“মহান আল্লাহ ও রাসুল প্রেমে ফানাফিল্লাহ-ধর্ম, রাষ্ট্র, সমাজচিন্তক ও মানব প্রেমিক আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ বন্ধুবরেষু, সুস্ব্যাস্থ, দীর্ঘয়ূ ও কল্যান কামনায়”

May 16, 2019,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ মহা পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধান মোতাবেক মানবজাতির আদি পিতা নবী আদম (আঃ)। নবী আদম (আঃ) এর নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব দূরীকরনে সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ তায়ালা বিবি হাওয়াকে সৃষ্টি করতঃ ফেরেশতা মারফত সাদি মোবারক সুসম্পন্ন করিয়েদেন। তার ঐ ইচ্ছা ও দয়ায় আদম-হাওয়ার জোড়ায় জোড়ায় সন্তান জন্ম এবং ভাই বোনের মধ্যে শুভ বিবাহের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি এবং সমাজ সভ্যতা গড়ে উঠতে থাকে। এই প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষিতে আমাদের স্রষ্টাও প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা আসমানী কিতাব আল কোরআনে ঘোষনা করেন “খালাকনাকুম আজওয়াজা” আমি আমার সৃষ্টিকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করিয়াছি।
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে ÒMen is a social rational animalÓ সমাজ বদ্ধ হয়ে সংঙ্গবদ্ধ জীবন যাপন মানুষের সহজাত স্বাবাবিক প্রবৃত্তি। আধুনিক রাষ্ট্র গঠনের পূর্বেই মানুষ গোত্র ও সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করতেন।
আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (আঃ) নবুওয়ত প্রাপ্তি আরবে ইসলামী সা¤্রাজ্য প্রতিষ্ঠারপূর্বেই মক্কায় হিলফুল ফুযুল নামে একটি সামাজিক সেবা সংঘটন করতঃ আরবের অন্ধকার যুগে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে সমাজ বিকাশ ও সমাজ উন্নয়নে ঐতিহাসিক অবদান রাখেন। আল আমিন উপাধি প্রাপ্ত হন।
ব্যাক্তি, পরিবার, গোষ্ঠি ও সম্প্রদায় নিয়ে সমাজ। এই সমাজের জনে জনেই জনতা। এই জনতার মাঝে জনে জনে ব্যাক্তিতে ব্যাক্তিতে গড়ে উঠে ভালবাসা ও বন্ধুত্বের সেতু বন্ধন। রাজা বাদশা মৃত্যুর পর সিংহাসন নিয়ে ভ্রাতৃ ঘাতি কলহ-কোন্দল-যুদ্ধ বিদ্রোহ হয়, মধ্যবিত্ত সমাজে পিতৃ সম্পত্তি নিয়ে দেওয়ানি আদালতে-পার্টিশন স্যুট- সহ বিভিন্ন আইনী আশ্রয় নেওয়া হয় কিন্তু বন্ধুত্ব শর্ত- স্বার্থের উর্দ্ধে। ব্যবসায়িক অংশীদারদের মধ্যে অংশীদারিত্বের দলিল ডিড অব পার্টনার্স হয়, পার্টনার শীফ ডীড এর চুক্তি ভঙ্গঁ হলে অংশীদারদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা সালিশ পঞ্চায়েত হয়, অবশ্য ব্যবসায়ীক অংশীদারগণকে পার্টনার, বিজনেস পার্টনার-বলা হয়, বন্ধু বলা
হয় না, বন্ধুতে-বন্ধুতে-ডিড অব পার্টনার চুক্তিনামা নেই, আছে-থাকে-দিবারাত্রির অলিখিত মহাকাব্য। বন্ধুত্বের মধ্যে লেখাপড়া-ছাত্র জীবনের বন্ধুত্বই পরিক্ষিত-মজবুত। বাল্য-কৈশার-যৌবনের-উদার-মহৎ- মনমানিষকতা ব্যবসা বানিজ্য দুনিয়া দারির স্বার্থের সংঘাত নেই, যান্ত্রীক জীবনের কলহ কোন্দল কোলাহল-হলাহল নেই, ছিল-না- অন্ততঃ আমাদের কালে-সেকালে-সেই পঞ্চাশ-ষাট দশকে। ঐ দশকের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী মৌলভীবাজার মহাবিদ্যালয় এর ছাত্র ছিলাম। শহরস্থ শ্রীমঙ্গল সড়ক নিবাসি সৈয়দ ফারুক আহমদ, সৈয়দ ফজলুল্লাহ আমার সহপাঠি ছিলেন।
ষাটের দশকের এই ছোট মহকুমা শহর ছিল ছিমছাম। এখনকার মত পীচ ঢালারাজ পথ ও বৈদ্যোতিক বাতি ছিলনা। সন্ধ্যায় লাইট পোষ্টে টাউন কমিটির পক্ষ থেকে তেলের বাতি জ্বালিয়ে দেয়া হত। আধো-আলো-আধারের নৈশ নাগরিক জীবনে শান্তি, সৌহার্দ্য-সম্প্রিতি ছিল।
