“মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমদ দেখতে গেলেন বি.এন.পি. নেতা দিলদার হোসেন কে, কি চমৎকার দেখা গেল
মুজিবুর রহমান মুজিব॥ সর্বকালের সেরা বিশ্ববিখ্যাত দার্শনিক ভল্টেয়ার গণতন্ত্র, মতবাদ ও মত ভেদ প্রসঙ্গেঁ সেই কবে বলেছিলেন- “আপনার মতের সঙ্গেঁ আমি একমত না হতে পারি, কিন্তু আপনার মত প্রকাশ-প্রচারে আমার জান দিতে পারি”। গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের উন্নত আধুনিক বিশ্বে, রাষ্ট্রও সমাজ চিন্তক দার্শনিক ভল্টেয়ার এর অমোঘ বানী এখনও প্রবাদ বচন-অমৃত সমান। এই একবিংশ শতাব্দীতে রাষ্ট্র পরিচালনা ও উন্নত সমাজ বিনির্মানে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। ডেমক্রেসি ফরদি পিপুল অফদি পিপুল বাইদি পিপুল-এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত-গৃহিত। গণতান্ত্রীক সরকার ব্যস্থার মধ্যে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার অধিকতর জবাব দিহিতা মূলক। আধুনিক ভারত, বৃটেন, জাপান, কানাডায় সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু আছে। বাংলাদেশেও সংবিধান মোতাবেক সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু আছে। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে বহুদলীয় ব্যবস্থা থাকে। সংসদে বিরোধী দল সরকারের ভুল ত্রুুটি ধরিয়ে দেন-বিকল্প সরকারের মত জনস্বার্থে দায়িত্ব পালন করেন। সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে সংসদীয় কমিটি সমূহ ক্ষমতাশীল। পর মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন-পরমত সহিষ্ণুতা সংসদীয় সংস্কৃতির অংশ।
দূঃখ ও দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নীতি কথা ও নৈতিকতা বোধ এর ক্রমবনতির কারনে সাম্প্রতিক কালে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গঁনে সহিষ্ণুতা শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ হ্রাস পাচ্ছে অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পীরানে পীর-ইয়েমেনী বীর হযরত শাহ জালাল এর স্মৃতি ধন্য পূন্যভূমি সিলেট সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সাম্প্রদায়ীক সম্প্রিতির শহর। ইতিপূর্বে সিলেট জেলা সদর এই শহরের জনপ্রতিনিধিত্ব করেছেন-নেতৃত্ব দিয়েছেন-বি.এন.পি.র প্রতিষ্ঠা কালীন প্রভাবশালী নেতা মরহুম অর্থেও পারিকল্পনামন্ত্রী এম.সাইফুর রহমান। সিলেট বিভাগের সার্বিক ও ব্যাপক উন্নয়ন, উন্নয়নের ইতিহাসে ঐতিহাসিক অধ্যায়। তাঁর অভিবাভকত্ব ও পিতৃ সূলভ স্নেহ মমতা সর্বজন স্বীকৃত-প্রশংসিত। অতঃপর বিগত একযুগ যাবত জনপ্রতিনিধিত্ব ও মন্ত্রীত্বের গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবুল মাল আব্দুল মোহিত। তার সদাচরন চমৎকার মিষ্টি হাসি ও শিশু সূলভ সারল্য সর্বত্র প্রশংসিত। সিলেট সদরের সাংসদ এবং মাননীয় মন্ত্রী হিসাবে তিনি তাঁর ভিন্ন মতাদর্শি বি.এন.পি-র বলিষ্ট নেতা-কর্ম চঞ্চলও কর্ম তৎপর সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সাথে এক রিকসায় চড়ে সরেজমিনে উন্নয়ন কর্মকান্ড তদারকি-দেখভাল করেছেন। এমন ব্যতিক্রমী চিত্র জাতীয় দৈনিক সমূহে প্রকাশিত হলে সর্বত্র প্রশংসিত- আমি আবেগ আপ্পুত- আনন্দিত হয়ে মনের সুখে কলাম শিখলাম আমার প্রিয় শিরোনাম-কি চমৎকার দেখা গেল-কলামে তারই ধারাবাহিকতায় তাঁরই অনুজ বর্তমান সাংসদ ও মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড.আবুল মোমেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে সঙ্গেঁ নিয়ে গভীর রাতে প্রয়োজনীয় প্রটোকল ব্যতিতই শহরের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিদর্শনে বের হন। পূনঃ আবেগ আপ্লুত হয়ে আমার প্রিয় কলাম লিখেছিলাম কি চমৎকার দেখা গেল।
