বড়লেখায় সরকারী কাজে টিলার মাটি দিয়ে ভরাট হচ্ছে : জরিমানা আদায় করেও থামছে না টিলা কাটা
বড়লেখা প্রতিনিধি॥ বড়লেখায় ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে জরিমানা আদায় করেও থামানো যাচ্ছে না পাহাড় টিলা কাটা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০০৬ এর উপধারা ‘খ’ অনুযায়ী পাহাড় টিলা কাটা শাস্তিমুলক অপরাধ। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে অসাধু চক্র প্রাকৃতিক টিলার মাটি কেটে বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছে। প্রশাসন টিলাকাটা রোধে আগামীতে অর্থদন্ড নয়, কারাদন্ডের চিন্তা ভাবনা করছে।
উপজেলার প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন স্থানে নির্মিতব্য সরকারী অডিটোরিয়ামের ভিটা ভরাটের কাজ চলছে নিষিদ্ধ টিলার মাটি দিয়ে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মাটিবাহী যানবাহনের চালককে অর্থদন্ড প্রদানের মাধ্যমেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা সীমাবদ্ধ থাকায় বড়লেখায় বন্ধ হচ্ছে না পাহাড়-টিলা নিধনযজ্ঞ।
অব্যাহত টিলা কাটার ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট ও পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে পাহাড়ের সবুজ বনাঞ্চল। আবাসস্থল হারাচ্ছে বন্যপ্রাণী। অতিবর্ষণে ভুমি ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। হাতি, বাঘ, হরিণ, বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়ে বেরিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে এবং মানুষের উদ্বেগ-আতংকের কারন হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার মোহাম্মদনগর, ডিমাই, ছোটলেখা, কেছরিগুল, শাহবাজপুর, মূছেগুল, জামকান্দিসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ঘুরে অবাধে পাহাড় টিলা কেটে মাটি বিক্রি চলতে দেখা গেছে। সুত্রমতে, উপজেলায় দেড় শতাধিক ট্রাক-ট্রাক্টর নির্বিচারে পাহাড় টিলা কাটায় নিয়োজিত। টিলার অবৈধ মাটি পরিবহনে নিয়োজিত অধিকাংশ ট্রাক্টরের নেই বৈধ কাগজপত্র ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এরপরও প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ যানবাহনে চলছে সরকারী বেসরকারী ভিটা ভরাটের কাজ। মোহাম্মদনগরে ফারুক আহমদ নামে এক ব্যক্তি ৫-৬ জন শ্রমিক নিয়ে বিশাল টিলা কাটতে দেখা গেছে। আব্দুল হান্নানের বসত বাড়ি সংলগ্ন বিশাল টিলা কেটে ট্রাক্টর লোডকালে চালক নিজের নাম আব্দুল হাসিব দাবী করে জানান, ট্রাক্টরের মালিক আব্দুল আজিজ। মোহাম্মদনগর বাজারের আব্দুর রাজ্জাক ও ময়নুল ইসলাম তাদের মার্কেট সম্প্রসারনের জন্য পূর্বদিকের নিচু জায়গা ভরাট করতে মালিকের সাথে কনটাক্ট করেছেন। এজন্য তিনি শ্রমিক নিয়ে টিলা কাটছেন। ড্রাইভার আরো জানান, এ এলাকায় আব্দুল মজিদ, বদরুল ইসলাম, আতিক মিয়াসহ ৫-৭ জন মালিকের ট্রাক্টর টিলার মাটি কেটে বিক্রি করছেন।
উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের উত্তর দিকে নির্মিতব্য অডিটোরিয়ামের মাটি ভরাটের কাজ চলছে টিলার মাটি দিয়ে। উত্তর মূছেগুল এলাকার আব্দুল মালিক, আব্দুল মনাফ, আবু হাসান, সিপার আহমদ, ছাদ উদ্দিন, আব্দুল লতিফ প্রমূখ জানান, পৌরসভার জনৈক মহিলা কমিশনার ও সদর ইউনিয়নের এক ইউপি মেম্বার ঠিকাদারের সাথে ট্রাক্টর প্রতি ১ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারন করে সরকারী অডিটোরিয়ামের ভিটা ভরাটের চুক্তি করেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় তারা উত্তর মূছেগুল ও ডিমাই এলাকার পাহাড় টিলা ধ্বংস করে এবং জনসাধারনের চলাচলের রাস্তা নষ্ট করে মাটি ভরাট করছেন।
ইউএনও এসএম আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, চলিত মাসে টিলার মাটি পরিহনের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালত পৌরশহরে এক ট্রাক্টর চালককে ৫০ হাজার টাকা এবং সীমান্তর্তী শাহবাজপুর এলাকায় অপর ব্যক্তিকে আরো ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। মোবাইল কোর্ট চলার ২-৪ দিন টিলা কাটা বন্ধ রাখলেও অসাধু চক্রটি পুনরায় শুরু করে দেয়। টিলাকাটা রোধে প্রশাসন আগামীতে অর্থদন্ড নয়, কারাদন্ড দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। টিলার মাটি দিয়ে সরকারী অডিটোরিয়ামের ভিটা ভরাটের ব্যাপারে তিনি জানান, নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ চাইলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। স্থানীয় প্রশাসন হিসেবে তার পক্ষে ভ্রাম্যমান আদালত ব্যতিত অন্য কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।
পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী জানান, পৌরশহরে ট্রাক্টরে টিলার মাটি পরিবহন সম্পুর্ণ নিষেধ স্বত্ত্বেও অসাধুরা দিনে দুপুরে মাটি পরিবহন করছে। এ নিয়ে এলাকায় প্রায়ই আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।
মন্তব্য করুন