ভিসার অপেক্ষায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪জন : ২১ বছর ধরে আমেরিকা ডিবি লটারী বিজয়ীদের মানবেতর জীবন
হোসাইন আহমদ॥ দীর্ঘ ২১ বছর পার হলেও ১৯৯৫ সালে ডিবি লটারী বিজয়ীরা এখন পর্যন্ত ভিসা পাননি। ভিসার অপেক্ষায় এ পর্যন্ত ৪ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অধিকাংশ লোক জলন্ত অভিসাপের মধ্যে ভিটা মাটি বিক্রি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে একাধিক আবেদন করার পরেও আজ অবধি কনো সধ উত্তর পাচ্ছেন না তারা। আশার বাণী শুনে শুনে ধুকে মরছেন ডিবি লটারী বিজয়ীরা।
প্রাপ্য অধিকার আদায়ের জন্য ৪০০ জনের সমন্বয়ে আমেরিকান ডিভি লটারী বিজয়ী ও ভিসা বঞ্চিত বাংলাদেশি সমন্বয় পরিষদ নাকে গত ১৯৯৯ সালে মৌলভীবাজার সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কাছ থেকে সরকারি অনুমোদিত (রেজি নং-২০৩/৯৯) একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরিষদের ব্যানারে একাধিক বার ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার ইউনিট, সিলেট প্রেসক্লাব ও মৌভলীবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনসহ আরো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও এ বিষয়ে অদ্যবধি কোন সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, ভিসার প্রত্যাশায় মারাগেছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মইদাইল গ্রামের গোপেন্দ্র কুমার কর (মামলানং-৩৯০৫/৯৭), সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর গ্রামের আশিকুর রহমান তালুকদার (মামলানং-৫১৭৭/৯৭), সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার কাশিকাপন গ্রামের তেরাবান বিবি (মামলানং-৯২০২/৯৯) ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার দুঘর শ্রীমতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অধীর চন্দ্র পাল (মামলানং-৬০৫৮/৯৬)। বিভিন্ন জায়গায় অবস্থানরত আরো অনেকেই বয়েসের ভারে মারা যেতে পারেন বলে আশংঙ্খা করা যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৯৯৪-৯৫ সালে আমেরিকা সরকার ডিভি লটারী চালু করে বিশ্বের ৫৫টি রাষ্ট্র থেকে কৌটা ভিত্তিক হারে প্রতি বছর ৫৫ হাজার লোককে আমেরিকাতে স্থায়ী ভাবে বসবাসের সুযোগ দিয়ে ছিল। তন্মধ্যে বাংলাদেশি কৌটায় প্রতিবছর ৩৮৫০ জন আবেদনকারীর অভিবাসন নিশ্চিত করা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মার্কিন অভিবাসন নীতির আলোকে ডিভি লটারীর মাধ্যমে বাংলাদেশী আবেদনকারীদের উল্লেখ সংখ্যক মানুষের প্রয়োজনী পাসপোর্ট, স্পন্সরশীপ ও মেডিকেল টেস্ট ও ভিসা ফি প্রদান করেও কিছু অসাধু দূতাবাস কর্মকর্তার জালিয়াতির কারণে স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্টে যেতে পারেনি বিজয়ীরা। এর প্রেক্ষিতে সমন্বয় পরিষদ ২১ জানুয়ারী ১৯৯৯ সালে তৎকালিন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বরাবরে আবেদন করা হলে ঢাকা মার্কিন দূতাবাস ১২ এপ্রিল ২০০০ সালে মার্কিন অভিবাসন ভিসা প্রক্রিয়া করণ পদ্ধতির পরিবর্তন শিরোনামে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভিসা বঞ্চিতদের প্রতি রবি ও সোমবার ভিসা প্রদানের জন্য জাতীয় সকল পত্রিকায় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু দালাল চক্রের সিন্ডিকেটের সিরিয়েল বেচাকেনার কারণে ভিসা বঞ্চিতরা কাউন্টারে প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় তারা সরকারের সহায়থার জন্য ৯ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারের মাধ্যমে পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেন (স্মারক নং ৬০৩)। ওই ফাইলটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১০৫৯০ নং স্মারকে রক্ষিত রয়েছে। এই পদ্ধতিটিও বেস্তে যায়। শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকাকালিন সময়ে ২৯/০৮/২০০৫ইং তারিখে সুধাসধনে সাক্ষাৎকরে বিষয়টি অবগত করলে তিনি ক্ষমতায় গেলে দেখবেন বলে আশস্ত করেছিলেন। বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী ৯ মার্চ ২০১১ সালে মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির ১১ তম বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে বিষয়টি এনেছিলেন। ডিবি লটারী বিজয়ীদের ভিসা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককার্সের চেয়ারম্যান জুসেফ কাউলির বরাবরে আবুল হাসান মাহমুদ আলী স্বাক্ষরিত পত্র প্রেরণ করেন। এ বিষয়টি ১০ জুন ২০১৩ সালে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী জাতীয় সংসদে প্রশ্নোক্তর পর্বে বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. দীপু মনির কাছে জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ সময় সৈয়দ মহসিন আলী অসুস্থ থাকায় বিষয়টি আলোচনায় আসেনি। বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেও দীর্ঘ ২১ বছর অতিক্রম হলেও আজ অবধি কোন সমাধান পাননি তারা।
এ বিষয়ে আমেরিকান ডিভি লটারী বিজয়ী ও ভিসা বঞ্চিত বাংলাদেশি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সৈয়দ ইউনুছ আলী বলেন, আমাদের পরিষদের ভিসা বঞ্চিতদের অধিকাংশই হতদরিদ্র। ডিভি লটারী বিজয়ী হয়ে স্বপ্ন দেখছিলেন স্বনির্ভর ও উন্নয়নশীল দেশ আমেরিকায় গিয়ে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। কিন্তু দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী ও বাংলাদেশের কিছু দালালের যোগসাজেসে আমাদের নামে ছবি পরিবর্তন করে অন্য লোকদের যুক্তরাষ্ট্রে চালান দেওয়া হয়। অদ্যবধি আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ইতি মধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। আমেরিকার নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বিশ্ব নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প এর কাছে আমাদের বিষয়টি পর্যালোচনা করে হতদরিদ্র ডিভি লটারী বিজয়ীদেরকে মানবধিকারের দেশে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার আবেদন এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তেক্ষেপ কামনা করেন।
মন্তব্য করুন