মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের মান্যবর প্রধান বিচারপতি মিষ্টার জাস্টিস এস, কে, সিনহা ঃ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরন ঃ রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের সুসর্ম্পক সমাচার

January 12, 2017,

মুজিবুর রহমান মুজিব॥ মিষ্টার জাস্টিস এস কে, সিনহা হিসাবে দেশ-বিদেশে সুপরিচিত বাবু সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বর্তমানে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট এর প্রধান বিচারপতি। স্বাধীনতা উত্তর কালে আইনে ¯œাতক ডিগ্রী নিয়ে আইন আদালত এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এস কে সিনহা স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে চাকরি ও ব্যবসা বানিজ্য সহজ লভ্য হলেও চাকরিতে যোগদান কিংবা ব্যবসা বানিজ্যে জড়িত না হয়ে স্বাধীন আইন পেশায় যোগদান করেন। মৌলভীবাজার-সিলেট হয়ে মাহামান্য হাইকোর্টে তালিকা ভুক্ত হয়ে পেশার প্রতি আনুগত্য, প্রজ্ঞাও পান্ডিত্য মেধা ও মননের গুনে তর তর করে সামনের দিকে এগিয়ে যান। আওয়ামীলীগ সরকারামলে মহামান্য হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ লাভ করতঃ দুই হাজার এক সালে চারদলীয় জোট সরকারামলে স্থায়ী হন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম কর্তব্য নিষ্ঠা পঠন-পাঠন-জ্ঞানচর্চাও জ্ঞানার্জনের কারনে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জ্যেষ্টতা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক অ্যাপিলেট ডিভিশনে স্থান পেয়েছেন। অতঃপর এসেছে তার চাকরিও মানব জীবনের মহেন্দ্রক্ষন-ক্ষমতা ও প্রাপ্তির শীর্ষ বিন্দুতে আরোহন ও অবস্থান-মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের মান্যবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার গ্রহন।
মান্যবর প্রধান বিচারপতি বাবু এস, কে, সিনহার শপথ গ্রহনানুষ্ঠানটিও ছিল ব্যতিক্রমী। সকল দলমত পথ নির্বিশেষে সকলের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সম্ভর্ধনানুষ্ঠানটিও ছিল বর্ণীল, বর্ণাঢ্য। প্রানবন্ত। আওয়ামী-জাতীয়তাবাদী-বাম-মধ্য ঘরানার দেশের শীর্ষ স্থানীয় সিনিওর আইনজীবী বৃন্দ নব নিযুক্ত মান্যবর প্রধান বিচারপতির সুস্বাস্থ ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
ঐতিহ্যবাহী কমলগঞ্জ উপজেলাধীন-ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়-তিলকপুর-একটি শিক্ষিত-সম্ভ্রান্ত ও বার্ধিষ্ণু জনপদ। পল্লীর নিভৃত প্রাপ্তর-তিলকপুর-থেকে মৌলভীবাজার-সিলেট হয়ে ঢাকা, অতঃপর দেশীয় বিচারালয় এর এক নম্বর আসনে অধিষ্টিত হতে তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
জুডিশিয়ারীতে হাইব্রীড সিস্টেমের-কোন অবকাশ ও অবস্থান নেই। আদর্শ শিক্ষাবিদ স্বর্গীয় ললিত মোহন সিনহার সু-পুত্র-বাবু সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মরমে মরমে অনুধাবন ও উপলব্দি করেন প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বেটিকে থাকতে হলে পেশার প্রতি আনুগত্য ও পেশাগত দক্ষতা জ্ঞানচর্চাও জ্ঞানার্জনের বিকল্প নেই।
