(ভিডিও সহ) আজমনি বহু পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে আমেরিকান ভবন নির্মাণ
আশরাফ আলী॥ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আজমনি বহু পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবাসীদের উদ্যোগে একটি ভবণ নির্মাণ করা হয়েছে। আমেরিকান প্রবাসীদের সহযোগীতায় ভবণটি নির্মাণ হওয়ায় ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে আমেরিকান ভবন।
২০১৭ সালের জুলাই মাসে প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা বাজেট নিয়ে ৩ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট আমেরিকান ভবণের কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে ভবণটির দ্বিতলার কাজ সম্পন্ন হবে। ৯০ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট দু’তলা ভবণে শ্রেণীকক্ষ রয়েছে ছয়টি। এ পর্যন্ত ভবটির কাজে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা। কাজ সমাপ্ত হয়েছে প্রায় ৭০ ভাগ। অসম্পন্ন কাজের মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রিকেল, প্লাস্টার, দরজা-জানালা ও ভবণের রংঙের কাজ। এসব কাজ আগামী দু’মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদী স্কুল ম্যানেজিং কমিটি।
ভবনটি নির্মানে যারা অর্থের যোগান দিয়েছেন তারা হলেন, আলহাজ্জ ফখরুল ইসলাম, এনামুল হক জমশেদ, আনসার হোসেন চৌধুরী ও মনজুর হোসেন চৌধুরী জগলুলের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ভবণটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্কুলে নির্মাণাধীন আরেকটি ভবণ জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৪ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ভবণের সম্ভাব্য ৫৬ লক্ষ টাকা বাজেট নিয়ে ১ম তলার কাজ ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়েছে। যা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে।
এছাড়াও দেশী ও বিদেশীদের যৌথ সহযোগীতায় ৩ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ৯০ফুট লম্বা দ্বিতল ভবণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ৬টি ক্লাস রুম। ভবণটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৬৭ লক্ষ টাকা।
আজমনি বহু পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়টি ১৯২১ সালে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত ৯৭ বছর ধরে পাঠদান অব্যাহত রয়েছে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চালু রয়েছে। বর্তমানে স্কুলটিতে ৯০০ ছাত্র-ছাত্রী অধ্যায়ন করছে। গত কয়েক বছর থেকে স্কুলটিতে ভাল ফলাফল করে আসছে।
২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষায় ১৮০জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১৪৮ জন পরীক্ষার্থী। এ গ্রেড পায় ১৬ জন। এ প্লাস পায় ১জন। পাশের হার ছিল ৮৩.১৫ শতাংশ। ২০১৬ সালে ১৭২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১৫৪ জন। এ গ্রেড পায় ৪৪ জন। এ প্লাস পায় ৬জন। পাশের হার ছিল ৯১.১২ শতাংশ। ২০১৭ সালে ১৪৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১২১ জন। এ গ্রেড পায় ১২ জন। পাশের হার ৮৪.০২ শতাংশ।
২০১৫ সালে এস এস সি পরীক্ষায় ১০৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ৭৪জন। এ গ্রেড পায় ৬জন। পাশের হার ছিল ৭১ শতাংশ। ২০১৬ সালে ১৪২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ১০৬জন। এ গ্রেড পায় ৬জন। এ প্লাস পায় ১জন। পাশের হার ছিল ৭৪.৬৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে ১১৩জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয় ৮৮ জন। এ গ্রেড পায় ১৬ জন। এ প্লাস পায় ২জন। পাশের হার ছিল ৭৮ শতাংশ।
শিক্ষকরা বলছেন শাখা ভিত্তিক ক্লাস না থাকার কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো যাচ্ছে না। যার ফলে অতিরিক্ত শিক্ষককের সম্মানীর ব্যয়ভার বহন করতে হয়।
বর্তমানে স্কুলে শিক্ষক ও কর্মচারী ২২ জন রয়েছেন। ১১জন শিক্ষক ও ৮জন শিক্ষিকা রয়েছেন। অনারারী শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন ৬জন। অনারারী ৬জন শিক্ষককে মাসে স্কুলের ফান্ড থেকে ৪০হাজার টাকা সম্মানী প্রদান করা হয়।
সামাজিক সংগঠন ব্রাইট ফিউচার সোস্যাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন স্কুলটিতে অধ্যায়নের জন্য ২৫জন শিক্ষার্থীর ভর্তি খরচ সহ তাদের পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করছে।
এছাড়াও ২০১৪-১৬ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক ৩ বছরের ভালো ফলাফলের জন্য সরকার থেকে ১ লক্ষ টাকা পুরষ্কার প্রদান করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা এবার উদ্যোগ নিচ্ছেন স্কুলটিকে কলেজ মানে উন্নীত করার জন্য। তাদের দাবী হলো আশেপাশের তিনটি ইউনিয়ন কনকপুর, কামালপুর, আখাইলকুড়াসহ শেরপুর থেকে মৌলভীবাজার শহর পর্যন্ত কোন কলেজ না থাকার ফলে এখানের শিক্ষার্থীদের যেতে হয় শহরের সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজগুলোতে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার কারণে পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করতে পারে না। তাই প্রবাসী আমেরিকানদের সহযোগীতায় ভবণ নির্মাণ করে স্কুলটিকে কলেজের কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইমদাদুল হক মছনু বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীরা স্কুলে অনুদান দিয়ে সহযোগীতা করেছেন। আমেরিকান ভবণটি নির্মাণ হওয়ায় কলেজের রেজীষ্ট্রেশনের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। আশাকরি ২০১৯ সালের মধ্যে আমরা স্কুলটিকে কলেজ মানে উন্নীত করতে পারব।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মৌলুদ আহমদ বলেন, স্কুলের পড়ালেখার মান গত কয়েক বছর ধরে বেড়েছে। পাশের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমেরিকান ভবণটি নির্মাণ করায় স্কুলে শ্রেণীকক্ষের সংকট দূর করার পাশাপাশি এই স্কুলটিকে কলেজে রুপান্তর করার জন্য।
মন্তব্য করুন