মরুর বুকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান : দুবাই মিরাক্কেল গার্ডেন
তোফায়েল পাপ্পু দুবাই থেকে॥ কবির ভাষায় ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে মরু ভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়। তবে এ বিখ্যাত উক্তিটির বাস্তবতাও পাওয়া গেল দুবাইয়ে। যেখানে ভালবাসা আর অতিযত্নে এমন অসম্ভবকেই সম্ভব করা হয়েছে। মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে যেখানে গাছ খুঁজে পাওয়াটা কঠিন, সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। যার নাম দেওয়া হয়েছে মিরাক্কেল গার্ডেন।
সুন্দর চিরকাল-ই সুন্দর । কিন্তু এখানে না আসলে অদ্ভুদ সুন্দর দেখা হতো না। কিছু সুন্দর, কিছ ুমুহূর্ত, কিছু আবেগ, ভাষায় প্রকাশ করা যায়না। রাজ্যটাই যেন ফুলের। চারিদিকে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নানা দৃশ্য। একটু উপর থেকে দেখলে মনে হয় এ যেন এক ফুলের সাগর। বিশ্বের সব চেয়ে বড় ফুলের বাগান এটি। এখানে প্রবেশ করে কারও বোঝার উপায় নেই মরুভূমির কোন দেশে আছি না কি চিরসবুজ কোনো উদ্যানে আছি। চারদিকে নানা রঙের বাহারি ফুলের সমারোহ। ফুল দিয়ে যে কত অবাক করা আর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করা সম্ভব তা দুবাই মিরাকল গার্ডেন না দেখলে বোঝা যাবে না।
কারণ ফুল মানুষকে কতটুকু আনন্দ দিতে পারেতা দর্শনার্থীদের ভিড় দেখলেই বোঝা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালান দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার পরেই মিরাক্কেল গার্ডেন এখন বিশ্ব পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় এক স্থান। এখনে গেলে সব বয়সের মানুষের মনটাকে নিমিষেই ভালো করে দেয়। মরুভূমির দেশেও যে আরও অনেক কিছুই আছে যা আমাদের দৃষ্টি ও মনকে বিমোহিত করে চোখের পলকেই। যেদিকে চোখ যায় রাশি রাশি ফুল গাছের মনোমুগ্ধকর সব আকৃতি দিয়ে সাজানো বাগান। আর আমিরাতের বিভিন্ন ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাহারি সব প্রাকৃতিক চিত্রকর্মের মাধ্যমে।
মিরাক্কেল গার্ডেন এর ফুলবাগানের মোট আয়তন ৭২,০০০ স্কয়ার মিটার। যেখানে জুড়ে আছে শত শত রকমের শুধু ফুল আর ফুল। হাটার রাস্তা চার কিলোমিটার। আর মিরাক্কেল গার্ডেন এর অফিসিয়াল তথ্যমতে, গোটা পার্কে সবসময় ফুটে থাকে বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন ৪৫ মিলিয়ন ফুল। তবে বর্তমানে ফুলের সংখ্যা প্রায় ৫০ মিলিয়নের কাছাকাছি। মিরাক্কেল গার্ডেনের সামনেই বাম দিকে চোখে পড়বে আরেকটি বিস্ময়।
পৃথিবীর দীর্ঘতম আয়তনের এবং সবচেয়ে বড় ওয়ালের ফুলের বাগান এর অপার দৃশ্যটি এখান থেকেই মুগ্ধতা ভরে দেখতে পাবেন। এ কারণেই মিরাক্কেল গার্ডেনটির নাম উঠেছে গিনিস বুকে। নানা রঙের ফুল দিয়ে ভিন্ন ভিন সাজে নানা ধরনের আকৃতিতে ফুলগুলো কে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফুল গাছগুলোকে বিভিন্ন আকৃতি দিয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেওয়া হয়।
বাগানে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পুরনো নানা মডেলের গাড়ি, ফুলের জাহাজ, ফুলের বিছানা, ফুলের পাহাড়, ফুলের ঘোড়ার গাড়ি, ফুলের বাড়ি, ফুলের ঘর, ফুলেরসাগর, বরফের ঘর, ফুলের দোলনা, ফুলের সবচেয়ে বড় দেয়াল, পিরামিড, চলমানপানির টেপ, ফুলদিয়ে তৈরিময়ূরপঙ্খী, প্রজাপতি, ফুলের ঝর্ণা ধারা মানবাকৃতিসহ বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া হয়েছে যা ঋতু ভিত্তিক রং বদলায়। কোন মানুষের মন খারাপ থাকলে এমন দৃশ্য উপভোগ করলে মুহূর্তেই ভালো হয়ে যাবে।
বাগানে ফুল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আরব আমিরাতের জাতীয় পাখির আকৃতি। কলস থেকে পানির মতো করে ফুল ঝরছে এমন ও অনেক চোখ জুড়ানো দৃশ্য চোখে পড়ে বাগানটি তে। এছাড়া ফুলের দুর্গ, মিকিমাউস, রয়েছে ফুল দিয়ে সাজানো এমিরেটস এয়ার লাইন্সের এয়ারবাস যা সত্যিই দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে।
ফ্রেন্ডস অব আরব আমিরাত হিসেবে বিভিন্ন দেশ এর ইতিহাস, ঐতিহ্যগত কিছু ছবি যেমন- পতাকা,ফুল,পাখি, ফল ইত্যাদি তৈরী করে রাখার সুন্দর একটি জায়গা আছে এক পাশে। যা প্রতিবছরপর্যায়ক্রমে বদলকরা হয়। বাংলাদেশের পতাকা এবং শাপলাও কর্তৃপক্ষের ভালোবাসায় সেখানে স্থান পেয়ে ছেবি গতকয়েক বছরের মধ্যে।
নয়না ভিরাম এ বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্তমানে টিকেটের মূল্য রাখা হয়েছে বড়দের জন্য ৭৫ দিরহাম, বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় দুইহাজার দুইশত পঞ্চাশ টাকা আর ছোটদের জন্য ৫৫দিরহাম, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক হাজার ছয়শত পঞ্চাশ টাকা। ২ বছরের কম বয়সীদের জন্য প্রবেশ ফ্রি। দুবাই এর যেকোন এলাকা থেকে প্রাইভেট গাড়ি, টেক্সি, মেট্রো বাস এ করেও মিরাক্কেল গার্ডেন যাওয়া যায়।
মন্তব্য করুন