(ভিডিওসহ) মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে দেশের চা বাগান গুলোতে আজও দুই ঘন্টার কর্ম বিরতি পালন
বিকুল চক্রবর্তী॥ মজুরী বৃদ্ধির দাবিতে দেশের চা বাগানগুলোতে আজও দুই ঘন্টার কর্ম বিরতি পালন করেছেন চা শ্রমিকরা। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বুধবার সকালে চা শ্রমিকরা শ্রীমঙ্গল ভাড়াউড়া চা বাগানের নাচঘরের সামলে মিলিত হন। এ সময় নিজেদের অধিকার বাস্তবায়নের দাবী নিয়ে বক্তব্যদেন চা শ্রমিক নেতারা। পরে শ্রমিকরা চা বাগানের সেকশনে মিছিল করে।
চা শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দ্বি-বার্ষিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৯ মাস আগে তুবুও চা শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশীয় চা সংসদের দ্বি-বার্ষিক চুক্তির সমোজতার কুল কিনারায় নেই।
এই চুক্তির জন্য দ্রুত বৈঠকে বসার জন্য এবার আন্দোলনে নেমেছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। আন্দোলনের প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে কর্মবিরতির ঘোষনা দেয় শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি জানান, এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ও বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত দেশের সকল চা বাগানে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। একই ধারায় বৃহস্পতিবারও করা হবে। তবে কিছু চা বাগানে মঙ্গলবার পবিত্র আশুরার বন্ধ থাকায় সে সকল চা বাগানে তা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বিজয় হাজরা জানান, এই তিন দিনের কর্মসূচীতে মালিক পক্ষ আলোচনার সময় না দিলে নতুন করে আরো বড় কর্মসূচী দেয়া হবে। তিনি জানান, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩শ টাকা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবী সম্বলিত ডিমান্ড বা দাবীনামা তারা ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারী সাবমিট করেন। মালিক পক্ষের টালবাহানায় তা ১৯ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে।
চা শ্রমিক নেতা পংকজ কন্দ জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ১১ পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগানসহ সারা দেশের ২৪১টি চা বাগানে তিন দিনের জন্য এ কর্মবিতরতি দেয়া হয়।
আর চা জনগোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি শ্রীমঙ্গল রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চা শ্রমিক নেতা বিজয় বুনার্জী জানান, চুক্তির মেয়াদ একটা শেষ হয়ে নতুন করে আরেক চুক্তির সময় চলে এসেছে। নিয়ম মতো আইন অনুযায়ী চা শ্রমিকদের বেতন বাড়তো আরো ১৯মাস আগেই। কিন্তু মালিক পক্ষের টালবাহানায় এক চুক্তির মেয়াদ অতিক্রম করে এখন পরবর্তি চুক্তির কাছাকাছি।
চা শ্রমিক নেতা পরিমলসিং বারাইক জানান, নির্দিষ্ট সময়ে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে দেড়বছর আাগেই শ্রমিকদের বেতন বাড়তো। এ অবস্থায় বর্তমান উর্ধগতির দ্রব্যমুল্যের বাজারে চা শ্রমিকরা কষ্ট করে জীবনানিপাত করছেন।
চা শ্রমিক নেতা পরেশ কালিন্দি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে বাজার দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে আমাদের চা-শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি দিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করছেন। প্রতিটি পরিবারে খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সাথে বৈঠক করছি। কিন্তু তারা বারবার টালবাহানা করে মজুরি বৃদ্ধি করছেন না। এতে করে শ্রমিকরা ভিতরে ভিতরে ক্ষোভে ফেপে উঠছেন। দেশ-বিদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি বিবেচনা করে নুন্যতম মানবাধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। চা শ্রমিকের হাজিরা ১শ ২০ টাকা থেকে ৩শ টাকায় বৃদ্ধি করার দাবি করে আসছেন গত ১৯ মাস ধরে।
তিনি বলেন, মালিকপক্ষ ইতিমধ্যে ১৪ টাকা বর্ধিত করার প্রস্তাব দিয়েছে। ১৪ টাকা বৃদ্ধি হলে একজন শ্রমিকের মজুরী হবে ১৩৪ টাকা। এই ১৩৪ টাকা দিয়ে কীভাবে একজন শ্রমিকের জীবন চলবে? সারাদিন পরিশ্রম করে এক লিটার পেট্রোলের দামও হবে না। মানসম্মত একটি মজুরী আশা করেন মালিক পক্ষের কাছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আমাদের চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাগান মালিকদের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী দুইবছর পর পর মজুরী বৃদ্ধি করার কথা থাকলেও মালিকরা চুক্তির আইন ভঙ্গ করছেন। গত ২০মাস ধরে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে না।
তিনি বলেন, ৩ দিনের মধ্যে তাদের দাবি না মানা হলে দেশের সব বাগান একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি তারা রাজপথে এসে দাড়াবেন তাঁরা। ডাক দিবেন বৃহৎ আন্দোলনের ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্দ শিবলী জানান, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কর্মবিতরতি দিলে উৎপাদনে ঘাটতি হবে। তা ছাড়া শ্রমিকরাও আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়বে। তিনি জানান, প্রতি চুক্তিতেই শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি করা হয়। এবারও করা হবে। কিন্তু চায়ের দাম বাড়েনি দীর্ঘদিন এটাও বিবেচনার বিষয়।
মন্তব্য করুন