“ভাষা সৈনিক-আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ এম.সাইফুর রহমান কর্ম ও জীবন দর্শন
মুজিবুর রহমান মুজিব: সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা শান্তি ও সম্প্রিতির ধর্ম মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধান মোতাবেক রুহ এর জগৎ-আলমে আরওয়া-থেকে হাসরের ময়দান পর্য্যন্ত মানবাত্বার ক্রম বিকাশের ধারার মধ্যে মায়াময় মাটির পৃথিবীর সময়টুকু ক্ষনস্থায়ী ও অনির্ধারিত। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে মৃত্যোর জন্যই জন্ম গ্রহণ করতে হয়। মানব জীবনে মৃত্যো অবধারিত-চীরন্তন ও শ্বাস্বত সত্য। বিধির এই বিধান অলংঘনীয়। আমাদের মহান ¯্রষ্টা ও প্রতিপালক দোজাহানের খালিক-মালিক সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা আসমানী কিতাব আল কোরআনে ঘোষনা করেছেন-“কুল্লুন নাফসিন জ্যায়িকাতুল মউত”জগতের সকল প্রাণীকেই একদিন মৃত্যোর সঙ্গেঁ আলিঙ্গঁন করতে হবে। আত্ব সমর্পন করতে হবে। মানুষ মরন শীল হলে ও একজন কর্ম বীর-একজন কাজের মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁর কাজের মাঝে। বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী প্রতিভা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে, মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই বলে- আকুতি প্রকাশ করলেও তিনি পরবর্তী পর্য্যায়ে বলেছেন- মরন রে তুহু মম শ্যাম সমান। কবিও দার্শনিক বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকার যে আকাংখা প্রকাশ করেছিলেন তা শারীরিক ছিল না, ছিল কাব্যি। একজন সৃজনশীল কাজের মানুষ তাঁর কর্ম ও জীবন দর্শনের কারনে অনেক দিন বেঁচে থাকেন। মানুষের মৃত্যো হলেও মানুষের সৃজনশীল গনমুখী কর্মকান্ডের ক্ষয় নেই মৃত্যো নেই। কথার মানুষ কাজের মানুষ কর্মবীর এম.সাইফুর রহমান বেঁচে আছেন তাঁর কাজের মাঝে। শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ নয়, দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সমকালীন সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতির ইতিহাসে বাংলাদেশের দীর্ঘকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ভাষা সৈনিক এম.সাইফুর রহমান একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব একটি বলিষ্ট নাম, একটি আত্বপ্রত্যয়ী প্রতিভা। ফটকাবাজি কিংবা লাগামহীন বক্তব্য নয়, তাঁর মেধা ও মনন, প্রজ্ঞা ও পান্ডিত্য অপূর্ব কর্ম দক্ষতা ও কর্ম ক্ষমতা, কঠোর পরিশ্রম অধ্যয়ন ও অনুশীলন এবং সর্ব্বোপরি অফুরান দেশ প্রেম ও সততা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজ জীবনকে বিকষিত করেছেন। আলোকিত করেছেন।
বৃটিশ ভারতের শেষ ভাগে ১৯৩০ সালের পাঁচই অক্টোবর তৎকালীন দক্ষিন শ্রীহট্টের সদর থানাধীন ঐতিহ্যবাহী বাহারমর্দ্দন গ্রামে একটি শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এম.সাইফুর রহমান এর জন্ম। তার শিক্ষানুরাগি পিতা আব্দুল বাছির একজন পেশাদার শিক্ষক ছিলেন তাঁর শিক্ষানুরাগি মাতা তালেবুন্নেছার অনুপ্রেরনায় বৃটিশ ভারতের মুসলিম সমাজের দূর্যোগ ও দূর্দিনের মাঝে ও বাল্য কৈশোর কালেই মেধাবী ছাত্র সাইফুরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার মানসে স্কুলে ভর্ত্তি করিয়ে দেন। কিন্তু দুঃখ ও দূর্ভাগ্য জনক ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা কালেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এম.সাইফুর এর শিক্ষাবিদ পিতা আব্দুল বাছির ইন্তেকাল করলে তিন পুত্র সন্তানকে নিয়ে দু’চোখে অন্ধকার দেখেন সাইফুর জননী বেগম তালেবুন্নেছা। বালক সাইফুর পরিবারের এমন কঠিন সময় ও ক্রান্তি কালে শিক্ষানুরাগি চাচা মোঃ সফি আন্তরিক ভাবে এগিয়ে এসে নিজ সন্তানের মতই তিন এতিম ভ্রাতস্পুত্রের শিক্ষা দিক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। নিজ গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা, নিকট প্রতিবেশী গ্রাম জগৎসীতে জগৎসী জি.