ভ্রাম্যমান আদালত এর অভিযান কমলগঞ্জে বিয়ে বাড়ি থেকে বরের পলায়ন!
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি॥ ৭টি মাইক্রোবাস যোগে প্রায় ১০০জন বরযাত্রী নিয়ে কনের পিত্রালয়ে হাজির হয় মইনুল ইসলাম (৩০) নামে এক বর। প্যান্ডেলে চলছে বরযাত্রীসহ অতিথিদের খাবারের আপ্যায়ন। এক পাশে স্টেজে মাথায় পাগরী, হাতে রোমাল নিয়ে লাজুক লাজুক চোখে বসে ছিল বর মইনুল। ঘরের কোনে খাটের উপর কাপড় প্যাঁচিয়ে বসে কনের সাজে বসে আছে ৯ম শ্রেণীর মাদ্রাসার ছাত্রী (১৪) (তাহমিনা আক্তার)। আত্মীয়স্বজনরা এসে বলছেন ‘ বর যাত্রী বাড়িতে আইয়া পড়ছে, ছবি তুলব, ভিডিও করব, তাড়াতাড়ি সাজগোছ শেষ কর’। চলে সাজানো-সাজানোর কাজ। এমন সময় বাল্য বিয়ের খবর শুনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান এর খবর পেয়ে বরের পলায়ন! ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ২০ জুলাই দুপুরে কমলগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব রামপাশা গ্রামে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ পৌর এলাকার সফাৎ আলী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যয়রত ১৪ বছর বয়সী ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী (তাহমিনা আক্তার) এর ঘটা করে বিয়ের প্রস্ততি চলছিল বুধবার দুপুরে। গোপন সংবাদ পেয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল আলম পুলিশ নিয়ে দ্রুত ছুটে যান কনের বাড়ি কমলগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের পূর্ব রামপাশা গ্রামে। সঙ্গে ছুটে আসেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহেদা আক্তারসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট ভ্রাম্যমান আদালত নিয়ে আসার খবরে বর ও কনের বাড়ির লোকজনরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি শুরু করেন। বুধবার বিকাল ৩টায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্যাট রফিকুল আলমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়। কিন্তু ততক্ষনে কাজী আব্দুল কাইয়ুম বিয়ের সকল কাজ সম্পন্ন করে ফেলেন। কনের বাড়িতে প্রশাসন লোকজন পৌছার টের পেয়ে বর মইনুল ইসলাম প্যান্ডেল হতে পলায়ন করেন এবং কাজী আব্দুল কাইয়ুম সটকে পড়েন। বরের বাড়ি কুলাউড়ার উপজেলার শ্রীপুর নামক গ্রামে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল আলম স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিল রাসেল মতলিব তরফদার (ফখরু) ও মহিলা কাউন্সিলর শাপলা আক্তারের উপস্থিতিতে কনের পিতা আলকাছ মিয়া ও মাতা লুৎফা বেগমকে ডেকে এনে বাল্যবিবাহ সরকারী বিধি নিষেধের কথা বলেন এবং মেয়ের ১৮ বছর না হওয়ায় বিয়ে বন্ধের আদেশ দেন। এতে আইনী নিষেধাজ্ঞা আছে। আইন অমান্য করে বিয়ে দিলে তা হবে দন্ডনীয় অপরাধ বলে তিনি কিশোরী বাবাসহ পরিবার সদস্যদের অবহিত করেন। জন্ম নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী ১৮ বছর পুর্ণ না হওয়া কনেকে স্থানীয় কাউন্সিলরের জিম্মায় রেখে দিয়ে বলা হয় স্বামীর বাড়িতে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এদিকে ভ্রাম্যমান আদালত বিয়ে পন্ড করে দেয়ায় বরযাত্রীরা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল আলম বলেন, কমলগঞ্জ উপজেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করতে কাজ চলছে। তার অংশ হিসাবে মেয়েটির বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন