(ভিডিওসহ) মৌলভীবাজার সহ ২৭ জেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু

August 8, 2018,

আশরাফ আলী॥ দেশের নাগরিকদের উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার সদর সহ দেশের আরো ২৭ জেলার নাগরিকদের মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করেছে ইসি।

বুধবার সকাল ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং কমিশনাররা নির্বাচন কমিশনের সম্মেলন কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। একই সময়ে ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এ সময় ভিডিও কনফারেন্স বক্তব্য রাখেন মৌলভীবাজার-৩ আসনের নংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন, জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল হামিদ মাহবুব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, জেলা নির্বাচন অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান।

মৌলভীবাজার জেলায় অক্টোবরের মধ্যে তৈরী করা প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার স্মার্ট কার্ড বিতরণ কাজ শেষ করা হবে। স্মার্ট কার্ড সংগ্রহ করতে প্রত্যেককে জাতীয় পরিচয় পত্র সাথে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। সংগ্রহের পূর্বে প্রত্যেকের আঙ্গুলের চাপ ও চক্ষুর ছবি নেয়া হবে।

৮ আগষ্ট বুধবার থেকে এসব স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হবে। মঙ্গলবার বিকেলে ইসির যুগ্ম সচিব (জনসংযোগ) এস এম আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, দেশের ২৭টি জেলায় একযোগে স্মার্ট কার্ড বিতরণ শুরু হবে।

২৭ জেলার যেসব উপজেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে এর মধ্যে মৌলভীবাজার সদর, মানিকগঞ্জ সদর, মুন্সীগঞ্জ সদর, নরসিংদী সদর, শেরপুর সদর, জামালপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, টাঙ্গাইল সদর, কিশোরগঞ্জ সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, লক্ষ¥ীপুর সদর, চাঁদপুর সদর, ফেনী সদর, নাটোর সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, সিরাজগঞ্জ সদর, নওগাঁ সদর, চুয়াডাঙ্গা সদর, মাগুরা সদর, ঝিনাইদহ সদর, সাতক্ষীরা সদর, কুষ্টিয়া সদর, যশোর সদর, রাজবাড়ী সদর, মাদারীপুর সদর, ফরিদপুর ভাঙ্গা ও ভোলা সদর।

এর আগে ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর একযোগে ৩৭ জেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুর হয়। ইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশে ১০ কোটি ৪০ লাখের মতো ভোটার রয়েছে।

স্মার্ট কার্ড ২০১৬ যা যা দেখা যাবে–

  1. ব্যক্তির নাম (বাংলা-ইংরেজি উভয় ভাষায়), পিতা-মাতার নাম, জন্মতারিখ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নম্বর।
  2. কার্ডের পেছনে ব্যক্তি যে এলাকা থেকে ভোট দিচ্ছেন তার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান্ উল্লেখ করা থাকবে।
  3. স্মার্ট কার্ডের চিপ (তথ্যভান্ডার) এ থাকবে ৩২ ধরনের তথ্য, যা মেশিনে পাঠযোগ্য।
  4. এবারের স্মার্ট কার্ডের সাথে পূর্বের কগজ দ্বারা ল্যামিনেট করা কার্ডের বেশ পার্থক্য রয়েছে। এবারের কার্ডটি প্লাস্টিকের (পলিমার) তৈরি, তাই এটি হবে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
  5. কার্ডটির মেয়াদ করা হয়েছে ১০ বছর পর্যন্ত।
  6. নারীদের ক্ষেত্রে পূর্বের কার্ডে স্বামীর নাম ছিল, পিতার নাম ছিল না। অপর দিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে কার্ডে স্ত্রীর নাম ছিল না, যা বৈষম্য মূলক বলা হচ্ছিল। এবার নারীদের স্মার্ট কার্ডে স্বামীর নামের পরিবর্তে থাকছে পিতার নাম।
  7. কার্ডের চিপ-এ ব্যক্তির পেশা, স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা, বয়স, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মনিবন্ধন নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সনাক্তকরণ চিহ্ন, ধর্ম, পাসপোর্ট নম্বর, আয়কর সনদ নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, টেলিফোন ও মোবাইল নম্বর, মা-বাবা ও স্বামী বা স্ত্রীর মৃতুসংক্রান্ত তথ্য, প্রতিবন্ধি বা অসমর্থতার তথ্য রয়েছে।
  8. স্মার্ট কার্ডের কভারে রয়েছে, জাতীয় ফুল, জাতীয় পাখি, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও চা-পাতা, মুক্তিযুদ্ধকালীন ও বর্তমান জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ইত্যাদি।
  9. দেশের ৯ কোটি ভোটার কে স্মার্ট কার্ড বিতরণের এই প্রকল্প গ্রহন করা হয় ২০১১ সালে, এজন্য বিশ্বব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে ৮০০ কোটি টাকা ব্যায় করা হয়েছে

স্মার্ট কার্ড ২০১৬ নিরাপত্তা –

স্মার্ট কার্ডে ২৫ টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এগুলো তিনটি স্তরে ভাগ করা। প্রথম স্তরের গুলো দেখতে পারবেন খালি চোখে। দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো দেখার জন্য প্রয়োজন হবে বিশেষ যন্ত্রের। আর শুধুমাত্র ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক টেস্ট এর মাধ্যমে দেখা যাবে তৃতীয় স্তরের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য। ব্যক্তির পরিচয়পত্রের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চক্তি করতে হবে নির্বাচন কমিশনের সাথে।

