মহান মে দিবস অমর হউক

April 30, 2018,

মোহাম্মদ আবু তাহের॥ মহান মে দিবস পালিত হয় বিশ্বের শ্রমিক আন্দোলনের বিরাট অর্জনের দিন হিসেবে। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস ও আলোকবর্তিকার দিন ১ মে।

১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর পুলিশ গুলি চালালে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। এ আত্মত্যাগ ও রক্ত¯œœাত ঘটনার মধ্য দিয়ে কাজের সময় দৈনিক আট ঘন্টা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় হয়।

১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দিবসটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে আসছে। মহান মে দিবস সারা বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন। ঐতিহাসিক এ দিবসটি বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের মর্যাদা সমুন্নত করেছে। শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুগে যুগে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যয় নিয়ে প্রতি বছর মে দিবস পালিত হয়। বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণীর পাশাপাশি বাংলাদেশের শ্রমিকরাও অতীতের সংগ্রামী স্মৃতি ধারণ করে সকল প্রকার শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য এ দিবসটি পালন করে থাকে।

১৩২ বছর আগে শিকাগোর শ্রমিকেরা যে দাবিতে রাজপথে নেমেছিল, সে দাবি আজও আমাদের দেশে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশের শ্রমজীবি মানুষ এখনও ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে হয়। এখনো শ্রমিকেরা অনেক মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। মে দিবসের পথ ধরেই মূলত বিভিন্ন দেশে শ্রমিকের অধিকার, কাজের পরিবেশ, শ্রমিকের মজুরী ইত্যাদি সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক গতিশীলতা বেড়েছে ঠিকই, তবে সকল ক্ষেত্রে এখনও শ্রমিকদের মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মজুরী নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিক শ্রেণী জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শ্রমিকদের স্বার্থ ও কল্যাণের বিষয়ে অবহেলা সত্যিকার উন্নতির পথে বিরাট অন্তরায়। শ্রমিকদের জীবনমান উন্নতির জন্য সকল প্রকার শোষন বন্ধ করতে হবে। শ্রমিক মালিকের সুসম্পর্কই শিল্পের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। শ্রমিক কখনও যেন  নিজেকে হীন মনে না করে সেই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। মালিকও নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করার প্রবনতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। মালিক যদি শ্রমিকের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী সম্পর্কে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) সুস্পষ্ট ঘোষনা করেছেন “শ্রমিকের ঘায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তার মজুরী দিয়ে দাও”। আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম অত্যাচারী মানুষদের সরাসরি আঘাত করেছেন। তার কবিতায় বলে গেছেন-

দেখিনু সেদিন রেলে

কুলি বলে এক বাবু সাব তারে

ঠেলে দিলো নিচে ফেলে

চোখ ফেটে এলো জল

এমন করে কি জগৎ জুড়িয়া

 মার খাবে দুর্র্বল।।

যে মানুষদের শ্রমের কারণে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে, তাদের অনেকেই মানবসত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারেনা। তারা বার বার নির্যাতিত হতে পারেনা। শ্রমিকের স্বার্থ এবং শিল্প কারখানা লাভ জনক ভাবে টিকে থাকার বিষয়টিকে একে অপরের পরিপূরক হিসেবে দেখতে হবে। এজন্য সত্যিকারের শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণকারী ট্রেড ইউনিয়ন রাখাও জরুরী। বাস্তবায়ন করতে হবে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক লেজুরভিত্তি মুক্ত ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার। শ্রমিকরা সংখ্যা গরিষ্ট, শ্রমিকের স্বার্থ ও কল্যাণের বিষয়ে অবহেলা প্রর্দশন করে দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে শ্রমজীবি মানুষ এখনও নানাভাবে নির্যাতিত। বন্ধ করা সম্ভব হয়নি শিশু শ্রম। বাড়ছে শিশু শ্রমিক নারী শ্রমিক নির্যাতন। শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের মৌলিক অধিকার থেকেও অনেক শ্রমিক বঞ্চিত। মে দিবস শ্রমিকদের উজ্জিবিত করে আসছে তাদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও শ্রমিকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে এ দিবসটি পালন করে। মে দিবস মালিক শ্রমিকের সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিলা পালন করুক এ প্রত্যাশা করি।-লেখক ব্যাংকার ও কলামিষ্ট।

                         

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com