মাঘের হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে মৌলভীবাজার,তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
এহসান বিন মুজাহির : মাঘের হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে মৌলভীবাজার। প্রবাদে রয়েছে ‘মাঘের শীতে বাঘে পালায়’। এটার বাস্তব উদাহরণ যেনো জেলাজুড়ে। হিমেল বাতাসের কারণে শীত যেন শরীরে আরও ‘কামড়’ বসাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস জানায়, মঙ্গলবার ২৩ জানুয়ারি সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। মাঘের এই ঠান্ডায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন রেলওয়ে স্টেশন এবং ফুটপাতে থাকা মানুষেরা। এছাড়া তীব্র শীতের প্রকোপে ভোগান্তিতে পড়েন শ্রমজীবি মানুষেরাও। বিশেষ করে উপজেলার স্বল্প আয়ের মানুষ ও ছিন্নমূলদের অবস্থা বেশ শোচনীয়। সকালে প্রচণ্ড শীতের মধ্যে কাজে যেতে দেখা গেছে তাদের। শ্রীমঙ্গল সিন্দুরখান রোডের ভ্যানচালক সায়মন মিয়া বলেন, সংসারের চাকা ঘুরাতে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে নিয়ে বের হয়েছি। শীতে শরীর কাপছে তবু ঠেলা ঠেলতে হবে আমাকে। শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার রিকশাচালক মনির মিয়া বলেন, রাতে শীতে ঘুমাতেও পারিনি। এখন সকাল সকাল উঠে কাজে বের না হলে পেটেও কিছু পড়বে না। বাধ্য হয়েই কাজে বের হইছি। এখনই হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। ভ্যান গাড়িতে শীতের কাপড় বিক্রি করেন হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, কনকনে শীতে আমি ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। ভ্যান না বের করলে খাবো কী, পেটের টানে বাধ্য হয়ে বসেছি। শীত বাড়লে বিক্রি বাড়ে, তাই এই শীতেও আমি ভ্যান নিয়ে ঘুরছি বসছি। তবে সারা দিন ঘোরা যাবে কিনা, বুঝতেছি না। এছাড়া চরম বিপাকে পড়েছেন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। তীব্র শীতের মধ্যে স্কুল ড্রেসের সাথে অতিরিক্ত শীতের কাপড় পড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক কম বলে জানান প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। শ্রীমঙ্গলের বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক তাজুল হাসান বলেন, সকালে প্রচণ্ড শীতে অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছি। এতো ঠাণ্ডায় স্কুল বন্ধ দেয়াটাই ভালো। পৌরসভা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র শাওন আহমদ জানায়, স্কুলে খোলা, তাই ঠাণ্ডার মাঝেও স্কুলে এসেছে।
চন্দ্রনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক অর্পিতা দেবনাথ বলেন, সকালে প্রচণ্ড শীত থাকে। এ অবস্থায় স্কুলে যেতে খুব কষ্ট হয়। এ ছাড়া ঠাণ্ডা লেগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। স্কুল বন্ধ দিলেই ভালো হয়। বিদ্যালয় বন্ধ রাখার বিষয়ে কথা হলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দিলীপ বর্ধন বলেন, শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করে জেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা অফিসে কথা বলছি, এখন এ ক্ষমতা হচ্ছে উপ-পরিচালক স্যারের। সঙ্গে সঙ্গে জেলা স্যার বলছে কথা বলে আমাকে জানাবে। আদেশ দিলেই আমরা আদেশ জারি করবো। তবে গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তীব্র শীতের কারণে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস শুরুর সময় পেছানো হয়েছে। তাই শ্রীমঙ্গল উপজেলায়ও আজ থেকে সকাল দশটায় ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানান উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, উপজেলায় প্রতি শীত মৌসুমেই শীত জনিত রুগির সংখ্যা বেশি। এবারও শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও সাইনোসাইটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগী বেশি। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হয়। প্রয়োজনে নিতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বিবলু চন্দ্র দাশ জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থেকে ১১ ডিগ্রির ভেতরে ওঠানামা করছে। ২৩ জানুয়ারি সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আনিস জানান, আজ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এবারের শীত মৌসুমে শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এটি। এর আগে ১৬ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে তাপমাত্রা ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৭ জানুয়ারি ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৮ জানুয়ারি ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯ জানুয়ারি ১০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০ জানুয়ারি ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ জানুয়ারি ১১.৩ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গতকাল ২২ জানুয়ারি ১১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
মন্তব্য করুন