বিকেল বেলা আমরা বন্ধু মহল উল্লেখিত গণ ছাড়া জয়নাল হোসেন, নজিবুর রহমান চৌধুরী, গাজি গোলাম ছরোয়ার, আজিজুল হক ইকবাল, জহিরুদ্দীন আহমদ, এ.এস.এম. এহিয়া খাঁন, হিফজুর রহমান, হারুনুর রশীদ, সৈয়দ জয়নাল উদ্দীন, ফারুক আহমদ চৌধুরী, সৈয়দ বজলুল করিম, আবু জাফর চৌধুরী প্রমুখ দল বেঁধে শহর ময় হৈ হোল্লোড় করে ঘুরে বেড়াতাম। তখন সন্ত্রাস-সংঘর্ষ-নৈরাজ্য-নৈরাশ্য ছিল না আমি ছাত্র রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতায় সম্পৃক্ত, জড়িত ও নেতৃত্বে থাকলেও বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ, সৈয়দ ফজলুল্লাহ প্রমুখ ছিলেন নিরীহ, শান্ত প্রকৃতির। হালকা পাতলা গঠনের মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট গোলগাল উজ্জল শ্যাম বর্ণের সৈয়দ ফারুক আহমদ ছিলেন একজন নিরহ, শান্তি প্রিয় বিনয়ী ভদ্রলোক। আটষট্টি সালে গ্রেজুয়েশন ডিগ্রী লাভের পর আমরা ছিটকে পড়ি। পিতা-মাতার নির্দেশে অধিকতর উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য আমি ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স প্রিলিমিনারীতে ভর্ত্তি হয়ে ঢাকা বাসি হই। অতঃপর উনসত্তোরের ছাত্র গণঅভ্যোত্থান, সত্তোর সালের সাধারণ নির্বাচন, একাত্তোরের মহান মুক্তি যুদ্ধে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ এর মাধ্যমে আমি ভিন্ন জগতের বাসিন্দা হওয়াতে ষাটের দশকী বন্ধু মহলের সঙ্গেঁ সাময়ীক ভাবে সম্পর্কের ছেদ হয়। আমার প্রিয় একজন ভারতীয় শিল্পীর আধুনিক বাংলা গান- এক বৈশাখে দেখা হল দু’জনার, জৈষ্টে হল পরিচয়, আসছে আষাঢ় মাস-কি জানি কি হয়” গীতি কবির মত-কি জানি কি হয়- মর্মে আমার মনে কোন শংকা ছিলনা, এখনও নেই। কলেজ লাইফে ষাটের দশকের শুরুতে আমরা বন্ধুমহল আমাদের মায়ায় মমতায়, আন্তরিকতাও সহৃদয়তায় ভালোবাসও বন্ধুত্বের যে বীজবপন করে ছিলাম পরবর্তী কালে পরিণত বয়সে সেই বন্ধুত্ব আমাদের ছুন্নতে- মেহনতে-ঈমান আমলে আরো মজবুত হয়েছে, ষাটের দশকের চারা বৃক্ষ গুলি বেড়ে উঠে মহীরুহে পরিণত হয়েছে ছায়ায় মায়ায় বর্ণীল বর্ণাঢ্য ও সবুজাভ করছে আমাদের বিবর্ণ পৃথিবী, আমাদের রঙ্গীঁন ভালোবাসার নন্দন কানন। ষাটের দশকের দূরন্ত নওযোয়ান গণ এখন পক্ষকেশী, জীবন সায়াহ্ণে-পড়ন্ত বেলায়।
পেশা হিসাবে অধ্যাপনাও সাংবাদিকতা আমার প্রিয়, কর্মজীবনের শুরুতে এই দুই পেশার সঙ্গেঁ জড়িত থাকলেও বিভিন্ন কারনে মাস্টার্স ও ল’ শেষে আমি পারিবারিক কারণ ও প্রয়োজনে মৌলভীবাজার বারে যোগদান করি। মহান আল্লাহর দয়াও বাপ-ভাইয়ের বদৌলতে গ্রামের বাড়িতে বিশালভূ-সম্পত্তি এবং শহরেও বাসাবাড়ি প্রাপ্ত হই। এই শহরেই স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করি।
স্বাধীনতা উত্তরকালে আমাদের বন্ধু মহলের মধ্যে যারা সরকারি চাকরিতে গিয়েছেন তারা স্ব স্ব বিভাগীয় শীর্ষ পদে আরোহন করতঃ সুনামের সঙ্গেঁ চাকরি শেষে অবসর গ্রহণ করেছেন। শিক্ষা বিভাগে যারা যোগ দিয়েছিলেন তারা পূর্ণ প্রফেসর-প্রিন্সিপাল হয়েছেন। প্রশাসনে পূর্ণ সচিব, পুলিশে আইজিপি পর্য্যন্ত হয়েছেন।