কে.হাই স্কুল, যা বর্তমানে জি.কে.এম.সাইফুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজ নাম ধারন করেছে অধ্যয়ন শেষে ১৯৪৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে স্কুল ফাইন্যাল পাশ করেন- যা তখন এন্টার্স নামে অভিহিত হত। লেখাপড়ার প্রতি অধিক উৎসাহী থাকায় চাচা মোঃ সফি ভাতিজা সাইফুরকে উচ্চ শিক্ষার জন্য সিলেট মদন মোহন কলেজে ভর্তি করিয়ে দেন। বলা বাহুল্য তখন দক্ষিন শ্রীহট্ট মহকুমায় কোন কলেজ ছিল না। ১৯৫১ সালে ভালো ফল নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে সাইফুর রহমানকে তাঁর চাচা মোঃ সফি তাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি করিয়ে দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় যুবক এম.সাইফুর রহমান নূতন জীবনের সন্ধান পান। সরাসরি কোন ছাত্র সংঘটনের নেতা-কর্মি না হলে ও এম.সাইফুর রহমান ছিলেন রাজনীতি সচেতন-গনমুখী-দেশ প্রেমিক। মিটিং-মিছিলের চাইতে তিনি লেখাপড়ায় অত্যাধিক উৎসাহী হলেও ছাত্র রাজনীতির খুজ খবর নিতেন রাখতেন। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কৃতি ছাত্রদের মধ্যে শাহ.এ.এম.এস.কিবরিয়া, আবুল মাল আব্দুল মোহিত প্রমুখতার সম-সাময়ীক ছিলেন। সিলেটের এই দুই কৃতি পূরুষ সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে উচ্চ পদে আসীন হয়েছিলেন। দুজনেই দীর্ঘদিন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। এস.এ.এম.এস কিবরিয়া মর্মান্তিক গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছেন। এ.এম.এ.মোহিত অবসর জীবন যাপন করছেন। এম.সাইফুর রহমানের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের চরম সৌভাগ্য ও পরম পাওয়া বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ ও কারা বরণ। শিশু রাষ্ট্র পাকিস্তানের জনক ও শাসক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তৎকালীন প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় এসে ঘোষনা করেন- ÒUrdu and Urdu Shall be the state language of Pakistan” জিন্নার ঘোষনা-মানি না, মানব না- বলে তৎকালীন পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ প্রতিবাদী হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলেন। নবীন রাষ্ট্র পাকিস্তানে তখন ও রাজনৈতিক দল সমূহ বিকশিত হতে পারে নি-ফলতঃ আন্দোলনে সংগ্রামে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্র সমাজকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়েছে। সেই সময় ছাত্র সমাজের দুটি শক্তিশালী ছাত্র সংঘঠন ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়ন এর সংগ্রামী ভূমিকা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন-বাঙ্গাঁলি জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের চেতনার উন্মেষ ঘটায়। বায়ান্নে বাঙ্গাঁলির ভাষার সঙ্গেঁ জাতীয় কৃষ্টি সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য-স্বায়ত্ত শাসন ও স্বাধিকার এর প্রশ্নটিও নিহিত ছিল। বায়ান্নের রক্তের সিড়ি অতিক্রম করে জাতি ধাপে ধাপে স্বায়ত্ত শাসন ও স্বাধিকার আন্দোলনের পথে এগিয়েছে। এই আন্দোলনের একক নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন, বাঙ্গাঁলি জাতীয়তা বাদী আন্দোলনের আপোষহীন নেতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে বৃহত্তর সিলেটের কৃতি পূরুষদের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান ইতিহাসের অংশ। দক্ষিনশ্রীহট্ট অঞ্চলের ভাষা সৈনিকদের মধ্যে এম.সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ ইলিয়াস, (স্বাধীনতার সংঘটক, সাবেক সাংসদ, মরহুম), সৈয়দ আকমল হোসেন, আব্দুল মূঈদ চৌধুরী এবং সদ্য প্রয়াত বেগম রওশন আরা বাচ্চুর নাম উল্লেখযোগ্য। এম.সাইফুর রহমান ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতঃ গ্রেপ্তার হয়ে কারা যাতনা ভোগ করেন। তিনি নতি স্বীকার কিংবা মুচলেকা প্রদান করতঃ মুক্তি চান নি কারা যাতনা শেষে আইনী লড়াইর মাধ্যমে তিনি মুক্তি লাভ করেছিলেন এ ব্যাপারে তাঁর বৃদ্ধ ও অসুস্থ চাচা মোহাম্মদ সফি’কে অনেক দৌড় ঝাপ দিতে বেগ পেতে হয়েছে। তাঁর আত্ব জীবনী হাক্কানী পাবলিশার্স প্রকাশিত কিছু কথা, কিছু স্মৃতি-গ্রহ্ণে এ ব্যাপারে বিষদ বর্ণনা আছে। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বানিজ্যে ¯œাতক ডিগ্রী অর্জনের পর এম.সাইফুর রহমান ব্যারিষ্টারি অধ্যয়নের জন্য বিলেত গমন করেন। ৫৯ সালে কৃতিত্বের সাথে সি.এ.ডিগ্রী অর্জন করেন। তখন দেশে চাটার্ড একাউন্টদের সংখ্যা হাতে গুনা কয়েক জনমাত্র। মেধাবী ছাত্র এম.সাইফুর রহমান সফল শিক্ষা জীবন শেষে ১৯৫৯ সালে বৃটিশ অক্সিজেন কোম্পানীতে উচ্চ বেতন ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ চাকরিতে যোগ দিয়ে বর্নাঢ্য কর্ম জীবনের শুভ সূচনা করেন। পাকিস্তানের করাচীতে নূতন কর্মস্থলে যোগ দেন কর্মবীর এম.সাইফুর রহমান। ১৯৬০ সালের ১২ই জুলাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন বন্দর নগরী চট্ট্রগ্রামের এক অভিজাত খান্দানি পরিবারের কৃতি কন্যা বেগম দুররে সামাদ রহমানের সাথে। এই দম্পতির সুখময় দাম্পত্য জীবনের ফসল-মহান আল্লাহর দান , চার সন্তান। তিন পুত্র এক কন্যার জনক-জননী ছিলেন সাইফুর দুররে সামাদ দম্পতি। সন্তানগণ উচ্চ শিক্ষিত। কর্ম জীবনে সু-প্রতিষ্ঠিত। প্রথম পুত্র এম.নাসের রহমান পিতার সাথে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে সাংসদ এবং জেলা বি.এন.পি-র সভাপতি হন। এখন ও সেই দায়িত্ব পালন করছেন।
বৃটিশ অক্সিজেনের উচ্চ বেতনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে পাকিস্তানের রাজধানী করাচীতে অবস্থান ও উচ্চ মহলের সঙ্গেঁ চলাফেরা উঠা বসা করে এম.সাইফুর রহমান পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠির বাঙ্গাঁলিদের প্রতি বিমাতা সূলভ আচরনে মন কষ্ট পান। মনক্ষুন্ন হন। বিলাসি জীবন পেছনে ফেলে বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানীর উচ্চ বেতনের চাকরি ইস্তেফা দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন ১৯৬২ সালে তার দুইজন সহকর্মিকে নিয়ে গঠন করেন রহমান রহমান হক এন্ড কোম্পানী-আর.আর.এইচ।
পেশার প্রতি আনুগত্য ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রহমান রহমান হক এন্ড কোম্পানী সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে সর্ববৃহৎ একাউন্টেন্সী অডিট ফার্ম হিসাবে খ্যাতি ও স্বীকৃতি অর্জন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারামলে দশ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় বেতন কমিশন গঠিত হলে একজন সি,এ,হিসাবে বঙ্গঁবন্ধু তাকে মনোনীত করেন। সেই বেতন কমিশনে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ছিলেন সেনাবাহিনীর উপ প্রধান মেঃ জেনারেল জিয়াউর রহমান। কমিশনে এক সঙ্গেঁ কাজ করতে গিয়ে এম.সাইফুর রহমান ও জেনারেল জিয়াউর রহমান এর মধ্যে ঘনিষ্টতা গড়ে উঠে। ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট বঙ্গঁবন্ধু মন্ত্রী সভার বানিজ্যমন্ত্রী স্বীকৃত খুনী খন্দকার মুশতাক আহমদ এর আস্কারা, আশ্রয় ও প্র¯্রয়ে কতেক বিপথ গামী সেনা সদস্য বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম ভাবে হত্যা করলে দেশে এক প্রকট রাজনৈতিক সংকট ও শূন্যতা দেখা দেয়। পচাত্তোর উত্তর দেশীয় রাজনীতির সংকট ও শূন্যতার মাঝে দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র কায়েম এবং সাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্টার লক্ষে এম.সাইফুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের অনুরোধ ও অনু প্রেরনায় ১৯৭৬ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ.এস.এম.সায়েম এর মন্ত্রীসভায় বানিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে যোগদান করেন। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রীক দল-জাগদল-প্রতিষ্ঠায় ও নবীন রাজনীতিবিদ এম.সাইফুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বানিজ্য উপদেষ্টা হিসাবে তার রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন শুরু হলেও অর্থনীতিবিদ এম.সাইফুর রহমান প্রেসিডেন্ট জিয়ার মন্ত্রী সভায় অর্থমন্ত্রনালয় এর গুরু দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। প্রেসিডেন্ট জিয়ার শাহদাত বরণের পর তিনি জাস্টিস আব্দুস ছাত্তার এর মন্ত্রী সভায় ও অর্থমন্ত্রী হিসাবে বহাল থাকেন। বি.এন.পি-র সকল সরকারামলে তিনি মন্ত্রী সভায় ছিলেন। তিনি দলের নীতি নির্ধারনী ফোরাম দলের স্থায়ী কমিটির চীর স্থায়ী সদস্য ছিলেন। ১৯৮২ সালের ২৪শে মার্চ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ কায়েম করে সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল হোসেন মোহাম্মদ এর্শাদ আর্মির কোড অব কনডাক্ট ভঙ্গঁ করে ক্ষমতা দখল করতঃ দেশ ব্যাপী সামরীক আইনজারী করে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার বিশ্বস্থ সহচর এম.সাইফুর রহমানকে তার গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে চাপ প্রয়োগ করে মন্ত্রী সভায় যোগদানের প্রস্তাব দিলে তিনি তা ঘৃনা ভরে প্রত্যাখ্যান করতঃ কারা যাতনা ভোগ করেন। মিথ্যা মামলায় বেকসুর খালাস পান।
১৯৯১ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বি.এন.পি সরকার গঠিত হলে অর্থমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব ভার প্রাপ্ত হন তিনি। ন’বছরের সামরীক স্বৈরাচার বিধ্বস্থ অর্থনীতিকে তিনি পূনর্ঘটন করেন। Value added Tex-Vat- প্রথা চালু করে অর্থনীতিকে চাঙ্গাঁ করেন। শুরুতে ভ্যেট সিস্টেম সমালোচিত হলেও বর্তমানে সরকারের আয়ের বিপুল অংক যোগান দেয় এই ভ্যেট। এই আমলে এম.সাইফুর রহমান বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ. এর বোর্ড অব গভর্নর্স এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ ও ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেন। মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান সৈয়দ মহসীন আলীর (পরে সাংসদ। মন্ত্রী।মরহুম) উদ্যোগে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিশাল নাগরিক সম্ভর্ধনা এবং জেলা যুবদলের উদ্যোগে চৌমুহনা চত্বরে গন সম্ভর্ধনা দেয়া হয়। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চার দলীয় জোট সরকার গঠিত হলে এম.সাইফুর রহমান অর্থের সঙ্গেঁ পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্ব ভার ও প্রাপ্ত হন। জোট সরকারামলে তার বলিষ্ট উদ্যোগ ও নেতৃত্বে দেশব্যাপী বিশেষত সমগ্র সিলেট বিভাগ ব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পদিত হয়। দেশীয় শিক্ষার মান উন্নয়নে তিনি বিদ্যালয় সমূহে ফুড কর এডুকেশন-শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী চালু করেন তিনি বলতেন Education is the foundation of Development উন্নয়নের ভিত্তিই হল শিক্ষা-সেই লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচী চালু করে ছিলেন। বায়ান্নের ভাষা সৈনিক এম.