মানণীয় প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার নিয়েই মিঃ জাস্টিস এস কে সিনহা বহু বিধ প্র্রতিকুলতা, সংশ্লিষ্ট অনেকের অসহযোগিতা সত্বেও বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান সমস্যা ও সংকট নিরসনে বিভিন্ন গনমুখী কার্য্যক্রম ঘোষনা ও গ্রহন করেন। দেশে প্রচলিত বৃটিশ-মান্দাতার আমলের গনবিরোধী আইন ও বিধি পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংশোধনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম ঘোষনা করেন। মাননীয় বিচারপতিদের অবসর গ্রহনের পর মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখার অহেতুক বিলম্বে অসন্তুস প্রকাশ করতঃ এই অহেতুক বিলম্বের বিরোধীতা করেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়। এই নিয়ে একজন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রভাবশালী বিাচরপতির অহেতুক সমালোচনার সম্মুখীন হন প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস, কে, সিনহা। তবুও তিনি তাঁর দায়িত্ব, কর্তব্য ও বক্তব্য থেকে পিছু হটেন নি।
স্বল্প সময়ে অল্প ব্যায়ে বিচার প্রার্থীজনগনের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রধান বিচারপতি মিঃ এস, কে, সিনহা বদ্ধ পরিকর। ওয়াদা বদ্ধ। মামলার জট নিরসনেও তিনি আন্তরিক। সম্প্রতি ঢাকায় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ-আইনসভা, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ প্রসঙ্গে প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান বক্তব্য দিয়ে মিডিয়া মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মাননীয় প্রধান বিচারপতি জাস্টিস এস কে সিনহা। বিচার বিভাগের প্রধান ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্ব এবং মহান অভিভাবক হিসাবে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধান বিচারপতি দিক নির্দেশনামূলক প্রাসঙ্গিক বক্তব্য দিতেই পারেন। এটা তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা এবং সাংবিধানিক অধিকার বলে তিনি সে দায়িত্ব পালনে একান্তই আন্তরিক দায়িত্ববান। কর্মতৎপর।
একটি কন্যালকামী আধুনিক রাষ্ট্র হিসাবে গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ-দেশের পবিত্র সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ আইন, বিচার ও প্রশাসন-সম্পূর্ণ স্বাধীন।
সংবিধান মোতাবেক রাষ্ট্রের এই তিনটি স্তম্ভ স্বতন্ত্র। স্বাধীন। একে অন্যের সহায়ক-পরিপুরক শক্তি-সাংঘর্ষিক নয়। নামে স্বাধীন হলেও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকিকরন (ইন্ডিপেনডেন্স এন্ড সেপারেশন) এর জন্য আইনজীবী সমাজ দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। আইনজীবি সমাজের নেতা মরহুম এডভোকেট সামশুল হক চৌধুরীকে সামরীক স্বৈরশাসক লেঃ জেঃ অবঃ এইচ এম. এর্শাদ সরকারামলে কারা যাতনা ভোগ করতে হয়েছে। অবশেষে মাজদার হোসেন সাহেবের মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন হয় দুই হাজার সাত সালে বিগত তত্বাবধায়ক সরকারামলে। মামলার রায়ে মাননীয় আদালত কতেক দিক নির্দেশনাও দিয়েছিলেন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পৃথকীকরনের ফলে বিজ্ঞ নি¤œ আদালত জেলা ম্যাজিস্ট্রেসীতে কাঠামো ও গুনগত মৌলিক পরিবর্তন আসে। ইতিপূর্বে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এর পক্ষে একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং তাঁর কিংবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেসীর অধীনে প্রথম শ্রেণীর ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক আমল আদালত বিচার কার্য্য পরিচালনা করতেন। বিজ্ঞ বিচারকগণ-বিচারিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও নির্বাহী বিভাগের প্রশাসনিক কার্য্যক্রম চালাতেন সময় মত বিচারকার্য্যে মনোযোগ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হত না। অনেক সময়-অনেক ক্ষেত্রে বিচার কার্য্য তাদের গৌন কাজে পরিনত হত এবং প্রশাসনিক কার্য্য ক্রমকেই তারা মুখ্যা কর্ম বলে বিবেচনা করতেন। ফলতঃ বিচারপ্রার্থী জনগনকে বাড়তি খরছ ও হয়রানীর সম্মুখীন হতে হত।
