(ভিডিও সহ) আলোচিত রিপন হত্যার রহস্য উদঘাটন : দাদন ব্যবসার দ্বন্ধে খুন হন রিপন
স্টাফ রিপোর্টার॥ মৌলভীবাজারে ব্যবসায়ী রিপন হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। সনাক্ত করা হয়েছে খুনিদেরও। ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট অনান্যদেরও গ্রেফতারে চেষ্ঠা চলছে। দাদন ব্যবসার দ্বন্ধের জেরে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয় রিপনকে। খুনিরা সবাই তার পূর্ব পরিচিত ও দাদন ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ী কৌশলের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে রিপনকে খুন করার পরিকল্পনা করে তার ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষরা।
রিপন দোকানের পাশাপাশি দাদন ব্যবসা করতো। একই ধরনের ব্যবসা হওয়ায় একই ইউনিয়নের মিরপুর গ্রামের শেখ মোঃ মদন মিয়ার পুত্র আবেদ আহমদের সাথে মনস্তাত্বিক দ্বন্ধ চলছিল। রিপনের ব্যবসা ভালো চলায় মন্দা চলে আবেদের দাদন ব্যবসা। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আবেদ ও তার সহযোগীরা। তাই রিপনকে প্রাণে হত্যার পরিকল্পনা করে আবেদ। আর এই পরিকল্পনায় যুক্ত হয় জগৎপুর ইউনিয়নের আব্দুর রহিমের পুত্র জাহেদ আহমদ আলাল ও পাগুড়িয়া গ্রামের মৃত মধু মিয়ার পুত্র মিনহাজ মিয়াসহ অন্যরা। ৫ হাজার টাকা খুনিদের জন্য বরাদ্ধ ছিল ওই কিলিং মিশনে।
মঙ্গলবার ১০ এপ্রিল দূপুরে মৌলভীবাজার মডেল থানায় প্রেস বিফিংয়ে এই তথ্যগুলো তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রাশেদুল ইসলাম পিপিএম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি সোহেল আহাম্মদ, ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ওসি (অপারেশন) মোঃ হারুন অর রশিদ, তদন্তকারী এসআই মোঃ তোফাজ্জল হোসেনসহ অনান্য পুলিশ সদস্যরা।
প্রেস বিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে বলা হয় ১ এপ্রিল গভীর রাতে আখাইলকুড়া ইউনিয়নের পাগুড়িয়া গ্রামের কাছন মিয়ার বড় ছেলে রিপন মিয়া (২৩) কে তার টিন সেডের মুদির দোকান ঘরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে রিপনের বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের সনাক্ত করে ধরতে তৎপর হয়। এরিই প্রেক্ষিতে পুলিশ গোপন সুত্রের ভিত্তিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকা সন্দেহে পাগুড়িয়া গ্রামের মৃত মধু মিয়ার পুত্র মিনহাজকে আটক করলে সে রিপন হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার। সোমবার (৯ এপ্রিল) সে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজাদারি কার্য বিধি ১৬৪ ধারায়ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধীও দেয়। তারই দেওয়া তথ্যানুযায়ী শেখ আবেদ আহমদ ও জাহেদ আহমদ আলালকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, আবেদ আহমদ (২৫) জাহেদ আহমদ আলাল (২৮) ও মিনহাজ মিয়া (২৯। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার আখালকুড়া ইউনিয়নে।
আটককৃত দুজনকে আখাইলকুড়া এলাকা ও অন্যজনকে মৌলভীবাজার শহর থেকে আটক করে পুলিশ। এর সাথে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানায় ঘাতকরা এতই ধূর্ত খুনের ঘটনা আড়াল করতে তারা রিপনকে খুন করার আগে আশপাশের কয়েকটি দোকান তালা ভাঙ্গে ও চুরি করে। যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় লোকজনের ধারনা হয় চুরি প্রতিরোধেই খুন হয় রিপন। প্রেস বিফিংয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন নিহত রিপনের বাবা কাছন মিয়া। পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে কাতর কাছন মিয়া বলেন আমার ছেলের ভালো ব্যবহারে তাকে ভালোবাসত এলাকার লোকজন। তাই তার ব্যবসাও ভালো চলছিল। এটি মেনে নিতে পারেনি তার ব্যবসায়ী প্রতিপক্ষরা। তিনি বলেন আমার ২ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে রিপন ছিল সবার বড়। তার উর্পাজনে অন্যরা সবাই লেখাপড়া করত ও আমাদের পরিবারও চলত। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন তাকে তার মা ও তার ভাই বোনদের কান্না কিছুতেই থামছেনা। কাছন মিয়া বলেন মিনহাজ আমার ছেলের খুব আপন ছিল। একসাথে থাকত। একসাথে খাওয়া দাওয়াও করত। কিন্তু সামান্য স্বার্থের জন্য সে অন্যদের নিয়ে আমার ছেলেকে চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিল। তিনি বলেন ওই দিন রাত মনের মধ্যে নানা সন্দেহ হওয়ায় রাত ২টার দিকে আমার ছেলেকে দেখতে দোকানে যাওয়ার পথে আবেদকে দেখতে পাই। এরপর সকালেই আমার ছেলের লাশ মেলে দোকান ঘরেই। পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ঠ হয়ে কাছন মিয়া বলেন আমি আর কিছু চাইনা। আমার নিরপরাধ ছেলে কে যারা অন্যায় ভাবে খুন করল তাদের দৃষ্ঠান্তমূলক বিচার চাই।
উল্লেখ্য গত ১ এপ্রিল গভীর রাতে মুদি দোকানী ও দাদন ব্যবসায়ী রিপন মিয়া প্রতিদিনের মতো রাতের খাবার শেষে দোকানের দরজা লাগিয়ে ভেতরে ঘুমান। সকালে এলাকাবাসী দোকানের দরজা ভাঙ্গা দেখে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে রিপনের রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করে। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাত ছিল। রিপনের বাড়ি দোকানের পাশে হলেও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে দোকানের ভেতর রাত্রিযাপন করতেন।
মন্তব্য করুন