সাইফুর রহমানকে জাতি এই সময় একুশের পদকে ভূষিত করেন। জেলায় একুশে পদক প্রাপ্তদের মধ্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. কাজি খলিকুজ্জামান আহমদ নিসর্গ বিদ দ্বিজেন শর্ম্মার নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এবার একুশের পদকে ভূষিত হচ্ছেন সাবেক সাংসদ বীর মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল জব্বার। অর্থনীতিবিদ হিসাবে এম.সাইফুর রহমান ছিলেন সফল অর্থমন্ত্রী। তাঁর সময়ে শেয়ারবাজার চাঙ্গাঁ ছিল, মুদ্রাবাজার ছিল স্থিতিশীল, মুদ্রাস্ফীতি ছিল না, সর্ব্বোপরি ব্যাংকিং সেক্টরে শৃংখলা ছিল, হলমার্ক, ইউনিপেইড-টু-বিসমিল্লা গ্রæপ এর লুন্টন-লুট তরাজ ছিল না। তাঁর মন্ত্রনালয়ের পিয়ন থেকে সচিব পর্য্যন্ত তটস্থ থাকতেন-তাঁর নিয়ন্ত্রন ছিল নিরংকুশ, কোন প্রভাবশালীদের কাছে তিনি মস্তক অবনত করেন নি, জাতিকে হেয় হতে দেন নি। এই প্রসঙ্গেঁ দেশের দুইজন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ এর উক্তি ও মতামত সমূহ একান্তই প্রাসঙ্গিঁক ও প্রনিধান যোগ্য। সাবেক সচিব এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক আবু আহমদ একজন মেধাবী অর্থমন্ত্রীর কথা নিবন্ধে বলেন-“উনার মন্ত্রীত্ব কালে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টারের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। শুধু রাজনীতির খাতিরে উনি কোন নূতন ব্যাংকের অনুমোদন দেন নি। আমি পাঁচ বছর বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক এর চেয়ারম্যান ছিলাম। দীর্ঘ পাঁচ বছরে সাইফুর রহমান একদিনও আমাকে বলেন নি যে, ঐ কেইসটা দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর সাবেক গভর্নর, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.সালেহ উদ্দিন আহমদ সাইফুর রহমান একজন কিংবন্তী পুরুষ শিরোনামের নিবন্ধে যথার্যই বলেন- ব্যাংক এবং আর্থীক প্রতিষ্টানের শৃংঙ্খলা সুশাসন এবং দক্ষতা সেসময় অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল জনাব সাইফুর রহমানের জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও সদিচ্ছার জন্যই”।
পরিনত বয়সে জননেতা এম.সাইফুর রহমান ডায়বেটিস সহ বিভিন্ন বার্ধক্য জনিত ব্যাধিতে ভূগছিলেন। ২০০৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে এই মহান ব্যক্তি মারাত্মক সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।) ঢাকা, সিলেট, মৌলভীবাজারে বিশাল বিশাল নামাজে জানাজা শেষে তাঁকে তার গ্রামের বাড়ি বাহার মর্দ্দানে পারিবারিক কবরস্থানে তার প্রিয় জীবন সাঙ্গঁনি বেগম দুররে সামাদ রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়। এত দিনে তার কবরের মাটি পুরাতন হয়ে গজিয়েছে ঘাস, ফুটেছে অনেক নাম না জানা ঘাসফুল। ঘাস, ঘাসফুল তাঁর কবরস্থানকে পরম মমতায় জড়িয়ে আছে। তাঁর কবরের মাটি পুরাতন হয়ে গেলেও তিনি স্মৃতির গভীরে হারিয়ে যান নি-আছেন আমাদের অন্তরে। অনুভবে। এহেন বহুমাত্রীক প্রতিভাধরের জীবনদর্শন এর উপর সংক্ষেপে ব্যাপক আলোচনা সম্ভব নয়। কারন তার কর্ম ও জীবন বর্ণীল। বনার্ঢ্য। বহু মাত্রিক প্রতিভাও গুণের অধিকারী তিনি। সিলেটের বিশিষ্ট আইনজীবী, সুলেখক এমাদুল্লা শহীদুল ইসলাম শাহীন ¯েœহ ভাজনেষূ একদিনের নোটিশে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বরাত দিয়ে এম.সাইফুর রহমানের কর্ম্ম ও জীবন সংক্রান্ত রচনা চাইলে এই ক্ষুদ্র লেখার প্রয়াস। অল্প কথায় স্বল্প পরিসরে সীমিত জ্ঞানে এম.