সৈয়দ ফারুক আহমদ শিক্ষিত সম্ভান্ত স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান হিসাবে স্বাধীন ভাবে ব্যবসা-বানিজ্য শুরু করেন। সৈয়দ ফারুক আহমদ ব্যবসায়ী হিসাবে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা ও কনট্রাক্টারিতে জড়িত ছিলেন। দুই ব্যবসাতেই কিছু ছয়-চাইর থাকায় তাঁর তা ভালো লাগেনি। দুই ব্যবসা পরিত্যাগ করে বুদ্ধিমান-মেধাবী ও ইমানদার ব্যবসায়ী সৈয়দ ফারুক আহমদ কমিউনিটি সেন্টার ও ফাস্ট ফুডের ব্যবসা শুরু করেন। এই দুই ব্যবসায় তাকে পাইওনিয়ার-পথপ্রদর্শক বলা যেতে পারে। শ্রীমঙ্গঁল রোডে তাদের পারিবারিক ধানী জমিতে গড়ে তুলেন বেঙ্গঁল কমিনিটি সেন্টার যা বর্তমানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হয়ে আকারে আয়তনে বৃদ্ধি পেয়েছে-দ্বিতল হয়েছে। দোতালায় বেঙ্গঁল হাইওয়ে চাইনিজ, পাশেই মসজিদ, সুপরিসর কার পার্কিং সহ শ্রীমঙ্গল রোডস্থ বেঙ্গঁল কমিউনিটি সেন্টার জেলা সদরের একটি চমৎকার কমিউনিটি সেন্টার হিসাবে সর্ব মহলে খ্যাত ও স্বীকৃত। মিষ্টান্ন, দূগ¦জাত সামগ্রী, ফাষ্ট ফুড, বেকারী সামগ্রীর জন্য বেঙ্গঁল বাজার, শ্রীমঙ্গঁল রোডস্থ বেঙ্গঁল সুইট ফুড, চাঁদনীঘাটে বিশাল শাখা ছাড়াও চৌমুহনা, পশ্চিমবাজার, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ সম্মুখস্থ কোর্ট রোড, জেলা জামে মসজিদ মার্কেট কমপ্লেক্সে বেঙ্গঁল বেকারী ও ফাষ্ট ফুডের শাখা গুলি গ্রাহকদের সেবা দিচ্ছে। বেঙ্গঁল সামগ্রীর স্বাদ, গন্ধ, গুণগত মান-উন্নত মানের। বেঙ্গঁল সামগ্রী এবং প্রতিষ্টান হিসাবে বেঙ্গঁল গ্রাহকদের নিকট এতই বিশ্বস্থ ও আস্থাভাজন যে শহরও গ্রামাঞ্চলের বেকারী ফাষ্ট ফুডের দোকান সমূহ-এখানে বেঙ্গঁলের মাল পাওয়া যায় সাইবোর্ড দেখা যায়। এতে সহজেই প্রতীয়মান হয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেঙ্গঁলের মান ও ব্যবহার্য্য বস্তু হিসাবে বেঙ্গঁলের মালামাল কতটা জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য।
বেঙ্গঁল এর সঙ্গেঁ সৈয়দ ফারুক আহমদ এর নাম অঙ্গাঁঅঙ্গিঁ ভাবে জড়িয়ে গেছে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিও ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ এর এসব বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান মুনাফাই দেয়নি দারিদ্রের বি-মোচন, কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সমাজ সচেতন সৈয়দ ফারুক আহমদ বিভিন্ন দিবসে উৎসবে পবিত্র মাহে রমজানে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে বেঙ্গঁলের খাদ্য সামগ্রী উপহার পাঠান। বন্ধু বৎসল সৈয়দ ফারুক একজন শিশু বান্ধব ব্যক্তিও বটেন। আমার দুই নাতি মুমতাহিন তাওসিফ নাহিয়ান বাবু এবং মোহাম্মদ মাহতির রহমান বেঙ্গঁলের দাদু-নানুর খুবই ভক্ত। তাদের জন্য প্রায়ই তাদের প্রিয় বেঙ্গঁলের খাদ্য সামগ্রী উপহার আসে। ব্যক্তি হিসাবে সৈয়দ ফারুক আমার সমগ্র পরিবার বর্গের প্রতি ও সহানুভূতিশীল। একদিন সন্ধ্যায় এসে জানতে চাইলেন বিয়ের পর সস্ত্রীক এবং বড় হয়ে সপরিবারে লাঞ্চ-ডিনার খেয়েছি কি না।
পচাঁত্তোর উত্তর রাজনৈতিক ভয়াবহ সংকট কালে মৃত্যো পথযাত্রী ক্যান্সারাক্রান্ত পিতার অসুস্থাবস্থায় তারই ইচ্ছায় আমার বিয়ে, অতঃপর পিতার মৃত্যো, একজন সার্বক্ষনিক রাজনৈতিক কর্মি সংঘটক হিসাবে আন্দোলনে সংগ্রামে জড়িয়ে যাই, অতঃপর সমাজ-সংস্কৃতির ঘোড় দৌড়ে মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়ে এখন-পড়ন্ত বেলা, জীবন সায়াহ্নে। না বলতেই বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ নব সাজে সজ্জিত বেঙ্গঁল হাইওয়ে চাইনিজ এর দোতালায় আমাকে ফ্যামিলি ডিনার-এর দাওয়াত দিলেন। অপরূপ নবসাজে সজ্জিত বেঙ্গঁলে হাইওয়ে চাইনিজ এর দোতালায় পারিবারিক ডিনারের দাওয়াতে গিয়ে আমি আবেগ-আপ্লুত-অবাকও। আর কেউই নেই, কোন বন্ধু-বান্ধবকে দাওয়াত দেয়া হয় নি, গ্রাহক-ক্রেতার জন্য ও উন্মুক্ত ছিল না। আমি অবাক বিস্ময়ে বন্ধুবর