(ভিডিও সহ) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক ইজতেমা সমাপ্ত : ইজতেমা মাঠে ২জন মুসল্লির মৃত্যু
আশরাফ আলী॥ প্রায় ৭ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহনে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারে শেষ হয়েছে তিন দিনব্যাপী আঞ্চলিক ইজতেমা।
শনিবার দূপুরে আখেরি মোনাজাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, দেশ ও মানবতার কল্যাণ-সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় অনেকে কেঁদে ক্ষমা চেয়েছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে।
বিশ্ব ইজতেমার অংশ হিসেবে মৌলভীবাজারে আয়োজিত তাবলীগ জামাতের এ ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল মসজিদের মুরুব্বী বিশিষ্ট আলেমে মোঃ ফারুক।
আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন, জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ অজিজুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বকসী মিসবা উর রহমান, আওয়ামীলীগ নেতা বিশিষ্ট শিল্পপতি এম এ রহিম সিআইপি।
এছাড়াও ইজতেমা মাঠের কাছে অবস্থান করে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন মৌলভীবজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও প্যানেল স্পীকার সৈয়দা সায়রা মহসীন। কাকরাইল মসজিদ থেকে আসেন তাবলীগ জামাতের মুরব্বী মাওলানা আব্দুল মতিন, মাওলানা মনির উদ্দিন ইউসুফ, মাওলানা জাজির আহমদ, মাওলানা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক, ফিলিস্তিন তাবলীগ জামাতের মুরব্বী শেখ মোহাম্মদ ইয়াদ প্রমুখ। এছাড়া আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
পুলিশের পক্ষ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায়, সন্ত্রাস ও নাশকতাসহ অপরাধ দমনে পুরো ইজতেমা মাঠে সিসি ক্যামেরা, গোয়েন্দা নজরদারি, ওয়াচ টাওয়ার বসিয়ে নজরদারিসহ ৬ শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করে জেলা পুলিশ। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আগত মুসল্লিদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ ফ্রি দেওয়া হয়। ইজতেমার এই বিশাল গণজমায়েতের আয়োজন অত্যন্ত সুশৃঙ্খলিত হওয়ায় আগত মুসল্লিরা আয়োজকদের অভিনন্দন জানান। এদিকে শুক্রবার রাতে ইজতেমা মাঠে শীতজনিত কারণে ২জন মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শীতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে মৃত ঘোষনা করেন। তারা হলেন, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের গাঙ্গকুল গ্রামের মতু মিয়া (৬৫) ও একই উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বড়ময়দান গ্রামের সুরমান উদ্দিন (৫৫)। গেল তিন দিন থেকে ইজতেমাঠে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে বিভিন্ন সংগঠন স্বস্তস্ফুর্ত সহযোগিতা করেছে। ইজতেমা উপলক্ষে সচেতন নাগরিক ফোরাম (সনাফ) ‘মুক্ত চিন্তা’ নামে একটি পুস্তিকা বের করে। এছাড়া মৌলভীবাজার অনলাইন আ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম ইজতেমা বার্তা নামে চার রঙ্গের একটি বিশেষ ট্যাবলয়েড পত্রিকা বের করে।
ইজতেমা ও আখেরি মুনাজাতকে নির্বিগ্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় সর্বোচ্চ নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থা। দুই স্তরের নিরাপত্ত্বা ব্যবস্থার জন্য ৫শ পুলিশ ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়। ৬০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত রাখা হয়।
দুপুর ১২টায় আখেরী মুনাজাত শুরু হয়। ১৫ মিনিটের মুনাজাতে সকল মানুষের কল্যাণ কামনা ও জাহান্নাম থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চান হাজারো মুসল্লি। প্রত্যেকের গুনাহ মাফ চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া চেয়ে সম্পন্ন হয় আখেরী মুনাজাত। তবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার সাথে মিল রেখে এখানেও বাংলায় আখেরী মুনাজাত করা হয়। আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন ঢাকা কাকরাইল মসজিদের মুরব্বি মাওলানা ওমর ফারুক।
আখেরী মুনাজাতকে সফলভাবে সম্পন্ন করতে সকাল ৯টা থেকে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে দুপুর ১টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্দ করে দেয় প্রশাসন। সড়কটিতে যান চলাচল বন্দ হওয়ায় দূর্ভোগে পড়েন অফিসগামী কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।
ইজতেমা উপলক্ষে গ্যাসচালিত টমটমগুলো তাদের ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় বলে জানান মুসল্লিরা।
জেলার সবচেয়ে বড় এই গণজমায়েতকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইজতেমার সফলতা কামনা করে এবং মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল আঞ্চলিক মহাসড়কে টাঙ্গানো হয় ব্যানার, পেস্টুন। এছাড়াও তোরণ নির্মাণ করা হয় ।
ইজতেমায় আগত মুসল্লীদের তাৎক্ষনিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে মাঠের উত্তর দিকে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা সেবাসহ ঔষধ বিতরণ করা হয়।
মন্তব্য করুন