বড়লেখায় মামলা চলমান রেখে শিক্ষকদের বেতন প্রদানে হাইকোর্টের রোল জারি
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ বড়লেখায় আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত মোহাম্মদনগর বাজার কমিউনিটি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকদের বেতন প্রদান করায় হাইকোর্ট সংশি¬ষ্টদের বিরুদ্ধে রোল জারি করেছেন। স্কুলের ভুমিদাতা আব্দুল জব্বার বদইর দায়েরকৃত দুটি মামলা চলমান অবস্থায় অভিযুক্ত শিক্ষকদের এম,পি,ও ছাড় দেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা অরবিন্দ কর্মকার। এ ঘটনায় তিনি হাইকোর্টে রীট পিটিশন করেন।
জানা গেছে, উপজেলার মোহাম্মদনগর বাজার কমিউনিটি প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের উপর দুটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা দুটি আদালতে দায়ের করেন স্কুলের ভুমিদাতা আব্দুল জব্বার বদই। তিনি ২০১৩ সালে সহকারি জজ আদালত মৌলভীবাজারে প্রথম মামলা (নং-০২/১৩ স্বত্ত) দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত ২০১৬ সালের ৩১ মে রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আদালত ২০০৫ সালে যে ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল সে কমিটিকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন এবং কমিটি কর্তৃক ২০০৫ সাল থেকে সংঘটিত সকল কার্যক্রম অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। উক্ত বিদ্যালয় নিয়ে ১ থেকে ৬ নং বিবাদীগণ যাতে কোনো কার্যক্রম চালাতে না পারেন তৎমর্মে তাদেরকে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দ্বারা বারিত করেন। উলে¬খ্য, ৬ নং বিবাদী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বিবাদীগণ ৭ সেপ্টেম্বর রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করলে আদালত রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করেন। মামলার বাদি চলিত বছরের ১৩ এপ্রিল উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করিলে মহামান্য হাইকোর্ট জেলা জজ আদালতের আদেশটি ৪ মাসের জন্য স্থগিত করেন। স্থগিতাদেশের সার্টিফাইড কপি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রদান করা হলেও ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অরবিন্দ কর্মকার অভিযুক্ত শিক্ষকদের বেতন ভাতা ছাড় দেন।
দ্বিতীয় মামলাটি জমিদাতা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজেষ্টেট আদালত বড়লেখায় তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়টির কথিত সভাপতি বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে দায়ের করেন। ১৩ নভেম্বর ২০১৬ আদালত মামলার রায়ে আসামীদের নি:শর্ত খালাস প্রদান করেন। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে বাদী মহামান্য দায়রা জজ আদালতে আপিল (নং ১৪/২০১৭) করেন।
উলে¬খ্য, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবিক্ষণ ইউনিট, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা ভবন ঢাকা থেকে প্রেরিত ০৪.১২.২০০০ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপণের ১৭, ১৮ ও ১৯ নং দফায় স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয়া রয়েছে শিক্ষক নিয়োগে কোনো মামলা চলমান থাকলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাৎক্ষনিকভাবে এ ইউনিটকে অবহিত করবেন এবং মামলার রায়ের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ১৯ নং দফায় বলা হয় কোন শিক্ষক দেওয়ানী মামলায় জড়িত হলে তার এম,পি,ও স্থগিত করা হবে। অথচ ৩১.০৫.২০১৬ ইং আদালত মোহাম্মদনগর বাজার কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা স্বত্ত্বেও উক্ত বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষক রহস্যজনকভাবে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর সরকারি গেজেটভুক্ত হন।
মামলার বাদি আব্দুল জব্বার বদই জানান উপজেলা শিক্ষা অফিসে তিনি প্রথম থেকে অভিযোগ করলেও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তা আমলে নেননি। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা অরবিন্দ কর্মকার (আদালত কর্তৃক স্থায়ী নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত) মামলার তথ্য গোপন রেখে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৪ শিক্ষকদের গেজেটভুক্ত করেন।
নবনিযুক্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন জানান, তিনি এখানে যোগদানের আগে থেকেই এ ৪ শিক্ষকের বেতন ভাতা দেয়া হচ্ছে। হাইকোর্টে বাদির আপিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, আদালত সংশি¬ষ্টদের কারণ দর্শাতে আদেশ দিয়েছেন। বেতন ভাতা স্থগিত রাখার কোন আদেশ দেননি।
মন্তব্য করুন