ফারুক আহমদ এর মুচকি মিষ্টি হাসি সমেত মুখের দিকে তাকিয়ে অন্তত পক্ষে আমাদের বিশিষ্ট বন্ধু প্রফেসর সৈয়দ ফজলুল্লাহকে দাওয়াত না দিলে আমি ফোন করার অনুমতি চাইলে তিনি সম্মতি প্রকাশ করেন। সৈয়দ ফজলুল্লাহ ও সৈয়দ ফারুক আহমদ শ্রীমঙ্গঁল রোডে মুখোমুখি বাসা, সহপাঠি, আশৈশব সু-সম্পর্ক যুক্ত, একসঙ্গেঁ জামাতে নামাজ, চলাফেরা। একজন একা থাকলে- একা দেখা গেলে স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়- “একা কেন তাইন কই-। সেই সৈয়দ ফজলুল্লাহকে রেখে আমি স্বপরিবারে নৈশ ভোজ করব-আমার জন্য বেমানানও বেদনাদায়ক। প্রিন্সিপাল ফয়েজকে ফোন করলাম। আমার প্রস্তাব সবিনায়ে নাকচ করতঃ বল্লেন-আজকের আয়োজন শুধু তোমার পরিবারের জন্য-আর কেহ নয়। সৈয়দ ফারুক আহমদ এর ভালোবাসাও বন্ধুত্বের নমুনা দৃষ্টে আমি বিমুগ্ধ- বিমোহিত হলাম। সানন্দে-স্বপরিবারে নৈশ ভোজ করলাম। আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ বন্ধু বরেষু রাজনীতিবিদ না হলেও রাজনীতি সমাজ সচেতন ও দেশ প্রেমিক নাগরিক। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেল জন্য তাঁর অকৃত্তিম অফুরান ভালেবাসার নিদর্শন তাঁর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গুলির নামাকরন বেঙ্গঁল দিয়ে। বেঙ্গঁল গ্রুপ এর প্রতিষ্ঠান গুলি আল্লাহর রহমত, পরিচালক, মন্ডলির বলিষ্ট ও আন্তরিক উদ্যেগে ও নেতৃত্বে , কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সাদর সম্ভাষন, বিন¤্র অভ্যর্থনা ও আপ্যায়ন, শিষ্টাচার ও সৌজন্য বোধ এবং বেঙ্গঁল সামগ্রীর গুণগতমান-সূলভ মূল্যে গ্রাহকদের হৃদয় মন জয় করেছে। রাজনীতিবিদ ওসমাজ কর্মীদের প্রতিও রয়েছে তাঁর সম্মান, সহৃদয়তা ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ট পোষকতা। তাঁর গুণগ্রাহী বন্ধু হিসাবে যতটুকু জেনেছি তিনি সরকারী ভ্যাট-ট্যাক্স-খাজনা পাতি, একজন ধর্মপ্রাণ ইমানদার সাচ্চা মুসলমান হিসাবে গরীব, দুঃখি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে সবসময় সাহায্য সহযোগিতা করেন, যাকাত, ফিতরা, লিল্লাহ, সদগাহ, দেন। মহাপবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে এ তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানার উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ইসলামের পা-বন্ধ সৈনিক হিসাবে তিনি তাবলীগ জামাতের একজন প্রবীন মুরব্বি ও সংঘটক। পোষাক, পরিচ্ছদ, আহারে, বিহারে ও সৈয়দ ফারুক নিখাদ সুন্নাতি। স্যার সৈয়দ আহমদ স্টাইলে একমুখ সাদা দাড়ি, মাথায় কিস্তি টুপি, অতি সাধারণ আজানুলম্বিত সুন্নাতি আলখেল্লা, দু-চোখে শিশু সুলভ সারল্য এবং উজ্জল শ্যাম মায়াবী মুখে এক চিলতে মুচকি মিষ্টি হাসি সমেত আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক দৃশ্যত একজন ছহী সুফি। আল্লাহ, রসূল, আল কোরআন ও ইনছানের জন্য তাঁর বুকে রয়েছে এক বুক ভালোবাসা ও শ্রদ্ধাবোধ। ব্যক্তিগত ভাবে পারিবারিক জীবনেও সম্ভান্ত খানদানি পরিবারের গৌর বোজ্জল উত্তরাধিকার তিনি। বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সিলেটের খান্দানী পরিবারের এক কৃতি কন্যার সঙ্গেঁ। এ দম্পতির প্রথম সু-পুত্র সৈয়দ রিমন আহমদ ও পিতার মত বিনয়ী-বৈষয়িক ও। তরুন ব্যবসায়ী সৈয়দ রিমন পিতার পদাংক অনুসরন করে একজন তরুন শিল্প উদ্যোক্তা হিসাবে দারিদ্রের বিমোচন, দেশীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এ ইতি মধ্যে জেলা সদরে সকল মহলের সুদৃষ্টি ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন। সৈয়দ রিমন তাঁর সহযোগী এক ঝাক