স্মার্ট কার্ডের সুবিধা : যেসব সেবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য

যে ২২ টি কারণে আপনি স্মার্ট কার্ডের সুবিধা বেবহের করবেন।

স্মার্ট কার্ডের সুবিধা গুলা আপনার নাগরিক সুবিধা গুলো পেতে সাহায্য করবে। স্মার্ট কার্ডটি প্রয়োজন হবে ২২ ধরনের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে- আয়করদাতা সনাক্তকরণ নাম্বার পেতে। শেয়ার আবেদন ও বিও হিসাব খোলার জন্য।

  1. ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি ও নবায়নের জন্য।
  2. পাসপোর্টের আবেদনের ও নবায়নের জন্য।
  3. যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনের জন্য।
  4. ট্রেড লাইসেন্স এর জন্য।
  5. চাকরির আবেদনের জন্য।
  6. বিমা ও স্কিমে অংশগ্রহনের ক্ষেত্রে।
  7. বিয়ে বা তালাক রেজিস্ট্রেশন এর ক্ষেত্রে।
  • স্থাবর সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে।১১.ব্যাংকের হিসাব খুলতে।
  • ব্যাংক ঋন গ্রহন বা পরিশোধের ক্ষেত্রে।
  • ১৩. নির্বাচনের ভোটার শনাক্ত করতে।
  • সরকারি ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে।
  1. সরকারি ভর্তুকি দেয়ার ক্ষেত্রে।
  • বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগীতার ক্ষেত্রে।
  1. টেলিফোন-মোবাইলের সংযোগের ক্ষেত্রে।
  • ই-টিকেটিং এর জন্য।
  • শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে।
  1. আসামী ও অপরাধী শনাক্তকরনের ক্ষেত্রে।
  • আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার পাওয়ার ক্ষেত্রে, এবং
  1. সিকিউরড ওয়েবে লগ-ইন করার জন্য।

‘স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র করে, পরিচয় দিন গর্ব ভরে’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, কার্ডের প্রয়োজনীয়তা ও নাগরিক সেবার বিষয়ে জানানো হচ্ছে।

স্মার্ট কার্ড কবে পাবো : প্রাথমিক পর্যায়ে যারা পাচ্ছেন

স্মার্ট কার্ড কবে পাবো, এই প্রশ্ন এখন সবার। প্রাথমিক পর্যায়ে স্মার্ট কার্ড পাচ্ছেন ঢাকা উত্তরের ১ নং ওয়ার্ড(উত্তরা) এবং ঢাকা দক্ষিনের ১৯,২০ ও ২১ নং ওয়ার্ড (রমনা থানা)-এর সম্মানিত ভোটার রা। তাদের ভেতরে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হবে ৩ থেকে ২৬ অক্টোবরের মধ্যবর্তী সময়ে। যেকোন ভোটার তাদের ফোনে ১০৫ ডায়াল করে জানতে পারবেন তাঁর স্মার্ট কার্ড সংক্রান্ত তথ্য।

শুরুতে যদিও নির্বাচন কমিশন উদ্যোগ নিয়েছিল সব ওয়ার্ডে একযোগে স্মার্ট কার্ড বিতরন করার, কিন্তু প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ না করতে পারায় দুই সিটির চার ওয়ার্ডে এবং কুড়িগ্রামের দাশিয়ারছড়ায় স্মার্ট কার্ড বিতরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

স্মার্ট কার্ড সংগ্রহের সময়ে ব্যক্তির হাতের সব আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ স্ক্যান করা হবে, এবং কাছে বিদ্যমান কাগজের তৈরি কার্ডটি জমা দিতে হবে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড পেতে আপনাকেযা যা করতে হবে

জাতীয় পরিচয়পত্রের স্মার্ট কার্ড পেতে নাগরিকদের পুরনো কার্ড জমা দেওয়ার পাশাপাশি ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি দিতে হবে। এক্ষেত্রে কারও কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমে পুরনো কার্ডটি তুলে তা জমা দিয়ে স্মার্ট কাড নিতে হবে। স্মার্ট কার্ড দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই, সহজে নকল করা সম্ভব নয়। স্মার্ট কার্ড ২০১৬। এতে তিন স্তরে ২৫টির বেশি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নাগরিকদের সব তথ্য চিপ-এ সংরক্ষিত থাকবে।

স্মার্ট কার্ড কবে পাবো?

স্মার্ট কার্ড কবে পাবো ? সবাই উন্মুখ হয়ে আছে যে স্মার্ট কার্ড বিতরন কবে থেকে শুরু হবে।

জাতীয় পরিচয় পত্র বিতরণ ২০১৬  সূত্রমতে, ঢাকার ভোটারদের স্মার্ট কার্ড দেওয়ার জন্য ৭৫টি ক্যাম্প করা হবে। যেখানে নাগরিকরা এসে তাদের কার্ড সংগ্রহ করবেন। প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ ভোটারকে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

সিটি করপোরেশন ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকায় পৌরসভা কার্যালয় ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভোটারদের মাঝে স্মার্ট কার্ড বিতরন কার্ড দেওয়া হবে বলে ইসি সচিব জানিয়েছেন।

স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণের লক্ষ্যে ফ্রান্সের অবার্থুর টেকনোলজিস সংস্থার সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সব ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড পৌঁছাবে ২০১৬ সালের মধ্যে।

 

 

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com