মমত্ববোধের অনন্য দৃষ্টান্ত বড়লেখা হাসপাতালে সুস্থ হয়ে উঠছেন দুর্ঘটনায় আহত ভারসাম্যহীন নারী
আবদুর রব॥ মানুষ মানুষের জন্য এ কালজয়ী গানের কথাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে দুই কর্মজীবি যুবক আব্দুল হাছিব ও কামাল হোসেন আবারো স্মরণ করিয়ে দিলেন মানবতা ও মমত্ববোধ এখনও হারিয়ে যায়নি।
মানসিক ভারসাম্যহীন নাম পরিচয় অজানা নারী (৩০) সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে রাস্তার পাশে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। কিন্তু যন্ত্রণার কথাটি মুখ ফুটে কাউকে বলতে পারছিলেন না। অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছন্নছাড়া দরিদ্র নারীর যন্ত্রনার কাকুতি উপভোগ করছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে কিংবা একটু প্রাথমিক চিকিৎসায় এগিয়ে আসেনি। এরই মধ্যে ডিউটির ফাঁকে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন ফুড এন্ড বেভারেজ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি আব্দুল হাছিব ও কামাল হোসেন। রাস্তায় পড়ে কাতরানো দেখে মানবতা ও মমত্ববোধ থেকে তারা আহত দরিদ্র নারীর সাহায্যে এগিয়ে যান। মানসিক ভারসাম্য ও নাম পরিচয়হীন নারীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভর্তি করেন বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কুলাউড়া-চান্দগ্রাম সিঅ্যান্ডবি আঞ্চলিক সড়কের গাজিটেকা যাত্রীছউনি এলাকায় এ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে ।
স্থানীয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কুলাউড়া-চান্দগ্রাম সিঅ্যান্ডবি আঞ্চলিক সড়কের গাজিটেকা যাত্রীছউনি এলাকায় সড়ক গুরুতর দূর্ঘটনায় আহত হন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে তিনি কাতরাচ্ছিলেন। এসময় ফুড এন্ড বেভারেজ এর দুই বিক্রয় প্রতিনিধি তাকে উদ্ধার করে হাসপতালে ভর্তি করেন। ৪দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকও পরম মমতায় তাকে চিকিৎসা প্রদান করছেন। উৎসুক জনতাও ওই নারীকে দেখার জন্য হাসপাতালে ভীড় করছেন। বিক্রয় প্রতিনিধি হাসিব এই সংক্রান্তে একটি স্ট্যাটাস তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে রোববার ২৫ ডিসেম্বর রাতে সরেজমিনে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় ১৬ নং বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন নাম পরিচয় অজানা ওই নারী। কথা বলে তার নাম-ঠিকানা জানার চেষ্টা করেও নিশ্চিত করা যায়নি নাম-ঠিকানা।
ওই নারীকে দেখতে হাসপাতালে আসা প্রভাষক দীপক কুমার বিশ্বাস জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন মানসিক ভারসাম্যহীন নারিকে বাঁচিয়ে এই দুই যুবক মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তা সত্যি প্রসংশনীয়। একেই বলে মানবতা। তিনি ফুড এন্ড বেভারেজ এর বিক্রয় প্রতিনিধি হাসিব ও কামাল হোসেনকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
হাসপাতলে দায়িত্বরত স্টাফ নার্স মণি মালা দেবি জানান, ‘হাসপাতালে ভর্তির সময় অজ্ঞাত নারীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল। পায়ে আঘাতের ফলে মাংসে পঁচন ধরেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতি হওয়া পায়ে ৩১টি সেলাই দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ হচ্ছেন। চিকিৎসার জন্য অনেক ওষুধ লাগছে। মুখে সে ওষুধ গ্রহণ করতে পারছে না। হাসপাতালে যা ওষুধ আছে আমরা তাই দিচ্ছি। এছাড়া যারা তাকে ভর্তি করেছেন তাঁরাও ওষুধ দিচ্ছেন।
উদ্ধারকারী হাসিব বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষ যাওয়া-আসা করলেও কেউ ওই নারীর সাহায্যে এগিয়ে আসেননি। ডিউটির ফাঁকে আমিও আমার এক সহকর্মী রাস্তা দিয়ে যাবার সময় ওই নারীকে আহত অবস্থায় কাতরাতে দেখে এগিয়ে যাই। পরে গুরুতর আহতবস্থায় উদ্ধার করে হাসপতালে ভর্তি করি। তার চিকিৎস্বার্থে অনেক ওষুধ লাগছে। প্রতিদিন আমরা সাধ্যানুযায়ী ওষুধ কিনে দিচ্ছি। মানবিক কারণে আমরা এ কাজটি করছি। অসহায় এ নারীকে সম্পূর্ণ সুস্থ্য করতে সমাজের সুহৃদ ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে সহায়তার আবেদন করছি।’
মন্তব্য করুন