বড়লেখায় ৫০টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী

June 21, 2017,

বিশেষ প্রতিনিধি॥ মৌলভীবাজারের বড়লেখায় গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প¬াবিত হয়েছে। এতে এসব ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ঘরে পানি ঢুকায় স্থানীয় স্কুলগুলোতে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ৩০টি পরিবার। অনেকেই আবার উঁচু এলাকায় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া এসব ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক এখনও পানির নিচে রয়েছে। ফলে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওর সংলগ্ন বর্ণি, তালিমপুর, সুজানগর ও দাসেরবাজার ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার অন্তত ৫০টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এরমধ্যে সুজানগর ইউনিয়নের দশঘরি, রাঙ্গিনগর, বাড্ডা, ঝগড়ি, পাটনা, ভোলারকান্দি, উত্তর বাঘমারা, তালিমপুর ইউনিয়নের হাল¬া, ইসলামপুর, কুটাউরা, বাড্ডা, নুনুয়া, পাবিজুরি, শ্রীরামপুর, মুর্শিবাদকুরা, পশ্চিম গগড়া, পূর্বগগড়া, বড়ময়দান, গাগড়াকান্দি, তেলিমেলি, গোপালপুর, হাউদপুর, বর্ণি ইউনিয়নের পাকশাইল, সৎপুর, কাজিরবন্দ, নোওয়াগাঁও, উজিরপুর, দাসেরবাজার ইউনিয়নের চানপুর, অহিরকুঞ্জি, উত্তরবাগীরপাড়, দক্ষিণবাগীরপাড়, পানিশাইল, ধর্মদেহী, চুলারকুড়ি, কোদালী, ধলিরপাড়, নেরাকান্দি, মাইজমজুড়ি, মালিশ্রী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২০ জুন মঙ্গলবার সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামগুলোর অধিকাংশ বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত। অনেক গ্রামীণ সড়ক পানির নিচে। এছাড়া ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় সুজানগর ইউনিয়নের ভোলারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিমগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় ও দ্বিতীয়ারদেহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ে প্রায় ৩০টি পরিবারকে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। এদিকে আবারো বৃষ্টি হলে পানি বাড়াসহ বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া বড়ময়দান গ্রামের ময়তুন বেগম, কামাল হোসেন, কাইয়ুম আহমদ, মুর্শিবাদকুরা গ্রামের জাকির হোসেন, আলতাফ হোসেন, বাবুল উদ্দিন বলেন, ‘অকাল বন্যায় আগে ধান-মাছ মরেছে। এখন কয়েকদিনের মেঘে (বৃষ্টিতে) আবার পানি বাড়ায় ঘরের ভিতরে কমর (কোমর) সমান পানি। গরু-ছাগল লইয়া ই-স্কুলে (বিদ্যালয়ে) আশ্রয় নিছি (নিয়েছি)। যতদিন পর্যন্ত পানি কমছে না, অতদিন পর্যন্ত বাড়িত যাওয়া যাইত নায়। ওখান থাকা (আশ্রয় কেন্দ্রে) লাগব। ঘরে খানি (খাবার) নাই। কার কাছে যাইতাম। কারে গিয়া কইতাম। বড় বিপদের মাঝে আছি। ’ বড়ময়দান গ্রামের বাসিন্দা জিতেন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘বন্যার পানিতে ঘর অর্ধেক ডুবি গেছে। বউ-বাচ্চারে শ্বশুর বাড়ি পাঠাই (পাঠিয়েছি) দিছি। নিজে কোনমতে অন্যের বাড়িত আশ্রয় নিছি। মেঘ (বৃষ্টি) আরও দিলে পানি বাড়ব।’ এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম আব্দুল¬াহ আল মামুন ২০ জুন মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, ‘গত কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিতে হাওরের পানি বাড়ছে। ফলে নি¤œাঞ্চল প-াবিত হয়ে মানুষের বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। এখন পর্যন্ত ৩০টি পরিবার নিরাপদে বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার, স্যালাইন, নগদ ৫০০ টাকা ও বিনামূল্যের ১০ কেজি করে চাল বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com