মাদক” যুব সমাজ ধ্বংসের কারন এবং তা থেকে পরিত্রাণ 

September 5, 2020,

মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী ॥ “মাদক” এমন একটি শব্দ যার ব্যাখ্যা করা বৃহৎ সময় সাপেক্ষ। যে সকল দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার নেতিবাচক অবনতি ঘটায় এবং এই দ্রব্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পর্যায়ক্রমে তা বৃদ্ধি পায় তাকেই মাদক দ্রব্য বলে।

আর যে ব্যক্তি এর উপর আসক্ত হয়ে পরে থাকে মাদকসেবী বলা হয়। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের সিংহভাগই সর্বনাশা মাদকের কবলের শিকার। যার প্রভাব শুধু মাদকসেবী নয় সমাজ ও রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা ব্যহত এবং বিভিন্ন অপরাধ সৃষ্টির প্রধান কারন।

বিভিন্ন তথ্য সূত্রে জানা যায়,  এই মরণ নেশা মাদকের কবলে কেবল তরুণরা নয় তরুণীরাদেরও মাদকাসক্তি গ্রাস করে ফেলেছে। যার ফলে বর্তমান সময়ে যুবকের মাদকাসক্তির কারণে সমাজে বিভিন্ন অপরাধ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, নির্যাতন, পারিবারিক অশান্তি ও খুন খারাপিও ঘটে চলেছে।

যা পারিবারিক, সামাজিক ও আইন শৃঙ্খলা অবনতির প্রধান কারণ উল্লেখ করাটাই স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য গুলো ৪ ভাবে সেবন উপযোগী মাদকদ্রব্য সহজলভ্যে পাওয়া যাচ্ছে।

যে সকল মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়

১। ধূমপানজাতীয় মাদক দ্রব্য -তামাক ও গাজা।

২।তরলজাতীয় মাদকদ্রব্য – ফেনসিডিল ও মদ।

৩। ইনজেকশন জাতীয় মাদকদ্রব্য : পেথিডিন, হোরোইন, কোকেন ইত্যাদি।

৪। ট্যাবলেটজাতীয় মাদকদ্রব্য : ইয়াবা, বিভিন্ন প্রকার ঘুমের ট্যাবলেট।

সহজলভ্যতায় প্রাপ্য মাদকদ্রব্য পাওয়া কম দামি তামাক বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

এই সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশের ৫৮ শতাংশ পুরুষ এবং ২৯ শতাংশ নারী তামাক দ্রব্য  সেবনে সম্পৃক্ত ।

এই সহজলভ্যতায় মাদক পাওয়া ও সেবনের ফলে  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ৩০ শতাংশ, ক্যান্সারজনিত মৃত্যু ৩৮ শতাংশ, ফুসফুসে যক্ষ্মার কারণে মৃত্যুর হার ৩৫ শতাংশ এবং আন্যান্য শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে মৃত্যুর ২৪ শতাংশের জন্য মাদকদ্রব্য দায়ী।

বর্তমান সময়ে ধনী পরিবারের সন্তানদের মধ্যে অত্যন্ত দামি মাদক ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবহার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।

বিভিন্নভাবে জানা যায়, ২০০৬ সালের দিকে ঢাকা তথা বাংলাদেশে ইয়াবা বিস্তারলাভ করে।

ইয়াবা সেবনকারীদের মধ্যে অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছৃঙ্খলতা ও উন্মাদনা। দীর্ঘদিন এর ব্যবহারের ফলে ঠোঁট, জিহ্বা ও গলায় ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে তা জানা সত্বেও সেবনকারীরা সেবন করে চলেছে।

