মধ্যবিত্তদের চাপা কান্না 

April 11, 2020,
আশরাফ আলী: বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদূর্ভাব বেড়েই চলেছে। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। বাড়ছে লাশের মিছিল। সেই সাথে অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। করোনার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো পড়েছে চরম আর্থিক সংকটে।
নিম্ন আয়ের মানুষেরা সরকার ও উচ্চবিত্তদের কাছ থেকে সহায়তা পেলেও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তা থেকে বঞ্চিত। এই দূর্যোগপূর্ণ সময়ে সামাজিক অবস্থান, মানবিক মূল্যবোধ, আধুনিক ধ্যানধারণা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ অন্য বিষয়গুলোর কারণে মুখফুঁটে বলতে পারছেনা তাদের অসহায়ত্বের কথা।
সমাজের বড় একটি জনগোষ্ঠী মধ্যবিত্ত। দেশের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির নেপথ্যে থেকে বড় ভূমিকা রাখে এরাই। বাজেট ঘোষণার পর কিংবা অন্য কোনো কারণে পণ্য বা সেবার দাম বাড়লে বলা হয় ‘চাপে পড়বে মধ্যবিত্ত’।
মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা:
দেশের প্রচলিত আইনে মধ্যবিত্তের কোন সংজ্ঞা নেই। গত ৪৮ বছরেও বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়নি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বিচ্ছিন্নভাবে মধ্যবিত্ত নিয়ে গবেষণা করার চেষ্টা করেছে, তবে তা কেবলই আর্থিক পরিমাপ দিয়ে।
অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন মানুষ দৈনিক দুই হাজার ১২২ কিলোক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করলে কিংবা দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯২ ডলারের কম হলে তাকে দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দারিদ্র্যসীমার এই সংজ্ঞা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো থাকেন অনেক সচেতন। তাদের পরিবারের খরচে হন হিসাবী। অহেতুক টাকা খরচ করেননা। প্রতিমাসে যে বাজেট থাকে তাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। এর একটু ব্যতিক্রম হলেই তাদের পড়তে হয় বড় সমস্যায়।
মধ্যবিত্ত পরিবার কোন মাসে বাড়তি খরচ করলে অন্য কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য তাদের ঋণ করতে হয়। আর এ ঋণের বোজা টানতে হয় সারাটি বছর। যতক্ষণ না তাদের আয় বাড়ে।
আমার পরিচিত এক ভাই চাকুরী করেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। তাকে কল দিলাম কি অবস্থায় আছেন জানার জন্য। তিনি বললেন গত মাসের বেতন পাননি। এখন কিভাবে চলবেন বুঝতে পারছেন না। অনেকটা অসহায় ভাবে আছেন তিনি।
আমি যে বাসায় ভাড়াটিয়া থাকি তিনি একজন লন্ডন প্রবাসী। ওনার মুখ থেকে শুনলাম তিনি ৬২ সালে লন্ডন যান। এরপর থেকে অধ্যবধি লন্ডন অবস্থান করছেন পরিবার পরিজন নিয়ে। প্রতি বছর দেশে একবার আসেন। টাকা পয়সাও আছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় ২৬ মার্চ থেকে। তার একদিন আগে আমি বাড়ি চলে আসি জরুরী প্রয়োজনে। যার দরুন বাসায় যাওয়া আর সম্ভব হয়নি। কয়েকদিন আগে কেয়ারটেকার কল দিল। জিজ্ঞেস করল কেমন আছি। তার সাথে আলাপ হলো বাসা ভাড়া নিয়ে। তাকে বললাম বর্তমানে খুব কষ্টে আছি। গত মাসের বেতন পাইনি। করোনার প্রভাবে আর্থিক সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠান বেতন দেয়নি।বাসা ভাড়াটা যদি এমাসে না নিতেন তাহলে অনেক উপকার হতো। কেয়ারটেকার বলল ঠিক আছে আমি মালিকের সাথে কথা বলব।
কেয়ারটেকার মালিকের সাথে কথা বলে যা বলল  তার কথা শুনে আমার আক্কেল গুড়ুম অবস্থা। মালিক কেয়ারটেকার কে বলল ভাড়াটিয়া যদি ভাড়া না দিতে পারে তাহলে তুমি দিয়ে দাও।
সরকার ও বিত্তশালীদের বলব আপনারা যেভাবে নিম্ন বিত্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তেমনি মধ্যবিত্তদের পাশে দাঁড়ান। তাদের দিকে নজর দিন। তাদের সাহায্য করেন এটাই থাকবে। মানুষ এটাই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে মনে রাখবে।’
মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫ জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি সেফটিনেটের বাইরে থাকা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোন বাস্তবায়ন চোখে পড়ছেনা।
আমরা যারা মধ্যবিত্ত তাদের চাপা কান্না কেউ দেখেনা। আমরা সব কিছু মুখ বুঝে সহ্য করি। আমরাতো কারো কাছে হাত পাততে পারিনা। কারো কাছে সাহায্য চাই না। এই জন্য কি আমাদের কষ্টটা একটু বেশিই?
লেখক: আশরাফ আলী, সাংবাদিক ও কলামিস্ট , মৌলভীবাজার, ১১ এপ্রিল ২০২০ ইং।  মোবাইলঃ ০১৭৭১৮৭৮০৮৭
সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

১টি মন্তব্য “মধ্যবিত্তদের চাপা কান্না ”

  1. ভাই আমরা এখন ও বেতন পাইছি না, বেতন টাকায় সংসার চালাই, খুব সমস্যায় আছি,আপনার পোস্ট টা খুব ভালো লাগছে,

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com