সাম্প্রতিক সামাজিক অস্থিরতা অশান্তি ও সংকট কালে জাতীয় দৈনিক মানব জমিনে একটি সচিত্র সংবাদ দৃষ্টে ও পাঠে পূনঃ আনন্দিত আবেগ আপ্লুত হলাম। আমাদের সামাজিক সংকটের মাঝে বৎসরাধিক কাল যাবত যুক্ত হয়েছে ভয়াবহ বৈশ্বিক ব্যাধি কোভিড নাইনটিন। ছোয়াছেও ঘাতক ব্যাধি করনা প্রতিরোধ মূলক ভাবে সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার ও হাত ধোয়া স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাই প্রথম ও প্রধান শর্তাবলি। ফলত: বয়ো: বৃদ্ধগণ সেলফ কোয়ারেন্টাইনে হ্যেন্ডশেক-কোলাকোলি-মিলামিশা-পরিহার-সিমিত-সীমাবদ্ধ।
বিদ্যমান বৈশ্বিক ব্যাধি করনা আক্রান্তি ও করনা ভিতির মাঝে ও মাননীয় প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী, সিলেটের প্রবীন রাজনীতিবিদ ইমরান আহমদ, তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বি.এন.পি-র কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেনকে দেখতে তাঁল লামাবাজারস্থ বাসগৃহে গমন করেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার খুঁজ খবর নেন। এ সময় মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গেঁ গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুল হক এবং দলীয় নেতা কর্মি ছিলেন। প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্ম সংস্থান মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, সিলেট চার আসনের ছয় বারের সাংসদ জননেতা ইমরান আহমদ বি.এন.পি-র কেন্দ্রীয় সহ-সাংঘটনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ দিলদার হোসেন সেলিমের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও ব্যক্তিগত ভাবে উভয়ের মধ্যে চমৎকার সু-সম্পর্ক বিদ্যমান। সিলেটে প্রগতিশীল গণতান্ত্রীক রাজনীতি ও আন্দোলনের লড়াকু সৈনিক দিলদার হোসেন সেলিম ও একজন শক্তিমান সংঘটক-সুবক্তা-স্বজ্জন এবং সুদর্শন ও সদালাপি ব্যক্তিত্ব। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উনিশ দফা কর্ম সূচীর প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করে দিলদার হোসেন সেলিম বি.এন.পি-র স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য বৃহত্তর সিলেটের অবিসংবাদিত নেতা এম.সাইফুর রহমান এর আহ্বান ও আমন্ত্রনে বি.এন.পি-তে যোগ দান করেন। জন প্রতিনিধি হিসাবে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্য হিসাবে প্রতিভার ছাপ রাখেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন তিনি জাতীয় সংসদে সিলেট চার আসনে আওয়ামী লীগের হেভীওয়েট প্রার্থী জননেতা ইমরান আহমদকে পরাজিত করে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দু’জন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক কোনদিন নষ্ট হয় নি। বি.এন.