বড়লেখা পৌরসভার এডিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৌশলী-ঠিকাদারের গাফিলতি অর্ধকোটির টাকার প্রকল্প সম্পন্নের মেয়াদ শেষেও শুরু হয়নি কাজ : চরম জনভোগান্তি
আবদুর রব॥ বড়লেখা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলীর উদাসীনতা আর ঠিকাদারদের গাফিলতিতে অর্ধকোটি টাকার ৯ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের নির্ধারিত সময় অতিক্রান্তের পরও কাজই শুরু হয়নি। ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের এসব প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের সর্বশেষ তারিখ অতিক্রান্ত হয় ২ মার্চ। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) গুরুত্বপূর্ণ এসব কাজ বাস্তবায়িত না হওয়ায় পৌরবাসী পড়েছেন মহা-ভোগান্তিতে। পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলীর নিকট বারবার ধরনা দিয়ে উন্নয়ন কাজের লে-আউট ও ইস্টমিট না পাওয়ায় কাজ শুরু করতে পারেননি বলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা অভিযোগ করেন। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করতে পৌর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি প্রদান করছে।
নির্ধারিত সময় অতিক্রান্তের পরও বাস্তবায়ন না হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে বড়লেখা হাজীগঞ্জ বাজারের স্টেশন রাস্তা আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন, বাঁশতলা সিএন্ডবি হতে পচাই মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত সিসিকরণ, হাটবন্দ কটির বাসা হতে নাজমার বাসা পর্যন্ত ড্রেন নিমার্ণ, ফকিরশাহের মোকাম রাস্তা সিসি দ্বারা উন্নয়ন, মুড়িরগুল আব্দুল মুতলিব, পানিধার অরিরাম করের বাড়ির সামনের রাস্তা সিসিকরণ ও ৩টি স্থানে কালভার্ট নির্মাণ, মহুবন্দ আজিমগঞ্জি বাসা হতে মৌলানা আব্দুল মুতলিবের বাসা পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণ, আহমদপুর রফিক হাজী ও এডিসি জনাব হারুনের বাড়ির সামনের রাস্তা সিসিকরণ।
পৌরসভা ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরের (দরপত্র বিজ্ঞপ্তি নং-৫) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের ১১ উন্নয়ন কাজের টেন্ডার আহবান করা হয় বছরের ৯ জুন। প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদার নির্বাচনের পর নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে ২টি উন্নয়ন কাজ কোনমতে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চরম উদাসীনতা আর গাফিলতিতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার অন্য ৯ প্রকল্প আজও আলোর মুখ দেখেনি। গুরুত্বপূর্ণ এ কাজগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় পৌরবাসীকে চরম জনভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড (এনওএ) মোতাবেক ঠিকাদারদের কাজ শুরুর কথা চলতি বছরের ২ জানুয়ারি এবং সমাপ্তের সর্বশেষ তারিখ ২ মার্চ। নিয়ম অনুয়ায়ী টেন্ডার গ্রহণের পর উক্ত টেন্ডারের বৈধতার মেয়াদ ১২০ দিন। কিন্তু ৯ মাস অতিবাহিত হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ সম্পন্নতো দূরের কথা, শুরুই করেনি।
সূত্র জানিয়েছে এই সকল টেন্ডারে অঠিকাদার ব্যক্তিরা অন্যের লাইসেন্সে অংশগ্রহণ করে কাজগুলো পেয়ে থাকেন। এসব কাজ প্রকৃত ঠিকাদারের নামে নেয়া হলেও তারা এর দায়িত্বে থাকেন না। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে শুধুমাত্র তাদের লাইসেন্সগুলো ব্যবহার করা হয়। যার ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও ঠিকাদারদের কাজের চাপ দেয়নি।
পৌর শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র স্টেশন রোড এলাকার রাস্তার উন্নয়ন কাজে স্থবিরতার ফলে বেড়েছে ভোগান্তি। অল্প বৃষ্টিতে ড্রেনের ময়লা পানি আর কাঁদায় সয়লাব রাস্তায় জনসাধারণের চলাচলে পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। সরেজমিনে ফকিরশাহের মোকাম রাস্তা, মুড়িরগুল, হাটবন্দসহ বাস্তবায়ন না হওয়া প্রকল্পগুলো ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কাথা বলে জন ভোগান্তির এসব তথ্য ও চিত্র পাওয়া গেছে।
স্টেশন রোড এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘স্টেশন রোড এলাকা বড়লেখা হাজীগঞ্জবাজারের ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দু। রাস্তাটির পাকাকরণ কাজের টেন্ডার অনেক আগে হয়েছে শুনেছি। কিন্তু কাজের বেলায় কোন অগ্রগতি দেখছি না। শুধু আজ, কাল হবে বলে আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন আমরা নজিরবিহীন কষ্ট করছি।’
বাঁশতলা রাস্তা উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মখলিছুর রহমান জানান, কাজের অনুমতি পেয়েছি মাত্র দেড়মাস আগে। কাজের লে-আউটের জন্য প্রকৌশলীর কাছে কয়েকবার ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়েছি। লে-আউট করলে কাজটি দ্রুত শুরু করবেন।’ ফকির শাহের মোকাম রাস্তা উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মহিউদ্দিন আহমদ গুলজার বলেন, ‘টেন্ডার হওয়ার পর মধ্যখানে ইঞ্জিনিয়ারকে পাওয়া যায়নি। তাই অফিসিয়াল কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করতে পারিনি।’
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জেহীন সিদ্দিকী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সঠিক সময়ে হাটবন্দ কটির বাসা হতে নাজমার বাসা পর্যন্ত ড্রেন নিমার্ণ না করায় ড্রেনের জায়গা বেদখল হচ্ছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতে সড়কে পানি উঠছে। এতে জনগণকে চরম কষ্ট করতে হচ্ছে।’ অপর এক ঠিকাদার জানান, কাজের ইস্টিমিটের জন্য তিনি সহকারী প্রকৌশলীর নিকট ৪ বার গিয়েও তাকে পাননি। এজন্যই তিনি নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে পারেননি।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী নূরুল আলম জানান, ১১ প্রকল্পের দুটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য কাজগুলো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দ্রুত কাজ সম্পন্নের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না করেন তবে তাদের বিরুদ্ধে বিধিমালা (পিপিআর) অনুয়ায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্তব্য করুন