মহান মে দিবস ভালো নয় মৌলভীবাজারের শ্রমিকরা
হোসাইন আহমদ॥ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকদের অনাকাঙ্খিত প্রাণহানির পরও কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিয়ে নানা পর্যায়ে উদ্বেগের মধ্যেই ১মে রবিবার পালিত হয়েছে বিশ্ব শ্রমিক দিবস, যা মে দিবস নামে পরিচিত। প্রতিবারের মতো এবারও দিবসটি পালন করতে সারা দেশের ন্যায় মৌলভীবাজারে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে জেলা প্রশাসক, বাস শ্রমিক সংঘ, সিএনজি অটোরিক্সা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, রিক্সা শ্রমিক সংঘ, অটোবাইজ শ্রমিক ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংঘ র্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পহেলা মে রোববার জেলা প্রশাসনের আয়োজনে, চা-শিল্প শ্রমকল্যাণ বিভাগ এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সকালে শহরে র্যালি বের হয়।
পরে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, জেলা পরিষদ প্রশাসক আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমদ, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান প্রমুখ।
এছাড়াও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের উদ্যোগে পুরো জেলা জুড়ে দিনব্যাপী আলোচনা সভা সহ নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়।
শনিবার ৩০ মে সকাল ৭টায় মৌলভীবাজার চৌমুনাস্থ শ্রমিক হাটে সরেজমিন উপস্থিত হয়েছে শ্রমিকদের সাথে ১ মে সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই জানেনা যে ১ মে শ্রমিক দিবস। দেখা যায় কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ অনেক শ্রমিক কাজের অপেক্ষায় আছেন। একজন খরিদদার আসতেই সবাই ঝাপিয়ে পড়ে কাজে যাওয়ার জন্য। এ ভাবে অনেক দিন তাদেরকে কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরতে হয়। তারা বলেন এখন বৈশাখ মাস থাকায় প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় আবার ২/১ মাস পরে আর নিয়মিত কাজ মিলেনা। মাসে ১০/১২ দিন বেকার থাকতে হয়। এ সময় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়।
চাঁদনীঘাট এলাকার দিনমজুর জবেদ আলীর (৫৫) এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বাপু ১৯৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দিনমজুরের কাজ করে আসছি। তিনি আলো জানান, বর্তমান দ্রব্য মূল্যের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে শ্রমিকদের মজুরি না বাড়ায় সীমিত আয় দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবার করা অনেক কষ্ট কর হয়ে পড়েছে। আমার জীবনে দারিদ্রতার করণে ১ ছেলে ও ৩ মেয়েকে আলোর মুখ দেখাতে পারিনি। তারাও এখন দিনমজুর।
ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নাছির নগর উপজেলর ফয়েজ আলী বলেন, ২৫০/৩০০ টাকা মজুরি দিয়ে দৈনন্দিক পরিবারের খরচ চালানু সম্ভব নয়। আবার অনেক জায়গায় ১২/১৪ ঘন্টা কাজ করিয়ে মজুরি না দিয়ে বিদায় করে দেয়।
চৌমুনাস্থ তাজ হোটেলের শ্রমিক সজল জানায়, নির্ধারিত মজুরি, টিউটি ও সাপ্তাহিক ছুটি না থাকায় সারা মাস কাজ করতে হয়।
রিক্সা শ্রমিক সাইফুল ইসলমা বলেন, সারাদিন রিক্সা চালিয়ে ২০০/২৫০টাকা পাই। এটা দিয়ে পরিবার ও ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়।
নারী শ্রমিক নিলা কর জানায়, সারা দিন কাজ করে ১২০ টাকা পাই। তা দিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
পরিবহণ শ্রমিক শামীম আহমদ বেলন, ট্রাফিক পুলিশ ও কমিটিকে অতিরিক্ত চাঁদা না দিলে আরো উন্নত করতে পারতাম।
হাকালুকি হাওরপারের কৃষক ছমির আলী বলেন, ১ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করতে যে পরিমাণে খরচ হয় সে হারে ধানের দাম না পাওয়ায় লোকসান ঘনতে হচ্ছে। অনেক কৃষক এখন আর ফসল ফলাতে আগ্রহী নয়। আমিও কৃষি কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় যাওয়ার চিন্তা করছি।
সর্বোপরি শ্রমিকদের অভিযোগ হলো, নির্ধারিত কোন নীতিমালা না থাকার কারণে কিছু অসাধু মালিক পক্ষ নিয়মের চেয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে প্রকৃত মজুরি না দিয়ে অনেক সময় শারীরিক নির্যাতন করে। তাদের দাবি হলো নায্য অধিকার ও সময় উপযোগী একটি নীতিমাল নির্ধারন করা।
প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের ১লা মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। দীর্ঘ বঞ্চনা আর শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ১৮৮৬ সালের এদিন বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়েছিলেন শ্রমিকরা। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আন্তত্যাগের দিনটিকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে মে দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং একই সঙ্গে দিনটিকে সরকারি ছুটি থাকে সকল শ্রমিকের জন্য।
মন্তব্য করুন