মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন নৌকার প্রার্থী আব্দুস শহীদ, বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট এবং ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীর শম্বুক গতি
এহসান বিন মুজাহির: চা বাগান অধ্যুষিত শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন মৌলভীবাজার-৪। ১৯৮৪ সালে মৌলভীবাজার জেলা হিসেবে ঘোষণার পর থেকে এ আসনটিতে কখনোই নৌকা প্রতীক পরাজিত হয়নি। এমনকি নৌকা প্রতীকের সাথে অন্য প্রতীকের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে ওঠেনি কোন নির্বাচনে। ফলে চা বাগান অধ্যুষিত এ আসনটি নৌকার নিশ্চিত আসন হিসেবেই পরিগণিত।
এ আসনের পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায় জেলা ঘোষণার পর মৌলভীবাজার-৪ আসনে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াছ দ্বিতীয় বারের মতো এবং ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস শহীদ একটানা ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মাঝে জাতীয় পার্টির শাসনামলে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ ও বিএনপি’র শাসনামলে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয়নি। ফলে এ দুটি নির্বাচনে যথাক্রমে জাতীয় পার্টির মো. আহাদ মিয়া ও বিএনপি’র মো: শফিকুর রহমান নির্বাচিত হয়ে স্বল্প সময়ের জন্য সংসদ সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে এ আসনে সপ্তমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন একটানা ছয় বারের সংসদ সদস্য, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ মো. আব্দুস শহীদ। তাঁর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইসলামি ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসাইন (মিনার) এবং বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মুহিত হাসানী (মোমবাতি)। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুস শহীদের পক্ষে দুই উপজেলার সর্বত্র গণজোয়ার চলছে। প্রতিদিনই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, সমর্থক ও কর্মীরা। অপরদিকে নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলেও অনেকটা শম্বুক গতি অপর দুই প্রার্থীর।
সরজমিন নির্বাচনী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তাদের তেমন একটা প্রচার-প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।এমনকি পোস্টার, লিফলেটও চোখে পড়ছে না।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফণি ভূষণ চক্রবর্তী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আমলে দেশে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়। আমাদের এলাকায়ও গত ১৫ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের এই এলাকার ভোটাররা স্বতর্স্ফুতভাবে পরপর ছয়বার উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপিকে নির্বাচিত করেছি। যার সুফল ভোগ করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। এখনকার মানুষ সব সময় নির্বাচনমুখী। আমরা আশা করি এবারের নির্বাচনে আমরা সর্বোচ্চ ভোট দিয়ে উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি মহোদয়কে নির্বাচিত করতে পারবো।
কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছলাম ইকবাল মিলন বলেন, ‘এবারে নির্বাচনে আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধানে উপহার দিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ ইসলামি ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মুহিত হাসানীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে। এলাকা অনেক বড়। আমরা মাঠে কাজ করছি। এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আশাবাদী আমাদের ভালো একটা রেজাল্ট হবে।
ইসলামি ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমার মাইকিং, পোস্টারিং গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। কালকে আমার দুটি জিপ ও একটি সিএনজি দিয়ে মাইকিং শহরে ও গ্রামে করা হয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে কর্মপন্থা নিয়ে এগোচ্ছি। প্রত্যাশা করছি আমাদের ফলাফল ভালো হবে ইনশাল্লাহ।
সপ্তমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস শহীদ এমপি বলেন, ‘দেশের মানুষ শান্তি, উন্নয়ন, অগ্রগতি চায়, ধ্বংসযজ্ঞ চায় না। যারা ট্রেনে আগুন দিচ্ছে, বাসে আগুন দিচ্ছে, মানুষ মারছে, ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করছে এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
৭ জানুয়ারি ভোটাররাা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আগামী নির্বাচনে বরাবরের মতো বিপুল ভোটের ব্যবধানে নৌকা প্রতীকের জয় হবে ইনশাল্লাহ। আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ আসনে ১৬০টি ভোটকেন্দ্রে ৫০৩টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন মোট ৪ লক্ষ ৫৯ হাজার ১০১ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৩০৮ ও মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ২৭ হাজার ৭৯২ ও হিজরা ভোটার ১ জন।
মন্তব্য করুন