(ভিডিওসহ) বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দাবীতে মৌলভীবাজারে গণজমায়েত
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজার জেলায় নদী ভাঙ্গন ও বন্যার কবল থেকে রক্ষায় স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবীতে গণজমায়েত করেছে মৌলভীবাজার জেলা বন্যা প্রতিরক্ষায় প্রেসার গ্রুপ।
২৮ জুলাই শনিবার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে মৌলভীবাজার জেলা বন্যা প্রতিরক্ষায় প্রেসার গ্রুপের আয়োজনে এই গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসার গ্রুপের আহবায়ক বকসি ইকবাল আহমদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব মু.ইমাদ উদ দীন এর পরিচালনায়দাবীর প্রতি একাত্মতাপোষণ করে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়েরা মহসীন। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফজলুর রহমান, সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান নকুল চন্দ্র দাশ, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি সৈয়দ শাহাব উদ্দিন আহমদ, সিনিয়র সাংবাদিক এস এম উমেদ আলী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিসবাহ উর রহমান, মোঃ আজাদুর রহমান, বিজনেস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামারচাক ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল হক সেলিম, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান অরবিন্দু পোদ্দার বাচ্ছু, সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান চৌধুরী রেজা, সংগঠনের সদস্য ও মনুমুখ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো: সুজন মিয়া, আমিন উদ্দিন বাবু, আলিম উদ্দিন হালিম,জুবায়ের আলী আহমদ,অধ্যক্ষ মাওলানা শরীফ খালেদ সাইফুল্লাহ, রুহেল চৌধুরী, একাটুনা ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আফজল হোসেন কাজল, ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন, রফিক উদ্দিন, তোতা মিয়া, শেখ আব্দুল মুহিত, চৌধুরী মো: মেরাজ, তাকবির হোসাইন, এম এ সামাদ, শ্যামল দাশ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পবিত্র কুরান থেকে তেলায়াত করেন এ্যাডভোকেট হাফিজ আব্দুল আলিম, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন এ্যাডভোকেট ভূষণজিৎ চৌধুরী মিলন।
বক্তারা বলেন প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই জেলার মনু,ধলাই,ফানাই,সোনাই,জুড়ী,গোপলা, কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি, কাউয়াদিঘি আর হাইল হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয় গ্রামের পর গ্রাম। ঘরবাড়ি, ক্ষেতকৃষি,গোবাদিপশু,রাস্তাঘাট,মৎস্য খামার, প্লোটি খামার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন স্থাপনা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। নাব্যহ্রাসের কারনে নদী ও হাওর ভরাট হওয়ার কারনে ভারী বৃষ্টি হলেই কিংবা উজানের ঢলেই প্রতিরক্ষা বাধঁ ভেঙ্গে বন্যা দেখা দেয়।
প্রতিবছরই এভাবে বন্যায় গচ্ছা যাচ্ছে হাজার হাজার টাকার সম্পদ ও উন্নয়ন কর্মকান্ড। গেল বছর (২০১৭ খ্রি:) অকাল বন্যা ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার পর এবছরও বর্ষার শুরুতে মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে আকস্মিক বন্যা হয়েছে। উজানের ঢল ও বর্ষণে মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর ৩৮টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে জেলার ৪টি উপজেলার ২টি পৌরসভাসহ প্রায় ৪০ টি গ্রামের ৪ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হন। ঘরবাড়ি, ক্ষেতকৃষি আর সহায় সম্বল হারিয়ে বন্যার্তরা এখন নি:স্ব। তারা বলেন প্রতি বছর বর্ষাতে আমারা এরকম আতঙ্ক আর চরম ক্ষয়ক্ষতিতে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় থাকলেও আমাদের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাত্মক হুমকির মুখোমুখি হলেও তা থেকে পরিত্রাণের কোন উদ্যোগই নিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। শুধু বন্যা হলেই শুরু হয় দৌঁড়যাপ আর নানা তৎপরতা। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণে বন্যার আগে ও পরে এনিয়ে কোন স্থায়ী উদ্যোগ কিংবা মহাপরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এভাবেই কাটছে বছরের পর বছর। মান্দাতা আমলের নিয়মে সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বর্ষা মৌসুমে আসে বাঁধ মেরামতের বরাদ্ধ। তাই কাজ গুলোও সঠিক হয়না। এ গথবাঁধা অবস্থার বেড়া জাল থেকে যেন বের হওয়াই যাচ্ছেনা।
তাদের জোর দাবী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে বন্যার মতো একটি স্থায়ী দুর্যোগে রক্ষার এবং পানি বিজ্ঞানের সূত্র অনুসরণ করে নদ-নদীকে আতঙ্কের পরিবর্তে সম্পদ,উন্নয়ন ও সৌন্দর্যের অন্যতম উৎস করার। মনু, ধলাই ও কুশিযারা নদী খনন এবং ব্লক ও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।
জেলার অন্যান্য নদ-নদী,ছড়া,গাঙ্গ,জলাশয়, জলাধার, হাওরের ভরাট বিলসহ নদী ও হাওরের সংযোগ খালগুলো খনন এবং নতুন জলাধার তৈরী।এজেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় অভয়াশ্রমসহ প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন।
মৌলভীবাজার নদী ভাঙ্গন ও বন্যার কবল থেকে শহর রক্ষায় স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। হাওর ও নদী পাড়ের কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে বয়ে চলা নানা সমস্যা দূরীকরণ। হাওর অঞ্চলকে অবিলম্বে অনুন্নত অঞ্চল ও হাওর উন্নয়ন নীতি ঘোষণা। পশ্চাদপদ হাওর অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য আলাদা বাজেট ঘোষণা ও হাওর মন্ত্রনালয় গঠন। পর্যায়ক্রমে দাবী বাস্তবায়নের দৃশ্যমান অগ্রগতির জন্য একমাসের আল্টিমেটাম দেওয়া হয় অন্যতায় বিক্ষোভ মিছিল,অবরোধ,চলচল ঢাকায় চলসহ লাগাতার নানা কর্মসূচীর হুশিয়ারী দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গণজমায়েতে জেলার বিভিন্ন উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন