বড়লেখায় লাল-সবুজের মর্যাদায় ৬ ‘বীর নিবাস’ ২০ ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাঁচতলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায়
আবদুর রব॥ বড়লেখার ৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে লাল-সবুজের মর্যাদায় ‘বীর নিবাস’ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে দেশ, জাতি ও মানবকল্যাণে ঝাঁপিয়ে পড়া অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে ও কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের অংশ হিসেবে ‘বীর নিবাসগুলো’ তৈরি করে দেয়া হয়। এছাড়া ২০জন অস্বচ্ছ্বল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধার বাসস্থানের জন্য পাঁচতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
বড়লেখা উপজেলায় অস্বচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লাল-সবুজের মর্যাদায় দৃষ্টিনন্দন ৬টি বাসস্থান ‘বীর নিবাস’ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে এ বছরের মার্চে।
২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ৬টি ভবনের চাবি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন জাতীয় সংসদের হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বড়লেখা উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় অস্বচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান বীরনিবাস নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় ছয়টি বীর নিবাস তৈরি করেছে। প্রতিটি বীর নিবাসে রয়েছে ২টি বেডরুম, ১টি করে ড্রয়িং রুম, রান্নাঘর, বাথরুম এবং ১টি টিউবওয়েল ও ১টি পোল্ট্রি শেড। এই ছয়টির মধ্যে পাঁচটির প্রতিটি বীর নিবাসের নির্মাণ খরচ হয়েছে ৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৮৭ টাকা। অপরটিতে ব্যয় হয়েছে ৯ লাখ ৯ হাজার ৯৬২ টাকা। এলজিইডি বীরনিবাস নির্মাণ কাজের বাস্তবায়ন করেছে।
বড়লেখা উপজেলায় বীরনিবাস প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা হলেন দাসেরবাজার ইউনিয়নের লঘাটি গ্রামের ছালেহ আহমদ লুলু, সদর ইউনিয়নের মহদিকোনা গ্রামের নেওয়ার আলী, উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল গ্রামের ইব্রাহিম আলী, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের সুজাউল গ্রামের আব্দুল লতিফ, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের আপ্তাব আলী এবং তালিমপুর ইউনিয়নের কানোনগো বাজারের ঋষিকেশ নাথ।
বছরের (২০১৫) ফেব্রুয়ারি ও মার্চের দিকে বীরনিবাসে নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শাহাব উদ্দিন।
কাজ শেষ হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ মাসে ৬টি বীর নিবাস মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। পরিবার পরিজন নিয়ে ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা এসব বীরনিবাসে বসবাস করছেন।
এছাড়া বড়লেখা উপজেলায় আরও একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে চারটি করে ফ্ল্যাট থাকবে। এগুলো ২০জন অস্বচ্ছ্বল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাকে দেয়া হবে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের বহুতল বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন নিমার্ণের কাজ এগিয়ে চলছে।
সরেজমিনে উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর শাহবাজপুর ইউপির কুমারশাইল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম আলীর বাড়িতে গেলে চোঁখে পড়ে সদ্য নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া লাল-সবুজ রঙে রঙিত ‘বীরনিবাস’। ‘বীরনিবাস’ নিয়ে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা মো. ইব্রাহিম আলীর সাথে। তিনি বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। শেষ বয়সে এ বসতবাড়ি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হুইপ শাহাব উদ্দিন এমপিসহ দেশবাসীর কাছে ঋণি হয়ে গেলাম।’
কথা হয় দাসেরবাজার ইউপির মুক্তিযোদ্ধা ছালেহ আহমদ লুলুর সাথে। তিনি বলেন, যুদ্ধ করেছিলাম জাতির-মান ইজ্জত রক্ষার জন্য। কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে যুদ্ধ করিনি। এই বাড়ি পাওয়ায় অত্যন্ত খুশি। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার পেয়ে গর্বিত আমি ও আমার পরিবার। জাতীয় পতাকার সাথে মিলিয়ে রং করা ঘরে বসবাস করবো এটা আমার ও পরিবারের জন্য সৌভাগ্যের।
বড়লেখা উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ ভূষণ পাল জানান, অস্বচ্ছল ও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নেয়া প্রকল্পে বড়লেখা উপজেলায় ছয়টি ‘বীরনিবাস’ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। ৬টি ভবনের কাজ শেষ হওয়ায় এগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
মন্তব্য করুন