দেশ প্রেমিক, শিক্ষিত, মেধাবী উদ্যোক্তাকে নিয়ে পৌর এলাকাধীন শ্রীমঙ্গল রোডে জেলা সদরে প্রথম বারের মত গড়ে তলেছেন সু-বিশাল “লাইফ লাইন কার্ডিয়াক হাসপাতাল। অভিজ্ঞ চিকিৎসক মন্ডলি নিয়ে জাতীয় পর্য্যায়ের অত্যাধুনিক এই কার্ডিয়াক হাসপাতাল চিকিৎসা সেবায় নবতর সংযোজন। সৈয়দ ফারুক পুত্র সৈয়দ রিমন ও তার সহযোগীগণ মেজর খালেদুর রহমান (অবঃ) পরিচালিত বেরী লেইক ফিশারীতে রাঙ্গাঁউটি রিসোর্ট স্থাপন করে পর্য্যটকদের সু-দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। দৃষ্টি নন্দন স্থাপনার অপরূপ প্রাকৃতিক নিসর্গের রাঙ্গাঁউটি রিসোর্ট জেলা- বিভাগীয় পর্য্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সৈয়দ ফারুক আহমদ এর সহোদর-সৈয়দ মোশাহিদ আহমদ চুন্ন বেসিক ব্যাংক এর ডি.জি.এম. হিসাবে অবসর গ্রহণ করতঃ সমাজ সেবাও কাব্য চর্চায় নিয়োজিত আছেন। একাধিক গ্রহ্ণ প্রণেতা সৈয়দ মোশাহিদ আহমদ চুন্ন বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি, মৌলভীবাজার জেলা শাখার অবৈতনিক সম্পাদক হিসাবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। আমি ষাটের দশকের শুরু থেকে রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা, ক্রীরাঙ্গঁনে যৎকিঞ্চিত সম্পৃক্ত ছিলাম। দর্পনসহ সংকলন-সাময়িকী সম্পাদনা করেছি অনেক। চাঁদা বাজি করিনি কোন দিন। আমার তওফিক মত আমি চাঁদা দেই-নেই না। আমার প্রিয় বন্ধু সৈয়দ ফারুক আহমদ এর নিকট কোনদিন আমার উল্লেখিত কর্ম কান্ডের, জন্য চাঁদা বা বিজ্ঞাপন চাই নি- না চাইতেই তিনি আমাকে অনেক কিছু উপহার দেন। আমার ছেলে মেয়ের বিয়ে মায়ের চল্লিশায় বেঙ্গঁল কমিউনিটি সেন্টার-ই-ছিল সব কিছুর দেকভালে। আমার-ত্রি-জেনারেশনস টিচার-প্রফেসর করুনাময় রায়কে সম্ভর্ধনার সিদ্ধান্ত নেই আমি আর আমার ¯েœহ ভাজন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সাবেক স্পেশিয়াল পি.পি এডভোকেট মাহবুবুল আলম রুহেল। অবসর সময়ে এজলাশে বসে প্রিয় রুহেল বল্লেন-জীবনে অনেক সম্ভর্ধনাইত দিলেন দেয়ালেন, আমাদের করুনা বাবু স্যার বাদ যাবেন কেন? উদ্যোগ নিন। উত্তর দিলাম প্রস্তাব কারী আমার সঙ্গেঁ থাকলে আমি আছি তার সঙ্গেঁ-শর্ত সাপেক্ষে। শর্ত দিলাম কোন চাঁদা তুলা চলবে না, কমিটি হবে আমি ও তিনি দু’সদস্য বিশিষ্ট। বলা বাহুল্য সদস্য সচিব এডভোকেট মাহবুবুল আলম রুহেল। আমি আহ্বায়ক। সদাহাসি খুশি সৎ মানুষ মাহবুবুল আলম রুহেল সম্মতি জানালেন।
আলোচনা ক্রমে সাব্যস্থ হল কমিটির সদস্য সংখ্যা আর বৃদ্ধি করব না, কোন প্রস্তুতি মূলক সভাও ডাকা হবে না কারন আজ কাল বেআদব, কি চকা ও বেঙ্গাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের ও স্যারের শুভাকাংখীদের কাছে আমরাই যাব পরামর্শ চাইব। দুইজনে দুই ভাগ করে নিলাম। অপেক্ষকৃত বয়োঃ জ্যেষ্টদের কাছে যাব আমি এবং বয়োঃ কনিষ্ট কাছে তিনি। এ ব্যাপারে আমি একটি-এ্যডভান্টেজ ইন- এ আছি-যা রুহেলের নেই। স্যারের ছাত্র ছাড়াও আমি স্যারের সঙ্গে শিক্ষা ও ক্রীড়াঙ্গঁনে কাজ করেছি। আমার সহ পাঠিদের মধ্যে প্রফেসর মোহাম্মদ ফিরোজ প্রফেসর এম.এ.