(ভিডিও সহ) হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা শের-ই সওয়ার চাবুকমার (রঃ) এর উরস শুরু
স্টাফ রিপোর্টার॥ উপমহাদেশের অন্যতম সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অন্যতম সহচর হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা শের-ই সওয়ার চাবুকমার (রঃ) এর ৬৭৭ তম উরুস শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষে উরুসউদযাপন পরিষদ দুইদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। মিলাদ মাহফিল, গরু জবেহ, গিলাফ চড়ানো, জিগির আছকার ও শিরনী বিতরণ।
উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অন্যতম সঙ্গী হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রঃ) মৌলভীবাজার এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন। উরুস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৪ জানুয়ারী বাদ আছর থেকে মিলাদ মহফিল ও গরু জবহের মাধ্যমে উরুসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ওই দিন বাদ এশাহ জিকির আছকারও হবে। পরদিন ১৫ জানুয়ারী সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় গিলাফ চড়ানো এবং বাদ জোহর মিলাদ মাহফিল ও শিরনী বিতরণ করা হবে। এরপর বাদ এশা আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে উরুস। আর দরগাহ প্রাঙ্গণে মেলা চলবে ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারী পর্যন্ত।
উরুসকে কেন্দ্র করে বসেছে মেলা। মেলায় নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পাশাপাশি শিশুদের নানা ধরনের খেলনা ও খাবারের দোকান বসেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় নানা সামগ্রী নিয়ে আসেন দোকানীরা। তবে অন্যান্ন বছরের ন্যায় এ বছর মেলা জমে উঠেনি বলে দাবি করেছেন দোকানিরা।
মেলার দোকানী সাগর, অনন্ত, অনিত্ব, সায়েখসহ কয়েকজন জানান, এবছর মেলায় তেমন উৎসুক জনতা দেখা যাচ্ছে না। কাল হয়ত লোক সংখ্যা বাড়তে পারে। এবছরও দোকান নিয়ে বসেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরও দোকানের ফিসও বৃদ্ধি পেয়েছে।
উরুস ও মেলাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আগত ভক্ত অনুরাগী ও মেলায় আগত জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন ও মাজার পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে মাজার প্রাঙ্গণসহ আশপাশের এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহম্মদ বলেন, মেলা ও উরুসে পুলিশ প্রশাসনের ২স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। মেলায় প্রবেশ কারী সকল জন সাধারণকে চেকপোষ্টের মাধ্যমে চেকিং করে প্রবেশ করানো হবে। এছাড়াও পুরো উরুস ও মেলা প্রাঙ্গণ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে থাকবেন।
পীরে কামেল সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) সংক্ষিপ্ত জীবনী:
উপমহাদেশের খ্যাতিমান সাধক হযরত শাহ জালাল (রঃ) ইয়েমেনী তার ৩৬০ জন সহচর নিয়ে সিলেট অঞ্চলে ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন তাদেরই মধ্যে অন্যতম প্রিয় ও বিশ্বস্থ সহচর খ্যাতিমান সাধক হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা শেরই সওয়ার চাবুকমার বোগদাদী (রঃ)। তিনি কবে ইসলাম প্রচারের জন্য মৌলভীবাজার জেলায় আগমন করেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও সিলেটের আম্বরখানায় শিলালিপিতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় ১৩০৩ খৃষ্টাব্দে হযরত শাহ জালাল (রঃ) সিলেট আগমন করেন। শাহ জালাল (রঃ) সিলেট বিজয়ের পর তার সাথীদের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দিলে হযরত শাহ মোস্তফা (রঃ) নূর আলী শাহ নামক একজন সাথী নিয়ে মৌলভীবাজার জেলায় আগমন করেন। মৌলভীবাজার শহরস্থ তার মাজারে প্রতিদিন শত শত ভক্ত আশেকানদের আগমন ঘটে। প্রতি বাংলা সনের মাঘ মাসের পহেলা তারিখে তার বার্ষিক উরস অনুষ্ঠিত হয়। লক্ষ লক্ষ আশেকান দূর দুরান্ত হতে এই উরস উপলক্ষে মাজার প্রাঙ্গনে সমবেত হন। ওয়াজ-নছিহত, খতমে-কোরআন, জিকির আজকার, মিলাদ মাহফিল কাঙালীভোজ এবং মোনাজাতের ব্যবস্থা করা হয়। উরস উপলক্ষে মাজার পার্শ্ববর্তী চত্বরে এক মেলা বসে। সৈয়দ শাহ মোস্তফা শেরই সওয়ার চাবুকমার (রঃ) এর বিভিন্ন আলৌকিক শক্তির কথা শোনা যায়। প্রায় সাড়ে ছ শ বছর আগের কথা। তখন এ অঞ্চলের সামন্ত রাজা ছিলেন রাজা চন্দ্র সিংহ।
সদর উপজেলার বড়র্শীজোড়া পাহাড়ের সাতপাবিয়া টিলায় চন্দ্র সিংহের রাজধানী ছিল। একদিন রাজা চন্দ্র সিংহের সভাগৃহে এক ঘটনা ঘটে। রাজা যথাসময়ে সিংহাসনে উপবেশন করেন। এমন সময় দেখা গেল এক বিসধর সাপ ফনা বিস্তার করে সিংহাসনে বসে আছে। লোক সমাগমে সাপটি ভয় পেল না বা সিংহাসন ছাড়ার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। রাজ জ্যোতিষীরাও সাপকে হত্যা করতে বারণ করলেন। এদিকে দিনকয়েক পূর্ব হতে এক নবঘাতক বাঘ রাজধানীর আশেপাশে গরু-ঘোড়া ও নরহত্যা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। বাঘটিকে হত্যা করা যাচ্ছিল না। উপর্যুপরি দুটি ঘটনায় রাজা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। মন্ত্রীদের পরামর্শে কোন দৈবশক্তিসম্পন্ন ফকিরের কথা ভাবলেন। বর্তমানে মোস্তফাপুর গ্রামে সে ফকির কিছুদিন পূর্বে রাজার কাছে এসে একখানা বাড়ি নির্মানের স্থান চেয়েছিলেন। ফকির একজন মুসলমান হওয়ায় রাজা তার আবেদন শুধু অগ্রাহ্যই করেননি তাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার আদেশ করেছিলেন। কিন্তু ফকির তার কথায় কর্ণপাত করেননি। রাজা বলপূর্বক তাকে তাড়াবার বুদ্ধি বাদ দিয়ে যাদুমন্ত্র পরিচালিত লৌহবান, অগ্নিবাণ ইত্যাদি ব্যবস্থা অবলম্বন করেও ফকিরের কোন ক্ষতি করতে পারল না। সাপ ও বাঘের ভয়ে বাধ্য হয়ে রাজাকে আবার সেই ফকিরের শরণাপন্ন হতে হলো। ফকির রাজবাড়িতে এসে সাপটিকে মুঠোর ভিতর ধরে ফেললেন এবং তাকে হাতে করেই বাঘের খোজে বের হলেন। ফকিরকে দেখে বাঘটি স্তির ভাবে দাড়িয়ে থাকলো। ফকির এক লাফে বাঘটির ওপর চড়ে বসলেন এবং হস্তাস্থিত সাপটিকে চাবুক রুপে ব্যবহার করে বাঘটিকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন। তখন হতে ঐ ফকির শেরই সওয়ার চাবুক মার নামে পরিচিত হলেন। তিনিই প্রসিদ্ধ দরবেশ সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ)। তার সম্বন্ধে আরও অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। হযরত শাহ মোস্তফার পিতার নাম শাহ সৈয়দ সুলতান। তিনি ছিলেন বোগদাদের অধিবাসী। রাজা চন্দ্র সিংহ ফকিরের অলৌকিক শক্তিতে মুগ্ধ হয়ে তার একমাত্র কণ্যাকে তার কাছে বিয়ে দিলেন। পরবর্তীতে রাজা শাহ মোস্তফা (রঃ) হাতে সবকিছু অর্পন করে গয়াতীর্থ গমন করেন। চন্দ্র সিংহ রাজার কন্যার গর্ভে শাহ সৈয়দ নছরুল¬াহ জন্মগ্রহন করেন। সৈয়দ শাহ মোস্তফার অপর দুই পুত্র ছিলেন শাহ সৈয়দ ইছমাইল ও শাহ সৈয়দ হাছন। তারা তিন জনই আধ্যাতিœক শক্তি সম্পন্ন ছিলেন। ৭৪২ হিজরীর মাঘ মাসের পহেলা তারিখে তিনি ইন্তেকাল করেন। বর্তমান মাজার শরীফ এলাকায় তার পবিত্র দেহ সমাধিস্থ করা হয়।
মন্তব্য করুন