পি-র কেন্দ্রীয় সহ-সাংঘটনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে তাঁর রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করছিলেন। সাম্প্রতিক অসুস্থতার কারনে সিলেটের রাজনীতির এই প্রিয় ও পরিচিত মুখ অনুপস্থিত। ইমরান আহমদ সিলেট সফরে এসে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী ব্যতিতই অসুস্থ বি.এন.পি-নেতা দিলদার হোসেন সেলিমকে দেখতে তাঁর বাসায় ছুটে যান। জাতীয় দৈনিক মানব জমিনের গত ২৫শে জানুয়ারী সোমবারের সংখ্যায় শেষ পৃষ্ঠায় গুরুত্ব সহকারে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। সিলেটের বিশিষ্ট সাংবাদিক ওয়েছ খসরু তাঁর তথ্যবহুল প্রতিবেদনে বলেন- একসময় দু’জন ছিলেন একই ঘরানার। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাজনীতি করেছেন। সম্পর্ক ও ছিল ভালো। সুখে দূঃখে একে অপরের পাশে ছিলেন। পরে আলাদা হয়ে গেলেন তারা দু’জন রাজনীতির মাঠে হয়ে পড়লেন মুখোমুখি। দুই যুগ ধরে তারা একে অপরের প্রতিপক্ষ। কিন্তু সম্পর্কের হেরফের হয় নি একটুও। এ কারনেই বিপরীত শিবিরের নেতা হওয়া সত্বেও গুরুতর অসুস্থ একজনকে দেখতে মন্ত্রী হয়েও আরেকজন চলে গেলেন বাসায়”। সিলেট সেলিমের বাসায় মন্ত্রী ইমরান মানব জামিনের এই শিরোনামে বিশিষ্ট সাংবাদিক ওয়েস খসরু সংবাদ প্রতিবেদনের শুরুতে মাত্র ক’লাইনেই মূল্যবান কথা গুলি লিখেছেন। রাজনৈতিক সংকট ও শূন্যতার মাঝে মানুষে মানুষে ভালোবাসা শুভেচ্ছা ও সহমর্মিতার আশা জাগানিয়া বানী শুনিয়েছেন। মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমদ অসুস্থ দিলদার হোসেন সেলিমের সুস্থতা, সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ূ ও কল্যান কামনা করেন। আবেগ তাড়িত এবং চমকিত দিলদার হোসেন সেলিম মন্ত্রী ইমরান আহমদকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ সময় সেলিমের সহধর্মিনী এডভোকেট জেবুন্নাহার সেলিম ও উপস্থিত ছিলেন।
দূর্নীতিবাজদের দৌরাত্ব, বেহায়া, বে-আদব, ধর্ষকবেদ তমিজদের বাড়াবাড়ি, দৃষ্টে পত্র পত্রিকা পাঠ ও টিভি দেখে মনটা খারাপ ছিল। করনায় দেশে-বিদেশে কতেক আপনজনের আকস্মিক ও অকাল মৃত্যোতে বেদনা হত আছি। এমন কঠিন সময় এমন আশা জাগানিয়া সংবাদ পাঠ ও আলোক চিত্র দৃশ্যে আশাবাদি-আশ্বস্থ হলাম। এখনও মানুষ মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। ভ্রাতৃ প্রতীম অসুস্থ দিলদার হোসেন সেলিম এর সুস্থতা ও কল্যান কামনা করছি। এমন মানবিক কার্য্যক্রম, মহানুভবতা ও মানবিকতা প্রদর্শনের জন্য মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমদকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি, কল্যান কামনা করছি। মৌলভীবাজার জেলা বারের সহ সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট আইনজীবী আমার প্রিয় কনিষ্ট কলিগ এডভোকেট দিপক কুমার ধর এবং তাঁর কৃতি কন্যা অহনা ধর এর দাবী-কি চমৎকার দেখা গেল-কলামে চমৎকার লেখা লিখতে হবে। কিন্তু আমি নিজে আজকাল খুব একটা চমৎকার সংবাদ পাই না, দৃশ্য ও ছবি দেখি না। দৈনিক মানব জমিনে রাজনীতি গত ভাবে চীর প্রতিদ্বন্ধী দুই রাজনীতিবিদ এর এমন আবেগ ময় ছবি দেখে মাননীয় মন্ত্রীর মহানুভবতায় আবেগ আপ্লুত-আনন্দিত হলাম। চমৎকৃত হলাম। খুশ্যানন্দে বল্লাম কি চমৎকার দেখা গেল।
[ষাটের দশকের সাংবাদিক। মুক্তিযোদ্ধা। সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ও মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।]
মন্তব্য করুন