(ভিডিওসহ) নিরাপদ সড়কের দাবীর আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পেটালো সন্ত্রাসীরা
স্টাফ রিপোর্টার॥ নিরাপদ সড়কের দাবীতে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহরের চৌমুহনা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়। বিকেল পৌনে ৩টার সময় এক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে পেঠাল সন্ত্রাসীরা। শিক্ষার্থীকে পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে এখন ভাইরাল।
সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে জড়ো হতে থাকেন শহরের চৌমুহনা এলাকায়। তারা প্লে কার্ড সহকারে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স তল্লাশি করতে দেখা যায়। এ ছাড়াও মৌলভীবাজারে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘটের কারণে জেলার সকল রুটে দুরপাল্লার গাড়ী সহ সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
৪ আগষ্ট শনিবার মৌলভীবাজারে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। অনেকটা শান্তিপূর্ণকর্মসূচীর শেষ পর্যায়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৩ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে পুলিশের সামনেই মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে অনেকেই তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। শহরের চৌমুহনা এলাকায় মারধরের ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও দেখে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন পুলিশের সামনেই ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীর হাতে প্রহরীত ওই শিক্ষার্থী মৌলভীবাজার সরকারী কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র হৃদয়। এছাড়াও আরো ২ জন আহত হয়েছেন বলে জানান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই ছাত্রকে হামলাকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে কয়েকজন শিক্ষার্থী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান আন্দোলন কর্মসূচীর শেষ পর্যায়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স চেক করার সময় কয়েকজন ছাত্রনেতা পরিচয় দিয়ে এক শিক্ষার্থীর উপর হামলা করে। পুলিশের সামনেই তাকে বেদড়ক পেটানো হয়। অবশ্য পরে কয়েজন পুলিশ সদস্য একত্রে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। হামলায় আহত শিক্ষার্থীকে আটকে রাখে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা “ছাত্রলীগের হামলা কেন? “আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই” বলে স্লোগান দিয়ে মিছিল দেয়।
সারা দেশের ন্যায় ঢাকার একটি ও স্থানীয় ৮টি দাবীসহ মোট ৯ দফা দাবী নিয়ে মৌলভীবাজারেও আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে পুরো জেলা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শহরের বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের চৌমুহনী এলাকায় জড়ো হয়। এসময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে নানা স্লোগান দেয়। তখন বেলা বাড়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখে প্রতিবাদী স্লোগান, গলায় ঝুলানো প্লে কার্ডে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস, আমাদের মেরুদন্ড ভেঙ্গনা, জাতির মেরুদন্ড ভেঁঙ্গে যাবে ইত্যাদি নানা স্লোগান সম্বলিত প্লে কার্ড দেখা যায়। সময় যতো গড়ায় সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন ততই বাড়তে থাকে। মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো শহর।চৌমুহনা এলাকায় অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা ছড়িয়ে পড়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তায়। সেখানেও তারা বিভিন্ন গাড়ি ও ড্রাইবারের লাইসেন্স দেখা শুরু করে। আবার অনেকে চালককেও নানা পরামর্শ দেয়।
মৌলভীবাজার মডেল থানা পুলিশ জানায়, দুপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চৌমুনাস্থ স্বাদের সামনে একটি প্রাইভেট গাড়ি ভাঙচুর করে। তখন পুলিশ জিজ্ঞাসা বাধের জন্য দুজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয়। এসময় রোগীবিহীন একটি এ্যম্বুলেন্স রিক্সা ভ্যানকে ধাক্কা দিলে শিক্ষার্থীরা আটক করে পুলিশের কাছে হস্থান্তর করে। সকাল ৯টা থেকে তারা কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের গোবিন্দবাটি এলাকায়, সিলেট-মৌলভীবাজার রোডের জুগিডর এলাকায় ও মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল সড়কের মোকামবাজার এলাকায় তারা গাড়ি আটকিয়ে ধর্মঘট পালন করে। শহরের বাইরে থেকে গাড়ি না আসায় বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেটে আন্দোলনে যোগ দেয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবী দাওয়া মেনে নেওয়া হবে এমনটি আশ্বস্ত করে জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান তাদেরকে শান্ত থেকে ঘরে ফেরার অনুরোধ করেন। পরে শিক্ষার্থীরা রাজপথের কর্মসূচী স্থগিত করে ক্লাসে ফিরেন। তবে দাবী আদায়ের বাস্তবতা পরিলক্ষিত না হলে তারা আবারও রাজপথে নামবেন বলে হঁশিয়ারী দেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এই আন্দোলনে মৌলভীবাজারের আহবায়ক এম এ সামাদ, শাহ ফাহিম, সিরাজুল হাসান জানান সকাল থেকে জাতিয় ১টি ও স্থানীয় ৮টি দাবী নিয়ে তারা শহরে আন্দোলন করেছেন। তারা বলেন আমাদের আন্দোলন কর্মসূচী স্থগিত ঘোষণারপর আরেকটি গ্রুপ অবস্থান কর্মসূচী চালিয়ে যায়। তবে এ ঘটনার নিন্দা জানান তারা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর একটি অংশ অভিযোগ করে বলেন কোন কারন ছাড়াই আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর শেষ পর্যায়ে চৌমুহনা ও কোর্ড রোড এলাকায় পুলিশের সামনে তাদের ৩ সহপাঠীকে মারধর করে কিছু সংখ্যক ছাত্র নেতারা। তবে জেলা ছাত্রলীগের একাধীক নেতার কাছে মারধরের বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেন এবং এর সাথে তারা জড়িত নয় বলে জানান। আন্দোলনে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
মন্তব্য করুন