মাথা ন্যাড়া করলেই কি করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যাবে?
আশরাফ আলী॥ করোনাভাইরাসের কারণে ঘর বন্দী হয়ে পড়েছেন দেশের মানুষ। চলছে লকডাউন। লকডাউনে অনেকে অনেকভাবে সময় পার করছেন। তবে ব্যতিক্রম দেশের তরুণরা। লকডাউনে তাদের মাথা ন্যাড়া করার উৎসব চলছে। হঠাৎ করে তরুণরা কেন মাথা ন্যাড়া করছে? তবে তরুণরা বলছেন ন্যাড়া মাথায় ঠাণ্ডা লাগে। আরাম অনুভূত হয়।
যেহেতু সেলুন বন্ধ রয়েছে, মাথার চুল কাটা যাচ্ছেনা। সেলুনে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব না। আর লকডাউনে ঘরে থাকতে হচ্ছে তাই অনেক তরুণ মাথা ন্যাড়া করছে। অনেকে মাথা ন্যাড়া করা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বলছে হোম কোয়ারেন্টাইন। আবার দেশে গুজবও উড়েছে মাথা ন্যাড়া করলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
করোনাভাইরাসের সাথে মাথা ন্যাড়া করার গুজবের বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথা ন্যাড়া করার সাথে ভাইরাসে সুস্থ থাকা, অসুস্থ হওয়ার সাথে বৈজ্ঞানিক কোন সম্পর্ক নেই। তারা বলছেন, বর্তমানে দেশে লকডাউন চলছে। করোনাভাইরাসের জন্য ঘরে বসে থাকতে হয় এজন্য অনেক তরুণ মাথা ন্যাড়া করছে। কারো কারো মাথায় চুল কম, কারো মাথায় খুশকি বা কেউ চিন্তা করছে মাথার চুল ফেলে দিলে লজ্জায় ঘর থেকে বের হবে না। অনেকে আবার এরকম ছবি ফেসবুকে দিচ্ছে। ঘরে বসে থাকতে হয় এজন্য অনেক তরুণ মাথা ন্যাড়া করছে। মাথা ন্যাড়া করার সাথে করোনাভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই।
চুলের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ থাকে। আবার চুলে ময়লাও থাকে। এজন্য পিপিই ব্যবহার করা হয়। যারা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত থাকে বা তাদের সংস্পর্শে আসে তাদেরকে বলা হচ্ছে বাসায় গেলে সাথে সাথেই গোসল করতে। যাতে চুল থেকে করোনার সংক্রমণ এড়ানো যায়। অনেকে এই চিন্তা থেকে চুল কাঠতে পারে। তবে চুল না থাকলে যে ভাইরাসে আক্রান্ত হবেনা এটার ভিত্তি নেই।
মাথা ন্যাড়া করা, মাথার চুল লম্বা করা, খাটো করা, মাথা টাক থাকা, চুলে ডিজাইন ধরানো, কলপ দেয়া এসবের উপকার বা সমস্যা কি? এব্যাপারে বিশেজ্ঞরা কি বলেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাথায় চুল থাকা দরকার। প্রয়োজন না হলে সবার মাথায় চুল থাকত না। রেগুলার চুল না থাকলে সমস্যা। চুল কাটলে মাথা ঠাণ্ডা থাকবে এটার কোন ভিত্তি নেই। তবে মাথায় ক্যামিক্যাল ব্যবহার না করাই ভালো। কোন কারণ ছাড়াই মাথার চুল না কাটা ভালো। চুলের প্রয়োজন আছে বলে আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। চুল থাকলে কি হবে? চুল না থাকলে কি হবে? এটার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এটা নিয়ে কোন গবেষণা হয়নি। অনেকের মাথাতো টাক আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব প্রাণী বরফের মধ্যে থাকে তাদের শরীরে লোম বেশী থাকে। যেখানের আবহাওয়া উষ্ণ সেখানকার প্রাণীর লোম কম থাকে। মাথার চুল লম্বা বা খাটো রাখা এটা কোন সমস্যা না। এটা আমাদের ঐতিহ্য।
শ্যাম্পুর ব্যবহার নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। চুলের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে। এটি সপ্তাহে একদিন বা দু’দিন। তবে শ্যাম্পু ভালো মানের হতে হবে। ভেজাল শ্যাম্পু হলে সমস্যায় পড়তে হবে। ভালো দোকান দেখে শ্যাম্পু কিনতে হবে। মান বজায় রেখে চলা শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। দেশের আবহাওয়া ভালো না থাকার কারণে ধূলাবালি মাথায় জমে। এতে করে মাথায় খুশকি হতে পারে।
তেলের ব্যবহার নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেলের ব্যবহার করতেই হবে এটার কোন ভিত্তি নেই। আমাদের এই সাবকন্টিনেন্টে এটা ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে তেলের ব্যবহার নেই। বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে তেলের ব্যবহার। এটা আমাদের ঐতিহ্যের মধ্যে চলে আসছে। মাথা ঠাণ্ডা বা গরমে তেলের কোন সম্পর্ক নেই। তেলের ব্যবহার করলে মাথা ঠাণ্ডা থাকে এটা একটা বিশ্বাসের মধ্যে চলে আসছে।
যাদের ন্যাচারাল চুল আছে সেটাই তার জন্য উপযুক্ত। অনেকের অনেক ধরণের চুল আছে এটা হয় আবহাওয়ার কারণে। তবে যারা চুলে বিভিন্ন ডিজাইন ধরায় সেটা তার জন্য ক্ষতিকর না। তবে যে ক্যামিকেল ব্যবহার করে সেটা মানসম্মত হতে হবে। যদি মানসম্মত না হয় তাহলে মাথায় ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
অনেকেই আবার কলপ ব্যবহার করে। এটা আগে দেখতে হবে এটি মানসম্মত কিনা? দেখা যায় অনেকে কলপ ব্যবহার করলে মাথায় এলার্জি সমস্যা হয়। তাই এটা আগেই বিবেচনা করতে হবে এটি ব্যবহার করলে তার সমস্যা হবে কিনা?
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. পলাশ রায়ের মতে, চুলের যত্ন নেওয়া উচিত। চুলের যত্ন না নিলে মাথায় খুশকি, এলার্জি, স্কিনে সমস্যা বা চুল পড়া হতে পারে। চুল বড় করলে মাথা ব্যথা হবে বা চুল খাটো করলে মাথা ব্যথা হবেনা এটা ফ্যাক্টর না। মহিলারাতো অনেক লম্বা চুল রাখে তাদের কোন সমস্যা হয়না।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
মন্তব্য করুন