মাদকের ভারে কতটা পিছিয়ে পড়ছে  বাংলাদেশ তা গত ১৫ নভেম্বর ২০১৭ তারিখ জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত পরিসংখ্যান থেকে ধারণা করা যায় ।  তিনি বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যানে জানা যায়,  ৩ কোটি ৩৫ লাখ ১১ হাজার ৩৩৪ পিস ইয়াবা, ২৫৯ কেজি ৭৬৫ গ্রাম হেরোইন, ৫ লাখ ২৪ হাজার ১৩৭ বোতল ফেনসিডিল এবং ৫২ হাজার ৯০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

এ থেকেই ধারণা করা যায় যে, দেশে মাদক, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী পরিমাণ কত রয়েছে।

এই মরণ নেশা মাদকদ্রব্য ব্যবহারে ক্ষতি সমূহ ঃঃ

মাদক শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেয়। ক্রমশ তাদের অস্বাভাবিক আচরণ ও বিশৃঙ্খলা তৈরী। এদের ক্ষিধে থাকা সত্বেও খেতে পারে না, ঘুম হয় না। হাসি-কান্নার কোন বোধ থাকে না। ধীরে ধীরে শরীরের ওজন হ্রাস পায় । মাদকসেবী পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে। নিজের পরিবার ও নিজের আর্থিক ক্ষতি হয়। সমাজে অপরাধ সৃষ্টিসহ নানা অপকর্মের সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু মাদকদ্রব্য ও মাদকসেবী এইচআইভি ও হেপাটাইটিস-‘বি’র সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ক্যান্সার, কিডনি ড্যামেজ, রক্তচাপসহ নানা অনিরাময়যোগ্য রোগের সৃষ্টি করে।

মাদকদ্রব্যের উপর আসক্তির উল্লেখ যোগ্য কারন সমূহ :

১। পারিবারিক অশান্তি ও কলহ

২। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও বেকারত্বজনিত হতাশা।

৩। মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবের সংসর্গ ও প্ররোচনা।

৪। প্রেম ভালবাসায় ব্যঘাত।

৫। মাদক ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রলোভনের শিকার ।

৬। কৌতূহল বসত ও সৌখিনতা ইত্যাদি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকার :

১। মাদকদব্যের উৎপাদন আইন দ্বারা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

২। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।

৩। মাদকদ্রব্য পাচার ও চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির আইন প্রনয়ন ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

৪। বেকারত্ব দূরীকরণে বাস্তবায়নে দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা।

৫। পরিবারের সকল সদস্যের মাদকাসক্ত ব্যক্তির সাথে সুন্দর ও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তোলা।

৬। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম চালু করা ও তা অব্যাহত রাখা ।

৭। সমাজের সচেতন নাগরিকদের সমন্ন্যয়ে ঘটিত সংগঠন গুলোর ব্যাপক প্রচারণা এবং এর কুফল যথাযথভাবে মাদকসেবীদের কাছে তুলে ধরা।

৮। মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা বন্ধে কঠোর আইন প্রনয়ণ করা।

৯। মাদকসেবন ও ব্যবসায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।

১০। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন।

১১। দেশে মাদক প্রবেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা।

১২। সরকারি ভাবে মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে  ব্যবস্থা করা।

১৩। মাদক ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন প্রণয়ন করা।

১৪। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সংগঠনের মাধ্যমে সচেতনা বৃদ্ধি করা।

১৫। মাদকাসক্তদের চিন্হিত করে তাদের মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা।

১৬। মাদককে সকল ধর্ম নিষিদ্ধ করেছে তা তুলে ধরা।

১৭। মসজিদ, মন্দির, গীর্জায় সহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করা।

পরিশেষে বলা যায়, মাদকসেবন ও মাদক ব্যবসা বন্ধে ব্যক্তি, পরিবার, সচেতন নাগরিক, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ছাড়া কোন ভাবে মাদক সেবন ও সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয়।

লেখক : মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী। কো-অর্ডিনেটর -সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটি।

সংবাদটি শেয়ার করতে নিচের “আপনার প্রিয় শেয়ার বাটনটিতে ক্লিক করুন”

মন্তব্য করুন

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com