রকিব, প্রফেসর সৈয়দ ফজলুল্লাহ প্রমুখ স্যারের সহকর্মি হয়ে ছিলেন। এক সন্ধ্যায় আমি বেঙ্গলে গিয়ে হাজির। আমরা প্রায়ই দর্জির মহল জামে মসজিদে এক সঙ্গেঁ এশার নামাজ আদায় করি। বন্ধুদের মধ্যে শহীদুর রাজা, ইঞ্জিনিয়ার কফিল উদ্দিন আহমদ ও প্রায়ই থাকেন। বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক হাত ধরে টেনে টেনে দু’তালায় হাইওয়ে চায়নিজে নিয়ে গেলেন। প্রফেসর ফয়েজ সহ আমরা নৈশ ভোজ করা কালীন সময় স্যার এর সম্ভর্ধনা প্রদান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত শুনে তিনি খুবই খুশী হলেন-বল্লেন-বন্ধুদের মধ্যে তুমি রাজনীতি সমাজ সেবায় সুনামে আছ বড় ভালো লাগে, এই বার আমিও তোমার সঙ্গেঁ শরীক হব। আমি সানন্দে রাজি হলে তিনি-তিন শত মানুষের প্যেকেট ডিনার এর- দায়িত্ব নিলেন। আমি আশ্বস্থ হলাম-প্রায় পচিশ সহ¯্রাধিক টাকার খরছ থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট সম্ভর্ধনা পর্ষদ বেচে গেল। স্যারের প্রিয় ভ্রাতস্পুত্র এবং আমার প্রিয় কলিগ এডভোকেট সুধাময় রায় এর পরামর্শ শুভেচ্ছা সহমর্মিতায় মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ সংলগ্ন শহীদ মিনার চত্বরে বিকাল থেকে বেশ রাত পর্য্যন্ত স্যারের সম্ভর্ধনানুষ্টানটি সম্পন্ন হয়। বেঙ্গঁলের সৌজন্য ডিনার পার্টি থাকায় অনুষ্ঠানটি পূর্ণতা পেয়েছিল।
আমাদের ষাটের দশকীয় ভালোবাসায় ফর্মালিন ও ক্যেমিকেল ছিল না, তাই বন্ধুত্ব শুধু দ্বিপাক্ষিক ছিলনা, ছিল বহুপক্ষিক বহু মাত্রীক। আমাদের বন্ধু মোস্তফা নুরুজ্জামান মিনার মৃত্যেকালে-কউল-করে যান তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেঞ্চুগঞ্জ-ফকির পাড়া শিক্ষিত সম্ভান্ত-আলেম-ওলামার বাসস্থান হলেও তার জানাজার নামাজ যেনো তাঁর ও আমাদের বন্ধু প্রফেসর সৈয়দ ফজলুল্লাহ পড়ান। অসুস্থতার কারনে বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক মিনারের জানাজায় যেতে পারেন নি-
আমিও তাই। সম্প্রতি আমরা বন্ধু মহলকে নিয়ে সৈয়দ ফারুক আহমদই নিয়ে গেলেন-ফেঞ্চুগঞ্জে-বন্ধুবর মিনারের কবর জিয়ারতে। আমরা গেলাম। কবর জিয়ারত করলাম। ফেরার পথে বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা রাস্তায়-রাঙ্গাঁউটি রিসোর্ট যাত্রা বিরতি করি।
সম্প্রতি বাসায় ফজরের নামাজের সময় দোতালায় সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে ডান পা মচকে ফেলি-লেংরা হয়ে শয্যাশায়ী। বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের উদার হস্ত নিয়ে এগিয়ে বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক- প্রফেসর সৈয়দ ফয়েজ-কান্নাকাটি করতেই প্রফেসর ফয়েজ বল্লেন-বল-ইন্নাল্লাহ মাচ্ছায়াবিরিন। আমি হেসে তাই বলেছিলাম। দোয়ায় শুভেচ্ছায় মাস কয়েকেই কোর্টে আসা যাওয়া শুরু করি। আশির দশকে আমাদের বন্ধু হাজি জয়নাল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হলে আমি তাঁর স্ত্রীর সাক্ষাত করে ঢাকায় চলে যাই-কারণ তখন জয়নাল হোসেন ঢাকায়। আমার কোর্ট কাছারি, সংসার, সমাজ ছেড়ে মাসাধিক কাল ঢাকায় ছিলাম-প্রিয় বন্ধুর চিকিৎসা সেবা দেখ ভাল করেছি। বন্ধু হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশ পাঠানো হয়। গত দশকে জেলা বারে বসা অবস্থায় প্রিয়বন্ধু এডভোকেট আব্দুর রৌফ কলামি য়ার হার্ট এট্যাক হয়। তাকে সিলেট ওসমানীতে স্থানান্তর করা হয়-সেখানেও যাই। ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাক হওয়ায় প্রাণে বাঁচলেও তাঁর পক্ষে আর পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভব হয় নি। এক হাত, এক পা প্যারালাইজড হলে তাকে শয্যাশায়ী হতে হয়। দীর্ঘদিন আমরা এক সঙ্গে কোর্টে-মাঠে দাপটের সঙ্গেঁ চলেছি। বন্ধু বৎসল কলা মিয়া-কে নিয়মিত দেখাশুনা করতন অগ্রজ প্রতিম সৈয়দ আবু শাহ জাহান ভাই অগ্রজ প্রতিম মরহুম পৌরপতি মাহমুদুর রহমান ভাই, বন্ধুবর জয়নাল হোসেন এবং আমি নিজে। বন্ধুবর কলা মিয়ার ফলফলারি এবং তিল খুবই প্রিয় ছিল। অফিস থেকে যাবার সময় সে ফলমূল বাজার করত: আমার মায়ের জীবিতাবস্থায় আমিও করতাম এখনও দুই নাতির জন্য বাজার করি। কোর্ট শেষে বাসায় ফেরার পথে শয্যা শায়ী কলা মিয়ার জন্য ফলের মৌসুমে তার প্রিয় ফলমূল-তিলের সময় তিল কিনে নিয়ে যেতাম-আনন্দের সঙ্গেঁ সে তৃপ্তির হাসি হাসত। তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম বলতেন আল্লাহ যেনো সবাইকে এ রকমা বন্ধু বান্ধব দেন। নবীগঞ্জ উপজেলার মরহুম হেট্রিক চেয়ারম্যান দেওয়ান গোলাম ছরোওয়ার হাদি গাজি, কাশি নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের মরহুম প্রধান শিক্ষক সাংবাদিক আজিজুল ইকবাল ও আমি মুজিবুর রহমান ষাটের দশকের সহপাঠি, তিনজনেই ছাত্রলীগ নেতা। এই ত্রিরতেœর বন্ধুত্ব ছিল ঈর্ষনীয়।একসাথে চলাফেরা। একপার্টি করি এক শহরে কাছাকাছি থাকা। এক বিছানায় রাত্রি যাপন। তখন ভাবনাহীন ব্যেচেলার জীবন।
যেখানেই রাত- সেখানেই কাত। বন্ধুবর ইকবালের গীর্জাপাড়াস্থ বাস গৃহ হক ভিলার বাহিরের মাঝারি আকারের টিন, তরজার, চৌ-চালা বাংলো ঘরে এক বিছানায় তিন বন্ধু জড়াজড়ি কোলাকুলি করে ঘুমাতাম। একাত্তোরের পঁচিশে মার্চের রাত্রে মিটিং মিছিল শেষে আমি আমার বাসগৃহ মুসলিম কোয়ার্টার না গিয়ে অধিকতর আলোচনার জন্য হক ভিলায় রাত্রি যাপন করে ছিলাম। রাখে আল্লাহ মারেকে পঁচিশে মার্চের ভোর রাত্রে পাক সেনাগণ আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য আমার বাসগৃহ ঘেরাও করেছিল-বাসায় থাকলে খান সেনারা আমাকে পেলে গুলি করত, কারণ তেইশে মার্চ পাক প্রজাতন্ত্র দিবসে আমি ছাত্রলীগ সদ্য প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে চৌমুহনা চত্বরে ছাত্রলীগে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে ছিলাম, জিন্নাহ সাহেবের ছবি পুড়িয়ে বঙ্গঁ বন্ধুর ছবি উড়িয়ে ছিলাম। লেখালেখিও ঈমানে আমলে আমার প্রিয় বন্ধু সাংবাদিক কলামিষ্ট বৃহত্তর সিলেটের বিশিষ্ট নিসর্গবিদ-প্রকৃতি প্রেমি আফতাব চৌধুরী প্রায়শত কিলোমিটার দূরে সিলেটে বসবাস করলেও মনে হয় তিনি আছেন আমার হৃদয়ের কাছাকাছি। প্রায়ই ফোন করে আমার কুশল জানতে চান, বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ এর ও স্বাস্থ্য সংবাদ জেনে নেন। সিলেটি দামান্দ হিসাবে ও তিনি ভালো মানুষ সৈয়দ ফারুক এর একজন গুণগ্রাহী।
পাহাড়ের উচ্চতা, সাগরের গভীরতা আজকাল জানা যায়। পর্বতা রুহী ডুবুরি বৈজ্ঞানিক গণ সেই অসাধ্য সাধন করলে ও বন্ধুত্বের পরিমাফ করা সহজ নয়। আমাদের পবিত্র ধর্ম গ্রহ্ণ আসমানী কিতাব আল কোরআনে ও আমাদের মহান সৃষ্ট্রাও প্রতিপালক সর্ব্বশক্তিমান আল্লাহ তায়াল বন্ধুত-সঙ্গীঁ প্রসঙ্গেঁ গুরুত্ব আরোপ করে সুরা তওবা আয়াত উনিশে বলেন- “তোমরা সৎ লোকের সঙ্গীঁ হও।”
এই সুবায় আল্লা আরো বলেন-“আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নরনারী তারা একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে। আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করে তাদের উপর আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আমাদের মহানবী মোহাম্মদ মোস্তফা (রঃ) সৎ লোকের সঙ্গেঁ থাকাও অসৎ লোক এড়িয়ে চলা প্রসঙ্গেঁ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বানী দিয়েছেন-বয়ান করেছেন। আমাদের বাংলা ভাষায় আধুনিক কবি বলেছেন-সৎ সঙ্গেঁ স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গেঁ সর্বনাশ। প্রকৃত বন্ধু প্রসঙ্গেঁ প্রাচীন পন্ডিত চানক্য তাই যথার্যই বলে গেছেন- উৎসবে, ব্যসনে চৈব, দূর্ভিক্ষে রাষ্ট্র বিপ্লবে রাজদ্বারে শ্মশানে স্তিষ্টতি-স্ব-বান্ধব”। সেই প্রকৃত বন্ধু যে সব সময় পাশে থাকে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান লেখক হুমায়ন আহমদ তাঁর বিশাল ইতিহাসোপন্নাস-“বাদশা নামদার” এ ভাগ্যাহত মুঘল স¤্রাট হুমায়ূন ও পাঠান শের খানের যুদ্ধ বিগ্রহ ও পত্র চালাচালির সরেশ বর্ণনা দিয়েছেন। ফার্সি ও হিন্দি ভাষী মুঘল-পাঠান এর বাংলায় অপারেশন ও সার্জারি করেছি এভাবে “অশ্ব-অশ্বারোহীর বন্ধু নয়,