সাইফুর রহমানের কর্ম ও জীবন সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ চিত্রাঙ্কন সম্ভব নয়,-এ-এক খন্ড চিত্র মাত্র। বার্ধক্য জনিত ব্যাধি অসুস্থতা-দূর্বলতা জনিত কারনে বিদ্যমান ত্রæুটি বিচ্যোতির জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া আমার আর কোন উপায় নাই। আমি তাই করলাম। ক্ষমা চাইলাম। মিডিয়া রাষ্ট্রের চতুর্থ স্বম্ভ হিসাবে খ্যাত ও স্বীকৃত। ইলেক্টনিক মিডিয়ার আবিষ্কার ও অভ্যেদ্যয়ে মিডিয়া ভূবনে পূর্ণতা এসেছে। সৌকর্য্য ও সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ভূবনের স্বাপ্নিক পূরুষ সালাহ উদ্দিন আহমদের বলিষ্ট ও গতিশীল নেতৃত্বে মিডিয়া ভূবনে এস.এ.টিভি নিজস্ব স্থান করে নিয়েছে। গুনী জনের সম্মান ও জনকল্যানে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে মিডিয়া ভূবন থেকে এই জাতীয় মহতি কার্য্যক্রম নিঃসন্দেহেই প্রশংসনীয়। এস.এ.টি.ভির কর্নধার ও প্রাণ পূরুষ সালাহ উদ্দিন আহমদকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। এস.এ.টি.ভিও মিডিয়া ভূবনের এই জাতীয় মানবিক গনমুখী কার্য্যক্রম অব্যাহত থাকুক এই কামনা।
পীরানে পী-ইয়েমেনী বীর হযরত শাহ্ জালাল ইয়েমেনীর স্মৃতি বিজড়িত পূণ্য ভূমি সিলেট। সিলেট্ সিটি কর্পোরেশন-সিসিক-একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, গনকল্যান মুখী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্টান। টানা দ্বিতীয় বারের মত পূনঃ নির্বাচিত-সিসিক-মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বলিষ্ট ও গতিশীল নেতৃত্বে সিলেটে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের সেনিক নিখাদ দেশ প্রেমিক বলিষ্ট সংঘটক সিসিক মেয়র আরিফুল চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। শিক্ষানুরাগি ও জ্ঞান পিপাসু সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অবকাঠামো গত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে বিভিন্ন সৃজনশীল কর্ম্মকান্ডের আয়োজন করে থাকেন-প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা ও দিয়ে থাকেন। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানেন ও মানেন, যেদেশে, যে সমাজে গুনীজনের সম্মান দেয়া হয় না সেদেশে গুনীর জন্ম হয় না। স্বীকার্য্য ও স্বীকৃত সত্য যে, গুনী জনকে সম্মান দেয়া প্রকারান্তরে নিজেরাই সম্মানিত হওয়ার নামান্তর। এই প্রেক্ষিতে এস.এ.টিভির এই নান্দনিক আয়োজনে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগীতা প্রাসঙ্গিঁক ও প্রশংসনীয়। সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর আন্তরিকতা ও মহৎ মানষিকতা ও জন কল্যান মুখী কার্য্যক্রমের তারিফ করতেই হয়। এই মহতি কার্য্যক্রমের জন্য সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, তাঁর সহযোগি-সহকর্মী সিসিক কাউন্সিলার বৃন্দ এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাও কর্ম্মচারীগণকে অনেক অনেক আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা, সম্মাননা প্রাপ্ত সিলেটের পাঁচ গুনী শুধুমাত্র বৃহত্তর সিলেট নয়, তারা দেশের গর্ব ও গৌরব। এদের মধ্যে এস.এ.এম.এস. কিবরিয়া, এম.সাইফুর রহমান আসদ্দর আলী ও মনির উদ্দিন আহমদ, এডভোকেট বর্তমানে পরলোকে। প্রয়াত চার গুনীর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি, মহান মালিক তাদের বেহেশত নসীব করুন এই মোনাজাত করছি। আশিত পর বৃদ্ধ ভাষা সৈনিক ও কুটনৈতিক যোদ্ধা এ.এম.এ.মোহিত এর সুস্ব্যাস্থ, দীর্ঘায়ূ ও কল্যান কামনা করছি।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সিনিওর এডভোকেট হাইকোর্ট। জজকোর্ট। একটি রাষ্ট্রায়াত্ব বানিজ্যিক ব্যাংক এর সাবেক পরিচালনক ও চেয়ারম্যান নির্বাহী কমিটি। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব। কবিও কলামিষ্ট।]
মন্তব্য করুন