মজাদার হোসেন মামলার রায় এর প্রেক্ষিতে ও ফলশ্রতিতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসী ব্যবস্থা প্রবর্তন হয়। অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের মর্য্যাদা সম্পন্ন একজন চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং তাঁর অধীনে একাধিক প্রথম শ্রেনীর ক্ষমতা সম্পন্ন বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে প্রায় একদশক পূর্বে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথা চালু হলে এখনও নানাবিধ সংকটের সম্মুখীন। স্বতন্ত্র আদালত ভবন না থাকার কারনে কালেক্টারেট ভবন সমূহে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এই নিয়ে জেলা প্রশাসক জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে একটি মনস্তাত্বিক বৈরীতা শুরু থেকেই শুরু হয়। কোথাও কোথাও বাঁধা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীকে। নতুন ভবন নির্মানের ক্ষেত্রেও শুরু হয় দীর্ঘ সুত্রিতা ও কালক্ষেপন। ভবন নির্মানের মালিক রক্ষনাবেক্ষক গনপূর্ত বিভাগ। সাইট সিলেকশন এর মালিক জেলা প্রশাসক সাহেব। তিনি ভূমি দেখা কমিটির রুনাভেনার ও বৃটেন। প্রশাসনিক সমন্ময় হীনতার কারনে ভবন নির্মান ঝুলে আছে। ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসকগণ তাঁদের কগনিজান্স পাওয়ার ফিরে পাবার জন্য সরকারের উর্ধ্বতন মহলে দাবীদাওয়া পেশ করেছিলেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেসী বর্তমানে কাঃ বিঃ আইনের ১৪৪, ১০৭, ১৩৩, ৯৮, ১০০, ধারা জাতীয় হালকা মামলা মোকদ্দমার বিচারকার্য্য এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। মোবাইল কোর্টে কতেক বিধি বিধান থাকার কারনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেসী ও সন্তুষ্ট নহেন। ফলতঃ একটি কুচক্রীমহল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীকে বিতর্কিত এবং জনপ্রিয়তা হ্রাসের হীন পরিকল্পনায় লিপ্ত আছেন।
বিচার বিভাগ সংবিধান মোতাবেক স্বতন্ত্র ও স্বাধীন হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও স্বতন্ত্র স্বাধীন সচিবালয় না থাকা এবং আমলাতান্ত্রীক অসহযোগিতার কারনে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সাতারুকে হাত পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিলে তার পক্ষে সাতার কাটাত দুরের কথা প্রান রক্ষাই কঠিন হয়ে পড়ে। বর্তমানে ক্ষেত্র বিশেষে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন বিচার বিভাগ বর্তমানে হাত পা বাঁধা সাতারুর মত।
এই প্রেক্ষিতে আইনের শাসনও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করনের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের গতি মর্য্যাদা ও ভাবমুর্তি রক্ষার জন্য মাননীয় প্রধান বিচারপতির অভিমত ও উক্তি প্রাসঙ্গিক। জরুরী। দেশের আইনজীবী সমাজ এবং অসহায় বিচারপ্রার্থী জনগনের মনের কথাই বলেছেন তিনি।
প্রেস ও মিডিয়াকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। মান্যবর প্রধান বিচারপতি মিঃ এস কে সিনহার প্রতি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অকুন্ঠ ও শর্তহীন সমর্থন ইতিপূর্বেই ঘোষিত হয়েছে।
একজন মুক্তিযোদ্ধা, নাগরিক ও পেশাদার আইনজীবী হিসাবে তার এই অভিমতের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন সহ তাঁর সুস্ব্যাস্থ, দীর্ঘায়ু ও সার্বিক কল্যান কামনা করি।—- (সিনিওর এডভোকেট, হাইকোর্ট। মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাব।)

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com