বন্ধু নয় মেঘ, মেঘ মাল্লার।
বন্ধু হবে এমন,
যার সঙ্গেঁ দেখা হবে না কখনও”
এখানে লেখা এমন বন্ধুর অস্থিত্ব আমি আমার দেখা ভূবনে-জানা ইতিহাসে পাইনি। না-দেখা প্রেম ও বন্ধুত্ব প্রসঙ্গেঁ সর্বকালের সেরা অলি আল্লা-নবী প্রেমে ফানা ফিল্লাহ হযরত ওয়াশ করনীর কথা বলা যেতে পারে। এই ওলি আল্লাহর খেদমতে জীবন কাটিয়েছেন। একটি যুদ্ধে মহানবীর দান্দান শহীদ হওয়ার সংবাদ শুনে তিনি তাঁর নিজের দু’পাটি দাতই উপড়ে ফেলেছেন। আমি কোন বন্ধু বিশেষজ্ঞ নই, হয়ত বন্ধু বৎসল ব্যক্তি। তাই বন্ধু প্রসঙ্গেঁ ব্যাপক লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। বন্ধুর সৈয়দ ফারুক আহমদ অসুস্থ, বার্ধক্য জনিত ব্যাধিতে দূর্বল-তার জন্য দোয়া চাওয়া এ লেখার মূল উদ্দেশ্য। আমি নিজে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে তাঁর জন্য দোয়া করি। ইতিপূর্বে আমার গ্রামের বাড়ি রসুলপুর জামে মসজিদে তাঁর জন্য মিলাদ পড়িয়ে দোয়া করিয়েছি, করছি।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব সৈয়দ ড.রাগীব আলীর আমন্ত্রণে তাঁর মালনীছড়া চা বাগানে এক আলেম ও লামা সমাবেশে গিয়ে ছিলাম। আলেম সমাবেশে বয়ান-ভাষনে আমি নালায়েক-সে যোগ্যতা আমার নেই। তাঁর এবং আলেম সমাজের অনুরোধ বয়ানে উঠে সালাম জানিয়ে হাজিরানে মজলিশকে দুটি সওয়াল করেছিলাম-সবিনয়ে জানতে চেয়ে ছিলাম মহান আল্লাহ আদম (আঃ)- কে কেন হাজার বছর আয়ূ দিলেন আর তাঁর প্রিয় হাবিব আমাদের পিয়ারা নবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সঃ) কে মাত্র তেষট্টি বৎসর বয়সে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। উপস্থিত উলামায়ে কেরাম মুখ চাওয়া চাওয়ি বির বির করতঃ বিব্রত বোধ করছিলেন, আমি তাদেরকে বিব্রতও লজ্জিত না করে ইসলামী আইনের চতুর্থ উৎস, কিয়াস-অনুসরন করে বলেছিলাম আল্লাহ পাক আদম (আঃ) ধর্ম প্রচার, বংশবৃদ্ধি, সমাজ সভ্যতার বিকাশের প্রয়োজনে বাচিয়ে রেখেছিলেন আর মাত্র তেইশ বছরের নবুওতি ও মাত্র তেষট্টি বৎসরের মানবজীবনে কোরআন নাযিল শেষ- ওহি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁর উপর বর্তিত দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে বলে মহান মালিক তাঁর প্রিয় হাবিবকে নিয়ে যান। উপস্থিত আলেম সমাজ ধ্বনিও শব্দ সহকারে আমাকে সমর্থন করেছিলেন।
বন্ধুবর সৈয়দ ফারুক আহমদ এখন আর ব্যবসা বানিজ্যে ব্যস্থ নেই-আছেন দ্বীন ইসলামের খেদমতে-তাবলীগ জামাত এর এন্তেজামে। মহাপ্রভূ মহান আল্লাহর গোলামির প্রয়োজনে মহান মালিক আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ এর সুস্থতা এবং হায়াত দরাজ করবেন-এই মোনাজাত।
পবিত্র এই মাহে রমজান বরকত, রহমত, মাগফিরাত এর মাসে জেলা, বিভাগও দেশবাসীর কাছে বন্ধুবর আলহাজ্ব সৈয়দ ফারুক আহমদ এর জন্য দোয়া চাইছি। মহান মালিক তাকে ছালামতে রাখুন-হায়াত দরাজ করুন-এই মোনাজাত সহ আমীন। ছুম্মা আমীন।
[সেক্রেটারি জেলা জামে মসজিদ। মুক্তিযোদ্ধা। এডভোকেট হাইকোর্ট। সাবেক সভাপতি মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব]

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com