(ভিডিওসহ) মৌলভীবাজারে ১৪ মে থেকে দেশের ২য় চা নিলাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু
আশরাফ আলী॥ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের ২য় চা নিলাম কেন্দ্রের যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে ৬ মে রোববার দুপুরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবে ‘টি প্ল্যান্টার্স এন্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন করে তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব জহর তরফদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ২য় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপন করে সিলেটের চা সিলেটেই নিলাম করার দাবীতে ৭০ বছর ধরে আন্দোলন হচ্ছিল। এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সম্মেলনে সিলেট বিভাগে ২য় চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও চা বোর্ড উদ্যোগ গ্রহণ করে।
২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম হোসেনের সভাপতিত্বে সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি সহ চা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে শ্রীমঙ্গলে আরেকটি চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
২০১৩ সালের ২২ ও ২৩ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির গঠিত সাব-কমিটির সদস্য ও তৎকালীন সংসদ সদস্য তহুরা আলীর নেতৃত্বে ২জন সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ ও টিপু মুন্সী এবং চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র স্থাপনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে বলে সুস্পষ্ট মত দেন।
এরই ধারাবাহিকতায় চা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে চা উৎপাদক, ওয়্যার হাউস, ব্রোকার হাউস ও অকশন বিডারদের নিয়ে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন।
নির্দেশনা অনুসারে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে একটি অকশন হাউস তৈরী করা হয়। অকশন হাউসটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃবৃন্দ, চা বোর্ডের প্রতিনিধি, অকশন বিডার, চা বাগান মালিকবৃন্দ, চা ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও চা সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পরিদর্শন করে নিলাম কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন।তিনি লিখিত বক্তব্যে আরোও বলেন, ২০১৬ সালের জুন মাসে চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পত্রের আলোকে নিলাম কেন্দ্রের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই প্রতিবেদন দাখিল করে।
এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড ও মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে ২য় চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বক্তব্যকালে বলেন, সিলেটের চা নিলামের জন্য শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হবে ১৪ মে।
নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য ‘টি প্ল্যান্টার্স এন্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামে সংগঠন গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেড অর্গানাইজেশনের (টিও) শাখা লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। সেই লাইসেন্সের প্রেক্ষিতে রেজিষ্টার অব জয়েনস্টক কোম্পানী এন্ড ফার্মস কর্তৃক লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ‘টি প্ল্যান্টার্স এন্ড ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর নেতৃবন্দ বলেন, শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম কেন্দ্র চালু হওয়ায় এখন থেকে উৎপাদিত চা পাতা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নিলামে উঠানো যাবে। যেখানে আগে সময় লাগত তিনমাস। তাছাড়া এখানে নিলাম কেন্দ্র স্থাপনে যাতায়াত খরচ, সড়ক দূর্ঘটনা, সময় সাশ্রয়, মহাসড়কের যানজট নিরসন, দ্রুত সময়ে নিলামে উঠায় চা পাতার কোয়ালিটি ঠিক থাকাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ফাইভ স্টার মানের হোটেল ও রির্সোট থাকায় বায়াররাও এখানে আসতে আগ্রহী হবে। তাছাড়া এখানকার চা বাগান মালিকরা বিক্রিতে লাভবান হলে উৎপাদনেও তারা উৎসাহী হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানান প্রতি নিলামে ৫০-৫৫ হাজার কেজি চা বিক্রি হবে। যার বাজার মূল্য হবে ১৪-১৫ কোটি টাকা। আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ২৬ জুন ও ১৭ জুলাই। এ কারণে চট্রগ্রামে পূর্বনির্ধারিত মৌসুমের ৫, ১০ ও ১৮ নম্বর আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হবে না। এছাড়া চট্রগ্রামে প্রথাগতভাবে সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হলেও শ্রীমঙ্গলে তিনটি নিলাম হবে বুধবারে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে চায়ের ৪৫টি আন্তর্জাতিক নিলামের সময়সূচি প্রকাশ করা হয়। ২৯ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ২০১৯ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত প্রতি মঙ্গলবার চট্রগ্রামের নিলামকেন্দ্রে এবারের মৌসুমের ৪৫টি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ছুটি থাকায় ১ মে অনুষ্ঠেয় মৌসুমের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নিলাম আগের দিন অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠেয় ৩৪তম নিলাম বড়দিনের কারণে পরদিন ২৬ ডিসেম্বর বুধবার অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া পূর্বনির্ধারিত ১৩ জুনের অষ্টম নিলাম, ৯ জুলাইয়ের নবম নিলাম ও ১০ সেপ্টেম্বরের ১৭তম নিলাম যথাক্রমে শবেকদর, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার ছুটির মধ্যে পড়ায় এসব নিলামের পরিবর্তিত তারিখ পরে নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান বলেন,‘২০১৮ সালে এপ্রিলে ৪টি চা নিলাম অনুষ্ঠিত হওয়ার সিডিউল আছে। ৪টি চা নিলাম সিডিউলের মধ্যে ১টি চা নিলাম কার্যক্রম শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠানের বিষয়ে সভায় প্রস্তাব করা হয়। মে মাসে চা বোর্ডের সেল কমিটি প্রস্তাবকৃত চা নিলাম সিডিউলে শ্রীমঙ্গল নিলাম কেন্দ্রের জন্য ১টি চা নিলাম সংরক্ষণ করা হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চা নিলাম বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি শেখ লুৎফুর রহমান, সংগঠনের যুগ্ম আহবায়ক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হারুন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, চা নিলাম বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য ডাঃ এম এ আহাদ, অধ্যক্ষ সৈয়দ মনসুরুল হক, সৈয়দ মুনিম আহমদ রিমন, সুয়েদ আহমদ।
মন্তব্য করুন