বড়লেখা হাসপাতালে ডিউটি ফাঁকি দিয়ে মেডিক্যাল অ্যাসিষ্ট্যান্ট বাসায় : ইমার্জেন্সিতে ঘুমে মগ্ন ঝাড়–দার : ঔষধ ভান্ডারের দায়িত্ব পালন করছে জুনিয়র মেকানিক !
আবদুর রব॥ বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই জটিল রোগে ভোগছে। জুনিয়র মেকানিক চালাচ্ছে হাসপাতালের ঔষধ ভান্ডার। চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ডাক্তারসহ কর্মচারী কর্তৃক রোগীদের হয়রানীর ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। সামান্য কাটা, ছেড়া, জখম হলেই রোগীকে “রেফার্ড টু এসওএমসিএইচ” (সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) লিখে ব্যবস্থাপত্র দিলেই যেন ডাক্তাররা হাপ ছেড়ে বাঁচেন। অবহেলা, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর দুর্ব্যবহারের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের সাথে প্রায়ই রোগী ও স্বজনদের উত্তেজনা এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। হয়রানীর এসব ঘটনায় ভূক্তভোগীরা একাধিকবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় এখন আর কেউ অভিযোগ দিতে আগ্রহী হন না। ফলে চিকৎসকরা নিজের খেয়াল খুশিমতো দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তাই নয়, এই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকলে নাইট গার্ডদের প্রায়ই ডাক্তারদের ভূমিকায়ও দেখা যায়। গেল বছরের ১৩ অক্টোবর জনৈক স্কুল শিক্ষিকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার ও সুইপারের অসদাচরণের ঘটনায় উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে। সে ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন জরুরী বিভাগের এ চিকিৎসক। এবার মধ্যরাতে ৩ মাস বয়সী শিশুকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট আশিষ কুমারকে ঘন্টাখানেক পর ঘুম থেকে তোলে চিকিৎসাসেবা নেয়ার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার ২ জানুয়ারী রাত অনুমানিক ১টায় গাজিটেকা গ্রামের আব্দুল হক তার ৩ মাসের শিশুকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তিনি হাসপাতালের ঝাড়–দার মৌলা মিয়াকে জরুরী বিভাগে শুয়ে মোবাইলে গেম খেলতে দেখেন। বিষয়টি তিনি স্থানীয় ফার্মেসির দুই ব্যবসায়িকে অবহিত করেন। ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা না পেয়ে ছুটে যান পৌরসভার প্যানেল মেয়র তাজ উদ্দিনের বাসায়। পরে তাজ উদ্দিন তার পরিচিত এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বাসায় ঘুমিয়ে থাকা মেডিক্যাল অ্যাসিষ্ট্যান্ট আশিষ কুমারকে ঘুম থেকে তোলে হাসপাতালে নিয়ে যান।
এ ঘটনায় প্যানেল মেয়র ফেসবুক আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোষ্ট করা স্ট্যাটাসে লিখেন-“বড়লেখা হাসপাতালে ডাক্তার না পেয়ে শিশু রোগী নিয়ে শিশুর বাবা আমার বাড়িতে রাত ১:২০ মিনিটে। ডাক্তার বাসায় ঘুমে আর নাইট গাড ইমার্জেন্সিতে ঘুমায়, গার্ড ডাক্তার ডাকবে তার সময় নাই।” খবর পেয়ে গভীর রাতে হাসপাতালে ছুটে যান স্থানীয় সাংবাদিক তপন কুমার দাস। তিনিও এ ঘটনায় তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে “হায় চিকিৎসা সেবা” শিরোনামে স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ওই চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন।
এর আগে বছরের ২৮ অক্টোবর দিলরুবা ইয়াছমিন (৩২) নামে স্কুল শিক্ষিকা রক্তাক্ত অবস্থায় রাত ১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মোবারক হোসেন পলাশ ও সুইপার সেজুল মিয়া চিকৎসার বদলে তাকে নিয়ে হাসি টাট্টা করেন। অনেক অনুণয়-বিণয়ের পর হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জয় সিংহ তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ব্যবস্থাপত্রে লিখেন “রেফার্ড টু এসওএমসিএইচ”। এ ঘটনায় তিনি ডাক্তার ও সুইপারের বিরুদ্ধে বড়লেখায় থানায় জিডি করেন।
মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জনৈক ময়নুল ইসলাম তার অসুস্থ আত্মীয়কে হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত ব্রাদার (পুরুষ নার্স) বিজন দাস রোগী ও ময়নুল ইসলামের সাথে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি ডিউটি ব্রাদারের অসদাচরনের বিষয়টি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ দাস ও সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদকে অবহিত করেন।
এদিকে ফার্মাসিষ্ট, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার অথবা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ছাড়া হাসপাতালের ষ্টোর (ঔষধের স্টক) ও ফার্মেসী বিভাগ চালানোর নিয়ম নেই। কিন্ত বৃহস্পতিবার হাসপাতালের জুনিয়র মেকানিক শাকির মিয়াকে ষ্টোরের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সুত্র নিশ্চিত করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আহম্মদ হোসেন জানান, ৩ মাসের শিশু রোগীর অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন বিকল্প না থাকায় জুনিয়র মেকানিককে দিয়ে ষ্টোর কিপারের দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন স্বীকার করে তিনি দাবী করেন এতে কোন সমস্যা ঘটবে না। এছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে বলেন, নতুন হাসপাতাল ভবনের কার্যক্রম শুরু হলে এরকম আর হবে না।
মন্তব্য করুন