বাধ ভেঙ্গে শহরসহ উপজেলার অন্তত ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুপুর থেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। প্রভাবশালীরা শত বছরের পুরনো সরকারী-বেসরকারী খাল নানা দখল করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করায় প্রতিবছর অল্প বৃষ্টিতেই মারাত্মক জলাবদ্ধতা ও কৃত্রিম বন্যা দেখা দেয়।
সরেজমিনে বড়লেখা পৌরশহরের উত্তর চৌমুহনী, ডিগ্রী কলেজ রোড, সাতকরাকান্দি রোড, গঙ্গারজল রোড, হাটবন্দ, বারইগ্রাম রোডসহ প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা শনিবারের ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। দোকান পাটে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যবসায়ীরা মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। জলাবদ্ধতার শিকার কয়েক হাজার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। উপজেলা কমপ্লেক্সের আবাসিক ও কিছু প্রশাসনিক এলাকা, নারীশিক্ষা একাডেমি ডিগ্রী কলেজ চত্ত্বর বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে শহরের উত্তর দিকে প্রবহমান ষাটমা ছড়ার বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম করায় শনিবারের বর্ষণে বাধ ভেঙ্গে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকের আইলাপুর, আদিত্যের মহাল, দত্তের মহাল, চক ও বারইগ্রাম এলাকার বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। সাবেক ইউপি মেম্বার আব্দুল মান্নান জানান, সংশ্লিষ্ট পৌর কাউন্সিলর ষাটমা ছড়ার বাধ নির্মাণে চরম অনিয়ম করায় বর্ষা আসার আগেই তা ভেঙ্গে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোয়াচ্ছেন। উপজেলার পানিধার, মূছেগুল, কাঠালতলী, রোকনপুর, দোহালিয়া, কুইয়ারীটিলা, পুর্ব দক্ষিণভাগ ও দক্ষিণ গাংকুল গ্রামের কয়েকশ বাড়িঘর বন্যায় তলিয়ে গেছে। কাঠালতলী প্রাইমারী স্কুলের পাশের জনৈক নুরুজ আলী, আব্দুন নুর ও মোক্তার আলী বাড়ির সামনের নালা বন্ধ করায় তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্ঠি হয়েছে।
শনিবারের ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাননি জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপি, বড়লেখা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ।
দুপুরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাতলিঘাট, দক্ষিণভাগ, কাঠালতলীবাজার, পানিধার, রেলওয়ে গেইট, উত্তর চৌমুহনী এলাকার অন্তত ৬ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মাঝপথে আটকা পড়ে গন্তব্যে পৌছতে না পেরে অনেকে মারাত্মক সমস্যায় পড়েন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল সাড়ে ৫টায় এ সড়কে হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিন জানান, অনেক সরকারী-বেসরকারী খাল নালা প্রভাবশালীরা দখলে নেয়ায় পানি নিষ্কাষনের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবছর অল্প বৃষ্ঠিতে দেখা দেয় মারাত্মক জলাবদ্ধতা। শত কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয় ফসল ও জনসাধারণের। এসব খাল-নালা পুনরুদ্ধার ব্যতিত কৃত্রিম বন্যা রোধ সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন