ভারত সব পানি ছেড়ে দিয়েছে, এবারকার মতো বলে দেব, তারা ভবিষ্যতে এমনটি যেনো আর না করেন- ডা. শফিকুর রহমান

August 24, 2024,

স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন আসমান যেমন আল্লাহ তায়ালা দরজা খোলে দিয়েছিলেন বৃষ্টির জন্যে ঠিক ভারত আমাদেরকে একই সাথে সব পানির ছেড়ে দিয়েছিলো ভাসিয়ে দেওয়ার জন্যে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র আমরা ৫৩ বছর থেকে শোনে আসছি তারা আমাদের ঘনিষ্টতম বন্ধু। কিন্তু এবার তারা পানিটা ছাড়লো আমাদের একটু বললনা যে আমরা বাধ্য হয়ে পানি ছাড়ছি আপনারা একটু সর্তকতা অবলম্বন করবেন। এটা হলো প্রতিবেশীর শিষ্টচার। এবং এটা জেনেভা কনভেনশনেরও একটি অংশ। প্রতিবেশীদের নিয়ে আমাদের চলতে হবে। প্রতিবেশী বদলানো যায়না। ভারতকে এবারকার মতো বলে দেব, তারা ভবিষ্যতে আর করবেনা। করলে এদেশের জনগনকে নিয়ে প্রতিবাদ করবো।

জেলার রাজনগরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় মানুষের মাঝে শনিবার ২৪ আগষ্ট দুপুরে ত্রাণ বিতরণ পূর্বে বক্তব্যে তিনি আরও বলেন দেশে অল্প কয়েকদিনের মধ্যে একটি বিশাল পরিবর্তন এসেছে। সাড়ে ১৭ বছর জাতির ঘাড়ে দূর্বহ পাথরের বুঝা চাপিয়ে রাখা হয়েছিলো। আওয়ামীলীগের সাড়ে ১৫ বছর দু:শাসন। তাদের শাসন আমলে প্রথম আঘাত আসে দেশ প্রেমিক সেনাবাহির উপর। সেই বিডিয়ার সদর দপ্তর পিলখানায় নারকীয় হত্যাকান্ড। সেখানে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা অফিসারদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন হরণ করা হয়। মা বোনদের ইজ্জত লুন্টন করে তারপর তাদেরকে হত্যা করে ড্রেইনের মধ্যে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। মর্মান্তিক এই দৃশ্যের কষ্ঠ এখনো জাতি বয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এরপরে আঘাতটা এসেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর। আমাদের সেনাবাহিনী আমরা জানি দেশপ্রেমিক একটি বাহিনী। আর একটা দল মজলুমের, যার নাম হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই দল স্বার্থের জন্য আজ পর্যন্ত কারো কাছে মাথা নত করেনি। এটাই ছিলো জামায়াতের অপরাধ। সেনাবাহিনীর অফিসারদের মতো একই কায়দায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে প্রহসন করে তারা হত্যা করেছে। হত্যা করে আর্দশকে নিমূর্ল করা যায় না। আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে পঙ্গু করা হয়েছে। চাকু দিয়ে চোখ উপড়ে ফেলেছে। থানায় সুস্থ মানুষ ধরে নিয়ে মেঝেতে শুয়ায়ে গুলি করে দেহ থেকে পা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। আমরা এই কষ্ঠ গুলো বয়ে বেড়াচ্ছি। শুধুকি তাই হাজার মামলা, নেতাকর্মীদের জেলখাটানো,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা,লুন্টন চালানো হয়েছে। চাকুরী থেকে আমাদের লোকদের বরখাস্ত করা হয়েছে। বুলডোজার চালিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের গুম, খুন, ইজ্জত লুন্টনসহ যত কষ্ট দেয়া হয়েছে, আমরা কারো উপর প্রতিশোধ নেবনা।

আমাদের কলিজার ধন ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে ২০০৯ সালে শুরু হওয়া আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট এসে।

বিগত সরকার আমাদের সিঙ্গাপুর ও কানাড উপহার দিয়েছিলো। ওই উন্নয়নের জোয়ারে এখন বানের পানিতে দেশ ভাসছে। প্রতিবছর নদী শাসনের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়। কিন্তু কাজ না করে লুটপাট চালানোর কারণে জনগণ এর কুফল ভোগ করছেন। এখন দেখেন না বিভিন্ন জায়গায় পালাতে গিয়ে বস্তা নিয়ে পালায়। আর যে ভাবে এখন বন্যার তোড়ে মাছ ভাসছে এরকম  ওরাও এখন খালে বিলে ভাসতেছে। মানুষ মাছের মতো পলো দিয়ে তাদেরেকে ধরতেছে। কেনো এমন পরিনতি হলো।

কানাডা ও সিঙ্গাপুরের কোনো শাসককে বা তাদের  দোসরকেওতো এভাবে পালাতে দেখিনি। আপনারা পালালেন কেনো। আপনারা আমাদের নেতাদেরকে হত্যা করেছেন কিন্ত আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো নেতা দেশ থেকে পালাতে হয়নি। এটা আমাদের দেশ। আমাদের প্রথম ও শেষ ঠিকানা। আমাদের কোনো জেঠার দেশ নেই যে পালিয়ে যাবো। ৫ তারিখের আগে যারা দম্ব করে অহংকার করে বলতেন এটা আমাদের বাপদাদাদের জমিদারীর দেশ। কোথাও পালানোর প্রশ্নই উঠেনা। এখন আপনাদের কাছে জিজ্ঞাসা এখন আপনারা কোথায়।

বাংলাদেশের মানুষকে আপনারা দাস বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা দেশপ্রেমিক  ছাত্রসমাজ ও জনতা তা হতে দেয়নি। আইন নিজের হাতে নেওয়া যাবেনা। আওয়ামীলীগের মতো মানুষের সাথে অন্যায়ভাবে কোনো ধরনের জুলুমবাজি করা যাবে না। কোনো অপরাধ ও অপকর্ম নিজেকে জড়াবেন না। অবশ্যই চিহ্নিত অপরাধীদের বিচার করা হবে।

আন্তজার্তিক ট্রাইবুনাল কায়েম করা হয়েছিলো আমাদের নির্মূল করতে। এখন ওই ট্রাইবুনালেই তাদের বিচার হবে। এক জালিমের জুলুমবাজির দিন শেষে দেশে আর কোনো জুলমবাজ প্রতিষ্ঠা হবে এমনটি করতে দেওয়া হবে না।

সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক পশ্নের জবাবে বলেন, এই মুহুর্থে আমাদের রাজনীতি নির্বাচনের জন্য নয়। এখন বিপন্ন মানুষের পাশে দাাঁড়ানো ও শহীদ পরিবারে পাশে দাড়াঁনো। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দূর্ভোগে যারা আছেন তাদের অংশীদার হওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা।

জেলার রাজনগর কলেজ পয়েন্টের ত্রাণ বিতরণ ও পথসভায় রাজনগর উপজেলা জামায়াতের আমীর আবুর রাইয়ান শাহীন এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী মিছাবুল হাসানের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট জেলা (পশ্চিম) জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, সিলেট মহানগরীর আমীর মো: ফখরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার মো: শাহেদ আলী, সেক্রেটারী প্রিন্সিপাল মো: ইয়ামীর আলীসহ জেলা ও  উপজেলা  জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতৃবৃন্দ। ডা: শফিকুর রহমান জেলার রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জের বানভাসি অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com